Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মিতু খুনের পর বাবুলের নির্দেশে তিন লাখ টাকা পাঠানো হয়’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৮ আগস্ট ২০২৩ ১৮:৩৪

চট্টগ্রাম ব্যুরো: মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের বন্ধু ও ব্যবসায়িক অংশীদার সাইফুল হক আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষ্যে তিনি জানিয়েছেন, মিতু খুনের পর বাবুল আক্তারের নির্দেশে সাইফুল তার কর্মচারীকে দিয়ে একটি বিকাশ নম্বরে তিন লাখ টাকা পাঠিয়েছিলেন।

মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে সাইফুল সাক্ষ্য দেন।

আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে সাইফুল বলেন, ‘আমি আগে প্রিন্টিংয়ের ব্যবসা করতাম। প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল মান্টিব্যাক প্রিন্ট এন্ড হক লিমিটেড। ওই ব্যবসায়ের অবস্থান ছিল মোহাম্মদপুরের বছিলায়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলাম শিক্ষা বিভাগে পড়ার সময় বাবুল আক্তারের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে।’

‘লেখাপড়া শেষে ঢাকায় চাকরি করার সময়ে তার সঙ্গে সম্পর্ক অব্যহত থাকে। পরবর্তীতে আমি চাকরি ছেড়ে প্রিন্টিং ব্যবসা শুরু করি। ব্যবসার এক পর্যায়ে আমার আর্থিক সংকট দেখা দিলে আমি বাবুল আক্তারকে আমার ব্যবসায়ে বিনিয়োগের প্রস্তাব দেই। উনি আমার ব্যবসায়ে ২০০৯ সালে মাহমুদা আক্তার ভাবীর নামে পাঁচ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন।’

মিতু হত্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সাইফুল বলেন, ‘২০১৬ সালের ৬ জুন, মিতু ভাবি খুনের পরদিন, সেদিন আমার মোবাইলে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে কল আসে। ফোন থেকে আমাকে বলা হয় আপনি কি টাকা পাঠিয়েছেন? কিসের টাকা জিজ্ঞেস করলে বলে এসপি বাবুল আক্তার টাকার কথা বলেনি। তখন কলের লাইন কেটে যায়।’

‘এর দুই-তিনদিন পর আমার অফিস সহকারী মোখলেছুর রহমান ইরাদকে নিয়ে তার শ্বশুরবাড়িতে সমবেদনা জানাতে যাই। সেসময় বাবুল আক্তার ওনার বিনিয়োগ করা টাকা ফেরত চান। একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে কোথায় টাকা পাঠাতে হবে সেটা জেনে নিতে বলে। আমি ওই নম্বরটি ইরাদকে দেই। সরলমনে মানবিক দিক বিবেচনা করে ওই টাকা দিয়ে দেওয়ার জন্য আমার একাউন্টসকে নির্দেশনা দেই। পরবর্তীতে ইরাদের (মোখলেসুর রহমান ইরাদ) মাধ্যমে আমি জানতে পারি তিন লাখ পরিমাণের অর্থ বিভিন্ন নম্বরে বিকাশ করা হয়েছে।’

সাক্ষ্য তিনি আরও বলেন, ‘২০২১ সালের ৯ মে পিবিআই থেকে আমাকে ওই ঘটনা তদন্তের জন্য ডাকা হয়। তৎকালীন ইন্সপেক্টর সন্তোষ কুমারের জিজ্ঞাসাবাদে চট্টগ্রাম এসে আমি সবকিছু খুলে বলি। ওই সময় আমার ব্যবহার করা একটি মোবাইলও জব্দ করা হয়। পরের দিন ১১ মে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আমার সাক্ষীর জবানবন্দি দেই।’

এসময় তিনি জবানবন্দি ও জব্দ তালিকায় থাকা সই ওনার নিজের বলে স্বীকার করেন। সাক্ষ্য দেওয়ার পর সাইফুলকে জেরা করেন বাবুল আক্তারের আইনজীবী কফিল উদ্দিন।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১১ মে সাইফুল হক চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। এরপর পিবিআই জানিয়েছিল, বাবুল আক্তারের ঘনিষ্ঠজনের জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের পর টাকা লেনদেনের তথ্যপ্রমাণ পেয়ে পিবিআই নিশ্চিত হয়েছে যে, মিতুকে হত্যার জন্যই মূলত ওই তিন লাখ টাকার লেনদেন হয়। বাবুল আক্তারের পরিকল্পনায় এটি ছিল একটি ‘কন্ট্রাক্ট কিলিং’। মূলত বাবুল আক্তারই টাকা পাঠানোর জন্য সাইফুলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন।

পিবিআই, চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান সেদিন বলেছিলেন, ‘সাইফুল হকের মাধ্যমে বাবুল আক্তারই তিন লাখ টাকা পাঠায়। সাইফুল মুসার আত্মীয় মামুনের মাধ্যমে এ বিষয়ে মুসার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিকাশের মাধ্যমে এই টাকা লেনদেন হয়েছে। বিকাশের লেনদেনের স্লিপ আমরা উদ্ধার করেছি। আমরা তদন্তে এটা নিশ্চিত হয়েছি যে, হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল আক্তার তার পূর্বের কমিটমেন্ট (প্রতিশ্রুতি) অনুযায়ী টাকাগুলো মুসার কাছে পাঠিয়েছে।’

গত ১৭ জুলাই সাইফুল হকের কর্মচারী মোখলেসুর রহমান ইরাদ আদালতে সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্যে তিনি জানান, মিতু হত্যার কয়েকদিন পর সাইফুলের নির্দেশে তিনি ‘কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া’ ওয়াসিম ও আনোয়ারের বিকাশ নম্বরে তিন লাখ টাকা পাঠিয়েছিলেন।

এদিকে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মহানগর পিপি আব্দুর রশীদ সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, সাইফুল হকের সাক্ষ্য ও জেরার পর আদালত এ মামলার কার্যক্রম বুধবার (৯ আগস্ট) পর্যন্ত মূলতবি করেছেন।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সাতজনকে আসামি করে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করে। ১০ অক্টোবর আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। চলতি বছরের ১৩ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। ৯ এপ্রিল থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। প্রথম সাক্ষী হিসেবে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের সাক্ষ্য দেন।

অভিযোগপত্রে প্রধান আসামি করা হয়েছে মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারকে। অভিযোগপত্রে আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন— মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ, হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খাইরুল ইসলাম কালু এবং শাহজাহান মিয়া। আসামিদের মধ্যে শুধু মুসা পলাতক আছেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে।

সারাবাংলা/আইসি/এনএস

টপ নিউজ বাবুল আক্তার সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর