ব্রেস্ট ফিডিং কর্নারে নিশ্চিত হবে মায়েদের শতভাগ কাজ
১৩ মে ২০১৮ ১২:০৩
।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: সন্তানকে সময়মতো ব্রেস্ট ফিড না করাতে পারলে, কোলের শিশু সঙ্গে না থাকলে মায়েরা কাজে মনোযোগ দিতে পারেন না। তাই প্রতিটি কর্মস্থলে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার নিশ্চিত করতে হবে। আর এ বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর। সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশন। তারপরও দেশের প্রতিটি কর্মস্থলে নিশ্চিত হয়নি ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কর্মস্থলে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার না থাকাতে মায়ের কাজে যেমন প্রভাব পরছে তেমনি সন্তানের স্বাস্থ্যেও তার প্রভাব পরছে। নবজাতক তার সবচেয়ে জরুরি পুষ্টিটাই পাচ্ছে না, যা কীনা তার বেড়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশন থেকে জানা যায়, ২০০৯, ২০১০, ২০১১ এবং ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার গড়ে তোলার জন্য প্রতিটি কর্মস্থলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে যেন একজন কর্মজীবী মা সমর্থ্য হন সেই পরিবেশ কর্মক্ষেত্রে নিশ্চিত করতে হবে। আর এজন্য সরকারি-বেসরকারি, ব্যাংক-বীমা, কারখানা, শপিং মল, পেশাজীবী সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন এবং মানবাধিকার সংগঠনসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু দেশের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই সেই নির্দশনা মানা হয়নি।
বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ইফফাত চৌধুরী (ছদ্মনাম) মা হয়েছেন সাত মাস হলো। ইফফাত বলেন, বাচ্চাটা তো আমার সঙ্গে অফিসেই যায় না, যার কারণে ব্রেস্ট ফিড করানোর মতো বিষয়টি ফিল করি না। অফিসে যদি ডে কেয়ার সেন্টারের মতো কিছু একটা থাকতো তাহলে হয়তো সেটা ফিল করতাম।
ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার তো স্পেসিফিক, কিন্তু যদি একটি ডে কেয়ার সেন্টার থাকতো তাহলে ‘অনেক ভালো হতো-অনেক ভালো হতো-অনেক ভালো হতো’ বলে মন্তব্য করেন ইফফাত।
তিনি বলেন, এর বিকল্প ভাবা আমাদের জন্য খুব কঠিন কিন্তু কর্মজীবী মায়েদেরকে সেটাই ভাবতে হচ্ছে, আমার বাচ্চা ‘ডিপ্রাইভড’হচ্ছে।
ইফফাত বলেন, সাধারণত বিকেল পাঁচটার পর থেকে ব্রেস্ট ফিড করাতে পারি। কিন্তু দুপুরে বাচ্চাটা ঘুমের আগে কাঁদে, আমি শুনি সেটা। কিন্তু কিছু তো করার নেই, সে সময়টা আমি অফিসে থাকি। আমাদের অফিসে অনেক বেশি নারী থাকার পরও ম্যানেজমেন্ট ডে কেয়ার সেন্টার বা ব্রেস্ট ফিডিং কর্নারের মতো কিছু করেনি।
জানতে চাইলে নিউজ টোয়েন্টিফোরের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক আঙ্গুর নাহার মন্টি সারাবাংলাকে বলেন, মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস হলেও সব গণমাধ্যমে আমরা এই ছুটি নিশ্চিত করতে পারছি না।
আর আড়াই বছর পর্যন্ত সন্তানকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হয়-এটি একেবারেই একটি প্রাকৃতিক বিষয় মন্তব্য করে আঙ্গুর নাহার মন্টি আরও বলেন, মায়ের কর্মক্ষেত্রে যদি একটি ডে কেয়ার সেন্টার থাকে বা ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার থাকে তাহলে মায়ের প্রোডাক্টিভিটি এমনিতেই বেড়ে যাবে। কারণ সেই মা তার প্রয়োজনমতো সন্তানকে বুকের দুধ খাইয়ে আবার কাজ করতে পারছেন। এটা তার মনে প্রশান্তি এনে দেবে, যেটা তার কাজেও প্রভাব ফেলবে।
একইসঙ্গে সে তার অফিসের প্রতি কৃতজ্ঞও থাকে, কাজের প্রতি নিরানন্দ ভাবটা কেটে যায়। আর তার সন্তান যখন তারই সঙ্গে একটি নিরাপদ জায়গায় থাকতে পারছে তখন তার কর্মস্পৃহা আরও বেড়ে যায়। তাই প্রাকৃতিক, মানবিক এবং মায়েদের কাজের স্বার্থে হলেও কর্মক্ষেত্রে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করেন আঙ্গুর নাহার মন্টি।
এদিকে, সরকারি-বেসরকারি বেশকিছু প্রতিষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনাসহ চিঠি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশে ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের পরিচালক খুরশিদ জাহান সারাবাংলাকে বলেন, অবস্থা এমন হচ্ছে যে, কর্মজীবী মায়েরা সন্তান জন্মানোর পর কাজ করবে না। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে যদি ব্রেস্ট ফিড করানোর মতো পরিবেশ না থাকে তাহলে সে কী করবে?
একজন নবজাতক কী আট ঘন্টা মায়ের বুকের দুধ না খেয়ে থাকবে কী না প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, একটি নবজাতকের স্বাস্থ্যের ওপর কতোটা প্রভাব ফেলবে আর একজন মায়ের মনে কতোটা প্রতিক্রিয়া হয় সে বিষয়গুলো বোঝার মতো কেউ কি নেই এ দেশে?
যেসব মায়েরা সন্তানকে ব্রেস্ট ফিড করানোর সুযোগ পায় না বা পাবে না তাদের জন্য কাজ চালিয়ে যাওয়া খুব কঠিন মন্তব্য করে সেভ দ্যা চিলড্রেনের ডিপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. ইশতিয়াক মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, একজন মায়ের জন্য বুকের দুধ খাওয়া সন্তানকে বাসায় রেখে কাজে মনোযোগ দেওয়া খুব কঠিন। এটি বোধহয় কেবল ভুক্তভোগী মায়েরাই বুঝবেন। তাই প্রতিটি মায়ের এই সুবিধা পাওয়া তার অধিকারের পর্যায়ে পরে বলে আমি মনে করি।
ডা. ইশতিয়াক মান্নান আরও বলেন, একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোর এটাও মাথায় রাখা দরকার যে, একজন মা যখন তার নবজাতক সন্তানকে ইচ্ছে হলেই একটু চোখের দেখাটাও দেখতে পাবেন, সন্তানের সময় মতো তাকে ফিড করাতে পারবেন তখন মায়েরা এমনিতেই কাজে মনোযোগী হবেন, তাদের কাজের ক্ষমতা বাড়বে, বাড়বে তাদের কাজের মান।
আর এই বিষয়টি একেবারেই মায়ের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নীর্ভর করে না, বিষয়টি প্রাকৃতিক-এটা বুঝতে পারলে বরং প্রতিষ্ঠানগুলোর লাভ বলেন ডা. ইশতিয়াক মান্নান।
https://www.facebook.com/Sarabangla.net/videos/615840558776356/
সারাবাংলা/জেএ/এমআইএস