চট্টগ্রামে ২ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন
৮ আগস্ট ২০২৩ ২০:২৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: অতি ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় দুই লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। বিদ্যুতের সাবস্টেশন পানিবন্দি হয়ে পড়া, খুঁটি ভেঙে এবং সঞ্চালন লাইনের ওপর গাছ পড়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অধীনে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে বোয়ালখালী, আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, পটিয়া, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অধীনে। চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর অধীনে হাটাহাজারী, মীরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলা। সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের প্রায় দেড় লাখ গ্রাহক গত দুইদিন ধরে বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম নগরী, চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী, সাতকানিয়া এবং বান্দরবানের বড় অংশে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। পিডিবি জানিয়েছে, তাদের কমপক্ষে ৫০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছে।
উপজেলার মধ্যে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, পটিয়া ও চন্দনাইশে বিদ্যুৎ সরবরাহে মারাত্মক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক দীলিপ চন্দ্র চৌধুরী জানিয়েছেন, এসব উপজেলায় অন্তঃত ৭৫টি খুঁটি হেলে পড়েছে। গাছ ভেঙ্গে সংযোগ লাইনের ওপর পড়েছে অনেক জায়গায়। চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়ন পানিবন্দি হয়ে পড়ায় সেখানে মেরামতের জন্য কর্মীরা যেতে পারছেন না।
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর মহাব্যবস্থাপক মৃদুল কান্তি চাকমা জানিয়েছেন, হাটহাজারী উপজেলার মাদার্শা, উত্তর মার্দাশার মাছুয়াঘোনা, মাদারিপোল ও গাবগুলাতল এলাকায় গাছ পড়ে খুঁটি ভেঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তবে মীরসরাই ও সীতাকুণ্ডে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে পেরেছেন তারা।
পিডিবির চট্টগ্রামের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, চন্দনাইশের দোহাজারী, সাতকানিয়া ও বান্দরবানে তাদের অধিকাংশ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছেন। নগরীর হালিশহর ও চকবাজার-বাকলিয়ার নিচু এলাকাগুলোতে পানি জমে থাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে।
‘আমাদের কয়েকটা সাবস্টেশনে পানি ঢুকে গেছে। ট্রান্সফর্মার পানির নিচে চলে গেছে। সঞ্চালন লাইনে গাছ পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশ থেকে উঁচু এলাকায়ও ঢলের কারণে মাটি সরে যাচ্ছে খুঁটির গোড়া থেকে। অনেকগুলো খুঁটি উপড়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে আমাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করতে হয়েছে। আমরা ইচ্ছা করলেও সেখানে যেতে পারছি না। আমাদের কর্মীরা ২৪ ঘন্টা কাজ করছেন, কিন্তু এ মুহুর্তে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে।’
নগরীর হালিশহর আবাসিক এলাকার এ-ব্লকের একাংশ, এল-ব্লক, বাকলিয়ার সৈয়দ শাহ রোড, কাপাসগোলা, শুলকবহরসহ আরও কয়েকটি এলাকা সোমবার দিনভর বিদ্যুৎহীন ছিল। মঙ্গলবারও (০৮ আগস্ট) নগরীর কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি।
এ প্রসঙ্গে রেজাউল করিম বলেন, ‘বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মিটাররুম পানির নিচে চলে গেছে। এ অবস্থায় সেখানে পাওয়ার বন্ধ না রাখলে বিদ্যুতায়িত হয়ে দুর্ঘটনা ঘটত। পরবর্তীতে আমরা যেসব বাসাবাড়ির নিচতলা পানির নিচে আছে, সেগুলোর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বাকিগুলো চালু করি। বৃষ্টিপাত একেবারে টানা হচ্ছে। একবার মেরামত করে আসার পর দেখা যাচ্ছে, একই এলাকায় আবার গাছ পড়ে সংযোগ লাইন কিংবা ট্রান্সফর্মার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এজন্য সরবরাহে কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে।’
গত বৃহস্পতিবার (০৩ আগস্ট) সন্ধ্যা থেকে চট্টগ্রামসহ আশপাশের এলাকায় বৃষ্টিপাত শুরু হয়। দুইদিনের মাথায় সেটা অতি ভারি বর্ষণে রূপ নেয়। সোমবার সন্ধ্যার পর বৃষ্টিপাত বন্ধ হলেও মঙ্গলবার সকাল থেকে আবারও থেমে থেমে চলছে।
রোববার থেকে টানা বৃষ্টির সঙ্গে অস্বাভাবিক উচ্চতার জোয়ার ও পাহাড়ি ঢল যুক্ত হয়ে বিভিন্ন উপজেলা পানিবন্দি হয়ে পড়ে। দুইদিনের ব্যবধানে সেটা বন্যা পরিস্থিতিতে রূপ নিয়েছে। সাতকানিয়া ও চন্দনাইশে মহাসড়কে পানি উঠে যাওয়ায় কক্সবাজার ও বান্দরবানের সঙ্গে যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জানান, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় বন্যার্তদের সহায়তায় নেমেছে সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা।
সারাবাংলা/আরডি/এনইউ