Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইউনিসেফ অর্থ না দেওয়ায় আটকে আছে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া

জোসনা জামান,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৯ আগস্ট ২০২৩ ০৮:৪৮

ঢাকা: জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়ার অর্থ দিচ্ছে না ইউনিসেফ। এ বিষয়ে অনুরোধ করার পরেও সাড়া দেয়নি সংস্থাটি। ফলে আটকে আছে প্রকল্পের নতুন ৩১০ জনবল নিয়োগ কার্যক্রম। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে বিকল্প পন্থায় অন্য অঙ্গ (খাত) থেকে ২ কোটি ৬১ লাখ টাকার বরাদ্দ কেটে আনা হচ্ছে। ‘চাইল্ড সেনসিটিভ সোস্যাল প্রটেকশন ইন বাংলাদেশ (সিএসপিবি) ফেইজ-২’শীর্ষক প্রকল্পে ঘটেছে এমন ঘটনা।

এ কারণে প্রকল্পটির ব্যয় সমন্বয়ের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে রোববার (৬ আগস্ট) অনুষ্ঠিত হয়েছে বিভাগীয় বিশেষ প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (ডিএসপিইসি) সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম। সভায় ইউনিসেফের অর্থ না দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে বলে জানা গেছে।

একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে জানায়, সংশোধিত টিএপিপিতে প্রকল্প সাহায্যের অর্থায়নে নতুন ৩১০ জনবল নিয়োগের সংস্থান রয়েছে। প্রক্রিয়া সম্পাদনের জন্য পত্রিকায় শিশু সুরক্ষা সমাজকর্মী ও সাইকোসোস্যাল কাউন্সেলর পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে মোট এক লাখ ৭১ হাজার ৪৮৬টি আবেদন পাওয়া যায়। আবেদন প্রক্রিয়া যাচাই বাছাই ও নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পাদনের জন্য আবেদনকারীদের কাছ থেকে কোনো ফিস নেওয়া হয়নি। শুধুমাত্র নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার ব্যয় ইউনিসেফ থেকে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষা সংক্রান্ত অন্যান্য ব্যয়ের প্রয়োজনীয় অর্থ ইউনিসেফকে দেওয়ার অনুরোধ করা হলেও ইউনিসেফ এতে সম্মত হয়নি।

সূত্র জানিয়েছে, অপরদিকে প্রকল্পের আরটিএপিপিতে (প্রকল্প প্রস্তাব) নিয়োগ পরীক্ষা সংক্রান্ত ব্যয়ের সংস্থান না থাকায় নতুন জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য আনুমানিক ২ কোটি ৬১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন। এ অবস্থায় প্রকল্পের মোট ব্যয় অপরিবর্তিত রেখে আন্তঃঅঙ্গ ব্যয় সমন্বয়ের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সংক্রান্ত ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারি অংশে ব্যবস্থাপনা ব্যয় খাতে ২ কোটি ৬১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। সেজন্যই ব্যয় সমন্বয়ের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।

সভা সূত্র জানায়, মিটিং, সেমিনার বা ওয়ার্কশপ খাতে পাঁচটি জাতীয় শিশুকল্যাণ বোর্ড সভা করার জন্য মোট ৩১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এ পর্যন্ত একটি জাতীয় শিশুকল্যাণ বোর্ড সভা হয়েছে। এই সভার যাবতীয় ব্যয় ইউনিসেফ বহন করেছে। ফলে এ খাতে এখন পর্যন্ত কোনো অর্থ ব্যয় হয়নি।

আরও জানা যায়, ভ্যাট (মূল্য সংযোজন ব্যয়) খাতে প্রকল্পের মাধ্যমে শেষ হওয়া কার্যক্রমের ভ্যাট সরকারি অর্থায়ন থেকে মেটানোর সংস্থান রাখা হয়েছিল। অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগের স্মারকে জারী করা পরিপত্র অনুযায়ী যে অঙ্গের ব্যয় সে অঙ্গ থেকে ভ্যাট পরিশোধের নির্দেশনা রয়েছে। ফলে এ খাত থেকে ব্যয় না হওয়া এক কোটি ১৭ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হতে পারে।

শিশু সুরক্ষা ভাতা বা শর্তযুক্ত অর্থসহায়তা খাতে মোট পাঁচ হাজার শিশুকে মাসে দুই হাজার টাকা হিসেবে ১৮ মাসে মোট এক হাজার ৮০০ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এ পর্যন্ত এ খাতে কোনো অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হয়নি। প্রকল্পের বাকি ১৭ মাস মেয়াদ রয়েছে, ফলে আগামী ১৭ মাসে পাঁচ হাজার শিশুকে দুই হাজার টাকা হিসেবে মোট ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। দ্রুত এ ভাতা দেওয়া শুরু করা হবে। এ খাত থেকে অব্যয়িত এক কোটি টাকা স্থানান্তর করা যেতে পারে।

প্রকল্পের পিআইসি ও পিএসসি সভা, নিয়োগ কমিটি, সদস্যদের সম্মানী দেওয়ার জন্য এ খাতে মোট ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থবিভাগের স্মারকে জারী করা পরিপত্র অনুযায়ী আইবাস সিস্টেমে সম্মানী খাতে কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায় না। ফলে এ খাত থেকে ২৩ লাখ টাকা নেওয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে।

প্রকল্পের আরটিএপিপিতে ইউনিসেফের অর্থায়নে একটি জিপ গাড়ি সরবরাহের সংস্থান রয়েছে। তবে এই জিপ গাড়ি ছাড় করার সিডি, ভ্যাট সরকারের পরিশোধের নির্দেশনা রয়েছে। এই সিডি, ভ্যাট বাবদ সিডি ভ্যাট কোডে দুই কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থবিভাগের স্মারকে জারী করা পরিপত্র অনুযায়ী যানবাহন কিনতে প্রযোজ্য সিডি ভ্যাট যানবাহন ক্রয়ের কোডে সংস্থান রাখার নির্দেশনা রয়েছে। ফলে আইবাস সিস্টেম সিডি ভ্যাট কোডে কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায় না। তাই অর্থ ছাড় করার ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। কাস্টমস থেকে গাড়ি ছাড় করার জন্য প্রয়োজনীয় সিডি ভ্যাটের অর্থ নিশ্চিত না হওয়ায় ইউনিসেফ থেকে গাড়ি সরবরাহ হচ্ছে না। এ জন্য সিডি ভ্যাট কোডে সংস্থান করা দুই কোটি টাকা যানবাহন কিনতে (৪১১২১০১) বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

সূত্র জানায়, ‘চাইল্ড সেনসিটিভ সোস্যাল প্রটেকশন ইন বাংলাদেশ (সিএসপিবি) ফেইজ-২’শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মূল ব্যয় ছিল ৪০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। পরবর্তীতে প্রথম সংশোধনের মাধ্যমে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ২২০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ২৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক অনুদান থেকে ১৯৭ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে।

সারাবাংলা/জেজে/আইই


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর