Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জলাবদ্ধতা: অবশেষে ‘দেখা মিলল’ সিডিএ চেয়ারম্যানের

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৯ আগস্ট ২০২৩ ২০:২৯

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। এর মধ্যেই টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় নগরীর দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা। পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগে সিডিএ চেয়ারম্যান কিংবা সংস্থাটির কোনো কর্মকর্তাকে পাশে দাঁড়াতে দেখা যায়নি, যা নিয়ে সমালোচনায় সরব বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

তবে বৃষ্টিপাত কমে আসায় পরিস্থিতির উন্নতি যখন শুরু হয়েছে, তখন সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ। যথারীতি সমালোচনার তীরে বিদ্ধ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকে। অবশ্য মেয়রও বারবার জলাবদ্ধতার জন্য সিডিএ চেয়ারম্যানকে দোষারোপ করে আসছিলেন।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৯ আগস্ট) দুপুরে সিডিএ সম্মেলনে কক্ষে জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, ‘‘এবার যে বৃষ্টিপাত হয়েছে, গত ৩০ বছরে এমন বৃষ্টি হয়নি, যার কারণে জলাবদ্ধতা হয়েছে। নগরীতে তিনটা সংস্থা জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ করছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিটি করপোরেশন এবং সিডিএ। আমরা যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি, এটি জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প হলেও সবাই মনে করে পুরো চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব সিডিএ’র। কিন্তু আমরা তো শুধু ৩৬টি খাল নিয়ে কাজ করছি। কিছু নালা-নর্দমাও আছে।’’

সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতার জন্য সিডিএ জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের দায়িত্ব পেয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘‘প্রকল্পটি সিডিএ’র করার কথা নয়। সিটি করপোরেশন না পারায় এটি সিডিএকে দিয়েছে সরকার। জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ সিডিএ’র না। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর সিটি করপোরেশন, ওয়াসা ও বন্দরের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ শুরু করেছিলাম। ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। মেয়াদ বাড়ানোর জন্য একনেকে পাঠানো হয়েছে।’’

বিজ্ঞাপন

সিডিএ’কে দোষারোপে আপত্তি জানিয়ে দোভাষ বলেন, ‘‘অনেকে সিডিএ’কে দোষারোপ করছে। খালে পানি নেই। সব জায়গায় খাল পরিষ্কার আছে। তবে সড়কে পানি জমে আছে। সড়কের দায়িত্ব কিন্তু সিডিএ’র না। আমরা কোনো সংস্থার বিরুদ্ধে নয়। আমরা কি কাজ করছি, সেটা জানাতে চাই। গাফেলতির জন্য অন্য সংস্থাকে দায়ী করছি না। কোনো সংস্থা যদি কোনো কিছুর জন্য দোষারোপ করে, সেই বিষয় ক্লিয়ার করছি।’’

খাল থেকে মাটি অপসারণ করা হয়নি, মেয়রের এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মেয়র সাহেব কিভাবে জানেন, আমাদের ডিপিপিতে কী পরিমাণ মাটি অপসারণ করতে হবে। আমাদের ডিপিপিতে আছে ৪ লাখ ২০ হাজার ঘনমিটার কাদা অপসারণ এবং ৫ লাখ ২৮ হাজার ২১৪ ঘনমিটার মাটি খনন। সব মিলিয়ে প্রায় ৩ কোটি ঘনফুট মাটি অপসারণ হবে। আমরা ৬ কোটি ঘনফুট মাটি অপসারণ করেছি। মেয়র সাহেব ভুল তথ্য দিয়ে সিডিএর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন।’

‘স্থায়ী স্লুইচ গেইট বিদেশ থেকে আসতে দেরি হওয়ায় বর্ষা মৌসুমের জন্য অস্থায়ী স্লুইচ গেইট লাগানো হয়েছে। তাই চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে এবার পানি উঠেনি। মহেশখালে স্লুইচ গেইট চালু হওয়ায় মা ও শিশু হাসপাতালে এবার পানি উঠেনি।’

সিডিএ’র তত্ত্বাবধানে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহীনর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড। দোভাষ বললেন, ‘‘সিডিএ’র কোনো গাফেলতি নেই। বাস্তবায়নকারী সংস্থা হচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড। যারা বদনাম করে কাজ করেনি বলে, আমি মনে করি তা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অপমান করা। আমাদের সেনাবাহিনীর একটা সুনাম আছে।’’

সংবাদ সম্মেলনে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী বলেন, ‘প্রকল্প হাতে নেওয়ার পর সেনাবাহিনীর সঙ্গে চুক্তি হয়। আমাদের প্রকল্পে রয়েছে ৩৬টি খাল। কিন্তু চট্টগ্রাম নগরীতে ৫৭টি খাল আছে। ৩৬টি খালের সম্প্রসারণ চলছে, কিন্তু বাকি ২১টি খালের সম্প্রসারণ করা হয়নি, যা আমাদের প্রকল্পের আওতাভুক্ত নয়। যার জন্য জলাবদ্ধতা হতে পারে।’

‘সেনাবাহিনীর বাস্তবায়নাধীন ৩৬টি খালের মধ্যে ২৬টি খালের কাজ প্রায় শেষ। বাকি ১১টি খালের কাজ ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় আটকে আছে। ভূমি অধিগ্রহণ শেষ হলে আমরা কাজ শেষ করতে পারব। নগরীতে জলাবদ্ধতা কমাতে হলে খালে ময়লা ফেলা বন্ধ করতে হবে। এছাড়া নগরের ছোট বড় প্রায় ১ হাজার ৬০০টি নালা আছে। নালাগুলো পরিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।’

সারাবাংলা/আরডি/এনএস

চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর