Monday 09 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সোনার বার ছিনতাই: স্ত্রী-ভাইসহ আ.লীগ নেতা গ্রেফতার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৯ আগস্ট ২০২৩ ২১:৪৩ | আপডেট: ৯ আগস্ট ২০২৩ ২২:৪৪

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীতে সোনার বার ছিনতাইয়ের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা ও তার স্ত্রী-ভাইসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ও চট্টগ্রাম নগরীতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবীর।

গ্রেফতার পাঁচজন হলেন- জয়ন্ত বণিক (৪৮) ও তার স্ত্রী শ্রাবণী বণিক (৩৪), ভাই প্রবীর বণিক (৪৪) এবং আব্দুর রউফ (৫২) ও মাঈনুদ্দীন হাসান তুষার (৩৮)।

জানা গেছে, জয়ন্ত পেশায় সোনার কারিগর। নগরীর কোতোয়ালী থানার হাজারী লেইনের মিয়া শপিং কমপ্লেক্সে তার সোনার গহনা তৈরির কারখানা আছে। স্ত্রী-ভাইসহ হাজারী লেইনে একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। তাদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়।

বিজ্ঞাপন

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবীর সারাবাংলাকে জানান, হাজারী গলির পিয়াসী মার্কেটের বনলতা কাটিং সেন্টার নামে একটি সোনার গহনা তৈরির কারখানার মালিক কনক ধর গত ৬ আগস্ট ভোরে ছিনতাইয়ের শিকার হন। তিনি কাপড়ের ব্যাগে ১৪টি সোনার বার নিয়ে রিকশায় করে গরীবউল্লাহ শাহ মাজার এলাকায় যাচ্ছিলেন। হাজারী গলির প্রবেশমুখে চারজন তাকে আক্রমণ করে সোনার বারগুলো নিয়ে যায়। এ ঘটনায় কনক ধর মামলা দায়ের করেন।

পাঁচজনকে গ্রেফতারের তথ্য দিয়ে ওসি বলেন, ‘সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে আমরা প্রথমেই জয়ন্ত বণিককে শনাক্ত করি। জয়ন্ত ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। তাকে মঙ্গলবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর থেকে গ্রেফতার করি। ছিনতাইয়ের ঘটনার পর জয়ন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলে গিয়েছিল। এরপর তার তথ্যে ঘাটফরহাদবেগ থেকে ভাই প্রবীর বণিককে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তাদের তথ্যে বাকলিয়া থেকে রউফ ও তুষারকে গ্রেফতার করি।’

তাদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওসি জাহিদুল আরও বলেন, ‘তুষার ও রউফ আমাদের তথ্য দেয়, ছিনতাই করা সোনার বার জয়ন্ত ও প্রবীরের হেফাজতে আছে। এর আগ পর্যন্ত তারা বিষয়টি অস্বীকার করে আসছিলেন। জয়ন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া গিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে নিয়মিত মোবাইলে যোগাযোগ রেখেছিল। তার মোবাইলের অটো কলরেকর্ডে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা থেকে পালিয়ে যাওয়া এবং সোনার বার বিক্রির টাকা জমা রাখাসহ বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। হাজারী লেইনের বাসা থেকে জয়ন্তের স্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়।’

স্ত্রী শ্রাবণী বণিকের তথ্যের ভিত্তিতে তার ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে ছিনতাই করা ৬টি সোনার বার এবং বিক্রি বাবদ ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয় বলে ওসি জানান।

হাজারী গলির স্থানীয় সূত্রের দেয়া তথ্যানুযায়ী, জয়ন্ত বণিক চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। গত ফেব্রুয়ারিতে সম্মেলনের পর সেই কমিটি বিলুপ্ত হয়েছে। তার ভাই প্রবীর বণিক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। হাজারী গলিতে অবস্থান করে গ্যাংভিত্তিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা, ছিনতাই-চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

উভয়ই নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। নিয়মিত বিভিন্ন সমাবেশে দুই ভাইকে হাজারী লেইন থেকে মিছিল নিয়ে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।

জানতে চাইলে আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশীষ ভট্টাচার্য সারাবাংলাকে বলেন, ‘জয়ন্ত বণিক গত কমিটিতে সদস্য ছিলেন। এবার সম্মেলনের পর এখনও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়নি। শুধুমাত্র সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন হয়েছে।’

স্থানীয়রা জানান, প্রবীর বণিক কখনও নিজেকে যুবলীগ নেতা, কখনও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দেন। গ্রেফতার তুষার ও রউফ তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। হাজারী লেইনের পার্শ্ববর্তী টেরিবাজারে রঘুনাথ মন্দির এলাকায় একটি মাদকের আস্তানায় নিয়মিত আড্ডা দেন তারা। সেই আস্তানায় ছিনতাই-চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা হয়। রউফের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় মাদক আইনে দুটি মামলা আছে।

গ্রেফতার অভিযানে অংশ নেয়া কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোমিনুল হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘জয়ন্ত বণিক দীর্ঘসময় ধরে হাজারী গলিতে সোনার কারিগর হিসেবে কাজ করে। এজন্য সোনার ব্যবসায়ীদের কেনা-বেচার সব তথ্য তার নখদর্পণে থাকে। তথ্য অনুযায়ী জয়ন্ত সোনা ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে ও পরিকল্পনা সাজায়। এরপর ছোট ভাই প্রবীর ও তার সহযোগীদের দিয়ে ছিনতাই করায়। সেই সোনা উদ্ধারের নামে আবার মধ্যস্থতা করে জয়ন্ত। পরে সেখান থেকে কিছু সোনা বা সোনার বার হাতিয়ে নেয়।’

সারাবাংলা/আরডি/এনএস

চট্টগ্রাম সোনার বার ছিনতাই