Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জয়পুরহাটে লোকসানের শঙ্কায় আমন চাষিরা

মো. শামীম কাদির, জয়পুর হাট
১০ আগস্ট ২০২৩ ০৯:৩০

জয়পুরহাট: গেল মৌসুমে ধানের দাম কম থাকায় এবার লোকসানের শঙ্কা নিয়ে রোপা আমন চাষ করছেন জয়পুরহাটের কৃষকরা। সার, বিদ্যুত ও ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার ধান উৎপাদনে বিঘা প্রতি কৃষকদের ৪-৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ গুণতে হচ্ছে। সে অনুপাতে আগামী মৌসুমে ধানের দাম বাড়ানোর দাবি কৃষকদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভরা বর্ষা মৌসুমে আবাদের চাহিদা মত বৃষ্টি না হওয়ায় এবার আমন চাষে জমিতে পানির জন্য জয়পুরহাটের চাষিদের পুরোপুরি সেচযন্ত্রের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এতে করে বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রের পেছনে আমন চাষে অতিরিক্ত টাকাও গুণতে হচ্ছে।

সার, বীজ, কীটনাশক ও শ্রমিক বাবদও গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। ফলে গত বছরের তুলনায় এবার বিঘা প্রতি ব্যয় বেড়েছে ৪-৫ হাজার টাকা। তবুও কৃষকরা শঙ্কা নিয়েই তাদের জমিতে আমন চারা রোপণ করে যাচ্ছেন।

আমন ধান বর্ষা মৌসুমের প্রধান ফসল। এ ফসলে প্রচুর পানির প্রয়োজন। আমন চাষের মূল সময়ও জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে মধ্যে আগস্ট পর্যন্ত। ভরা বর্ষা সময়েই আমন ধান রোপণ হয়ে থাকে। কিন্তু এবার ভরা বর্ষায়ও শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে বিরূপ প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়েছে কৃষকদের জীবিকায়। আর কিছুদিন পর এ ফসল থেকে সঠিক উৎপাদনের সম্ভাবনাও থাকবে না বলে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।

কালাই উপজেলার বালাইট গ্রামের কৃষক রুবেল হোসেন বলেন,‘এলাকায় কমপক্ষে দেড়শ কৃষক বিদ্যুৎ ও ডিজেলচালিত সেচের আওতায় প্রায় সাড়ে তিন’শ বিঘা জমি চাষাবাদ করেছেন। সেচমালিকরা পানির বিনিময়ে শতক প্রতি ১৫ টাকা হারে চাইলেও পরে বর্ষার পরিস্থিতি বুঝে শতক প্রতি ২০ টাকা করে দাবি করেন। এতে প্রতি বিঘাতে ৬৬০ টাকা দিতে হচ্ছে। অন্যান্য খরচতো আছেই। আমি প্রায় ১২ বিঘা জমি ডিজেলচালিত সেচের আওতায় চাষাবাদ করছি।

ক্ষেতলাল উপজেলার বড়তারা গ্রামের কৃষক আবু বক্কর বলেন,‘আমন ধান মূলত বর্ষার পানিতে হয়। কিন্তু এবার ভরা মৌসুমেও বৃষ্টির দেখা নেই। এ কারণে বিঘা প্রতি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকার বিনিময়ে কৃষকরা সেচমালিকদের কাছ থেকে জমিতে সেচ নিচ্ছেন। অনেকেই বর্ষার জন্য অপেক্ষা করছেন। আকাশের পানি নামলে আবাদ লাগাবেন। আবার অনেকেই আবাদ করবেন কি না তা নিয়েও দোটানায় আছেন।

পাঁচবিবি উপজেলার চাটখুর গ্রামের কৃষক মোখলেছুর রহমান বলেন,স্বাভাবিকভাবে হাল দিয়ে জমি প্রস্তুত করা থেকে চারা রোপণ পর্যন্ত বিগত বছরগুলোতে প্রতি বিঘায় ব্যয় হত ৮-৯ হাজার টাকা। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় এবার সেচের কারণে এই খরচ ১২-১৩ হাজার বা তারও বেশি হচ্ছে। অথচ আমন ফসল কৃষকদের জন্য একটি নিশ্চিত ফসল। এ অবস্থায় আমন আবাদে বাড়তি খরচের বোঝা চাপছে কৃষকদের ওপর।

কালাই পৌরশহরের আঁওড়া গ্রামের কৃষক মোক্তাদির বলেন, গত দুই বছর ধরে ধানের দাম কম যাচ্ছে। অথচ সার, ডিজেল, কীটনাশক ও শ্রমিকের মূল্য দিনদিন বেড়েই চলেছে। এ অবস্থা চললে কৃষক এক সময় থেমে যাবে। তখন সবারই টনক নড়বে।

বৃহত্তর বগুড়া অঞ্চলের আবওহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান বলেন, ‘বৈশ্বিকভাবেই এবার উষ্ণতা বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে মূলত বৃষ্টি কম। এর প্রভাবটা কৃষিতে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। তবে কিছুদিনের মধ্যে বৃষ্টি বাড়ার সম্ভাবনা আছে।’

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জয়পুরহাটে এবার আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৯ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ২১ হাজার ২৩৫ টন চাল। অথচ ৫ আগস্ট পর্যন্ত মাঠে আমনের চারা রোপণ হয়েছে মাত্র ১০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি। গত বছর আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে পুরো জেলার অধিকাংশ জমিতে চারা রোপণের কাজ শেষ হয়েছিল।

জয়পুরহাট কৃষি অধিদফরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন,‘মাটি উর্বর হওয়ায় জেলার উঁচু-নিচু সব জমিতেই আমন চাষাবাদ হয়। বন্যা বা বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশী হলেও এ জেলায় তেমন একট প্রভাব পড়ে না। বৃষ্টি কম হলে ক্ষেতে রোগ-বালাইও কম হয়।

তিনি আরও বলেন, বাজারে ধানের দাম কম হলেও এবার আমন আবাদে এর প্রভাব পড়বে না।

সারাবাংলা/এনইউ

আমন চাষি জয়পুরহাট লোকসান শঙ্কা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর