‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা সাইবার আইনের উদ্দেশ্য নয়’
১০ আগস্ট ২০২৩ ১৭:৩২
ঢাকা: বাকস্বাধীনতা কিংবা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা সাইবার নিরাপত্তা আইনের উদ্দেশ্য নয় বলে দাবি করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, এই আইনের উদ্দেশ্য সাইবার অপরাধকে দমন করা; বাকস্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা নয়। এই আইনের মাধ্যমে সাইবার অপরাধ কমে আসবে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো অপব্যবহার কমে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’
বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) রাজধানীর আইসিটি টাওয়ারে সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব মো. মইনুল কবিরসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সাইবার নিরাপত্তা আইনের প্রায় সব ধারা জামিনযোগ্য। কিছু কিছু ধারা আমলযোগ্য ও অজামিনযোগ্য। অপরাধের ধরনের ওপর ভিত্তি করে আদালত জরিমানা করবেন আইনে এটি বলা হয়েছে। সবসময় ২৫ লাখ টাকা জরিমানা হবে বিষয়টি এমন নয়।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আগের আইনটি বাতিল করা হয়নি বরং পরিবর্তন করা হয়েছে। ডিজিটাল এর বদলে সাইবার শব্দ রাখা হয়েছে আইনটির ব্যাপ্তি বোঝানোর জন্য। বিশ্বে সাইবার অপরাধের ধরনেরও পরিবর্তন হয়েছে। সে জন্যই সাইবার নিরাপত্তা নামে আইনটি করেছি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশকিছু ধারায় সাজার পরিমাণ বেশি ছিল যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কিছু ধারার অপরাধ জামিন অযোগ্য ছিল। এসব বিষয়ে পরিবর্তন করে সাজার বিধান কমানো হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারায় জেল ও অর্থদণ্ড ছিল কিন্তু এখন শুধু অর্থদণ্ড রাখা হয়েছে।’
আইনের সমালোচকদের উদ্দেশে আনিসুল হক আরও বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পাশে রেখে এটি দেখলে অবশ্যই আইনটি পরিবর্তন করা হয়েছে। অনেকে না জেনেই বলছেন, নতুন বোতলে পুরনো মদ। যারা এটি করছেন তারা সমালোচনার জন্যই সমালোচনা করছেন, না জেনে করছেন।’
খসড়াকৃত সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৪২ ধারা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘৪২ ধারায় পুলিশ কর্মকর্তাকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সেটি জরুরি প্রয়োজনে অপরাধ দমন বা অপরাধ হলে প্রমাণ সংরক্ষণের জন্য। এখানেও যদি কোনো অপব্যবহার হয় তাহলে সেই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।’
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারায় মানহানিতে জেল ছিল, এটি নতুন আইনে নেই। ২১ ধারায় জেল ছিল ১০ বছর এখন এটি কমে ৭ বছর হয়েছে। তাহলে এটা কি নতুন নয়?’
মন্ত্রী বলেন, ‘কেউ যদি বলে নতুন বোতলে পুরাতন মদ এটি শুধু সমালোচনার উদ্দেশ্য বলা। যেমন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে টাকা চুরি করেছে তাকে কি ধরবো না? আমাদের আইনের প্রয়োজন আছে। সাইবার জগত সুরক্ষা ও নিরাপদ করার জন্যই সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩।’
সংবাদ সম্মেলনে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী পলক জানান, সাইবার নিরাপত্তা আইন,২০২৩ এর খসড়া ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। আগামী দুই সপ্তাহ এই খসড়ার বিষয়ে মতামত গ্রহণ করা হবে। আইসিটি বিভাগের পলিসি শাখায় এই মতামত দেওয়া যাবে। মতামতের প্রেক্ষিতে সংশোধনের প্রয়োজন হলে সংশোধন করে চূড়ান্ত যাচাই বাছাই শেষে আবারও মন্ত্রী পরিষদ বিভাগে উত্থাপন করা হবে। আর সেখান থেকে অনুমোদন পেলে সংসদে উত্থাপন করা হবে।
এর আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গত সোমবার (৭ আগস্ট) মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ পরিবর্তনের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। নতুন আইনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের শাস্তি, জামিন ও জরিমানা-সংক্রান্ত কিছু ধারা নমনীয় করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
সারাবাংলা/জিএস/ইএইচটি/একে