Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

টানা বর্ষণ: কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বেড়েছে উৎপাদন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১১ আগস্ট ২০২৩ ১২:৩৬

রাঙামাটি: রাঙামাটিতে গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সচল হয়েছে কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সবকটি ইউনিট। সেইসঙ্গে বেড়েছে কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ উৎপাদন। কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিট থেকে বর্তমানে ২০৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।

কেন্দ্রের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, রুলকার্ভ (পানির পরিমাপ) অনুযায়ী হ্রদে পানি থাকার কথা ৯১ দশমিক ৮৮ ফুট মিনস সি লেভেল (এমএসএল)। কিন্তু হ্রদে পানি আছে ৯৮ দশমিক ২২ ফুট এমএসএল। কাপ্তাই হ্রদে পানি ধারণ ক্ষমতা ১০৯ ফুট এমএসএল।

বিজ্ঞাপন

গত ৬ আগস্ট বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে ১৩৫ মেগাওয়াট উৎপাদন করা হয়েছিল। বর্তমানে ৭১ মেগাওয়াট উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে। তবে আপাতত সর্বোচ্চ উৎপাদনে যাওয়ার পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের দায়িত্বশীল একটি সূত্র।

কাগজে-কলমে ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার কথা বলা হলেও ২৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে ছয় দশক আগে প্রতিষ্ঠিত দেশের একমাত্র এই জলবিদ্যুৎকেন্দ্রটি। প্রতিষ্ঠার শুরুতে ৮০ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও পরবর্তীতে ধাপে ধাপে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে কয়েকগুণ।

জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের হিসাবে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বা প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ৩ টাকা ৪৬ পয়সা, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রতি ইউনিটের খরচ ৯ টাকা ১৭ ও ফার্নেস অয়েলের উৎপাদন খরচ ২২ টাকা ১০ পয়সা। আর দেশের একমাত্র জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ মাত্র ৩০-৪০ পয়সা (সব ইউনিট সচল রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়া সাপেক্ষে)। সে হিসাবে অনেক কম মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যাচ্ছে কেন্দ্রটি।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০২২ সালের নভেম্বরের দিকে দেশে জ্বালানি সংকটের কারণে জলবিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদনের দিকে নজর দেয় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। তখন কেন্দ্রের সব ইউনিট চালু রাখায় চলতি বছরের শুষ্ক মৌসুমে হ্রদের পানি কমে যায় রেকর্ড পরিমাণে।

পরবর্তীতে সময়ে দুই-একটি ইউনিটের বেশি চালু রাখতে পারেনি বিদ্যুৎকেন্দ্র। একটি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন নেমে গিয়েছিল ২৫ মেগাওয়াটে। যে কারণে কাপ্তাই হ্রদ থেকে কম পানি নিগর্মণ হওয়ার প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম শহরের পানি সরবরাহ ব্যবস্থায়। কর্ণফুলী নদীর পানির চাপ কম থাকায় জোয়ারের পানি আসায় লোনা পানি যোগ হয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি পরিশোধনে। এছাড়া কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের ১০ দিন আগেই বছর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল হ্রদে মাছ আহরণ। তবে গেল বছরের শেষার্ধের পর চলতি মাসেই আবারও সবক’টি ইউনিট নিয়ে বছরের সর্বোচ্চ উৎপাদনে গেছে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি।

বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এটিএম আব্দুজ্জাহেরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার সাড়া মেলেনি।

বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দায়িত্বশীল একটি সূত্র নিশ্চিত করে জানিয়েছে, সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন বেড়েছে ৭০ থেকে ১০০ মেগাওয়াট। চলতি বছরের শুরু থেকে কাপ্তাই হ্রদে পানিস্বল্পতার কারণে উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও আশানুরূপভাবে বাড়ানো যায়নি। তবে কয়েকদিনে রাঙামাটিতে রেকর্ড বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলের পানিতে কাপ্তাই হ্রদের পানির ব্যাপকহারে বৃদ্ধি উৎপাদন বাড়িয়েছে কর্তৃপক্ষ।

প্রসঙ্গত, ষাটের দশকে জলবিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দেওয়ার কারণে গড়ে ওঠে বিস্তীর্ণ কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদ। পরবর্তী সময়ে ১৯৬২ সালে রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দেওয়া অংশে চালু করা হয় দেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎকেন্দ্র কর্ণফুলী পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র।

কৃত্রিমভাবে হ্রদের পানি সংরক্ষণ করেই করা হয় উৎপাদন। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কাপ্তাই হ্রদে বাঁধ দেওয়া অংশে ১২ দশমিক ২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১১ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থর ১৬টি জলকপাট রয়েছে। এগুলো দিয়ে একসঙ্গে প্রতি সেকেন্ডে ৫ লাখ ২৫ হাজার কিউসেক পানি নিগর্মণ করতে পারে। হ্রদে ১০৯ এমএসএলের অধিক পানি পূর্ণ হলে জলকপাট দিয়ে পানি নিগর্মণ করা হয়। তবে বিগত তিন বছর ধরে মৌসুমি জলবায়ুর পরিবর্তনে কম বৃষ্টিপাত ও পানির উৎস কমে যাওয়ায় হ্রদের পানি আশানুরূপ না বাড়লেও বর্তমানে রুলকার্ভের চেয়ে বাড়তি পানি রয়েছে কাপ্তাই হ্রদে।

সারাবাংলা/এনইউ

উৎপাদন কাপ্তাই হ্রদ টানা বর্ষণ পানি বিদ্যুৎ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর