উদ্বোধনের ৬ মাসেও চালু হয়নি বিশেষায়িত শিশু হাসপাতাল
১১ আগস্ট ২০২৩ ১৭:৩৩
রংপুর: উদ্বোধনের ৬ মাসেও চালু হয়নি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতাধীন একশ শয্যার রংপুর শিশু হাসপাতাল। কোনো ধরনের কার্যকর ব্যবস্থা না নিয়েই বিশেষায়িত এই হাসপাতালটি চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। উদ্বোধনের এতদিন পেরিয়ে গেলেও চালু না হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে জনমনে তাই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন রংপুরবাসী।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও সিভিল সার্জন বলছেন, এখনও জনবল নিয়োগ ও যন্ত্রপাতি কেনাকাটা প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় চালু করা যাচ্ছে না সেবা কার্যক্রম। তবে হাসপাতালটি চালুর জন্য বরাদ্দের চাহিদাপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্প হিসেবে নগরীর সদর হাসপাতালের প্রায় ২ একর জমির ওপর অত্যাধুনিক শিশু হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর। যার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় সাড়ে ৩১ কোটি টাকা।
২০২০ সালের ৮ মার্চ হাসপাতাল ভবনটি জেলা সিভিল সার্জনের কাছে হস্তান্তর করা করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু হঠাৎ দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারি সামাল দিতে হাসপাতালটি ব্যবহার হয় করোনা ডেডিকেটেট হাসপাতাল হিসেবে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক হাসপাতালটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও শিশু হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় হতাশ নগরবাসী। হাসপাতালটি চালু হলে রংপুর মেডিকেলের ওপর থেকে চাপ কমত।
নগরীর আশরতপুর এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘রংপুর মেডিকেলে শিশু ওয়ার্ডে শয্যা কম তাই আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বিশেষায়িত একটি শিশু হাসপাতালের। এই পরিপ্রেক্ষিতেই সরকার একটি হাসপাতাল তৈরি করে দেয়। ঢাকঢোল পিটিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করলেও এখন পর্যন্ত হাসপাতালটি চালু হল না যা দুঃখজনক। কিন্তু শিশু হাসপাতালটা চালু করা খুব জরুরি এজন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান রিপন বলেন, ‘রংপুর মেডিকেলের শিশু ওয়ার্ডে যে কয়টি বেড আছে সেটি পর্যাপ্ত নয়। প্রতি বেডে দুইজন-তিনজন করে চিকিৎসা নিচ্ছেন খুব কষ্ট করে। এই পরিস্থিতিতে রংপুর শিশু হাসপাতালটি চালু হলে রংপুর মেডিকেলে যেমন চাপ কমবে, শিশুদের জন্য বিশেষায়িত এই হাসপাতালে শিশুরা ভালো চিকিৎসা পাবে।’
তবে সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর কবীর বলছেন, প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ ও যন্ত্রপাতি কেনাকাটা না হওয়ায় হাসপাতালটি চালু করা যাচ্ছে না। হাসপাতালটি চালু করতে প্রশাসনিক অনুমোদনসহ প্রয়োজনীয় চাহিদাপত্র স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও জনবল পাওয়া গেলেই চালু করা হবে।
এ বিষয়ে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. এ বি এম আবু হানিফ বলেন, ‘হাসপাতালটি চালুর জন্য বরাদ্দের চাহিদাপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। দাফতরিক কাজ চলছে। আশা করছি দ্রুতই এটি চালু করা সম্ভব হবে।’
জানা গেছে, তিনতলা বিশিষ্ট মূল হাসপাতাল ভবনে প্রতি তলায় ২০ হাজার ৮৮২ বর্গফুট আয়তনসহ মোট ৬২ হাজার ৮৪৬ বর্গফুট আয়তনের হাসপাতালের প্রথম তলায় জরুরি ও বহির্বিভাগ, চিকিৎসকদের চেম্বার ও প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি রয়েছে। দ্বিতীয় তলায় অপারেশন থিয়েটার ও বার্ন ইউনিট এবং তৃতীয় তলায় শিশু ওয়ার্ড ও কেবিনের ব্যবস্থা রয়েছে। চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আলাদা আলাদা ভবন রয়েছে। এছাড়া রয়েছে শিশুদের জন্য রাইড জোন, বিদ্যুতের সাবস্টেশনসহ বিশেষায়িত হাসপাতালের সুযোগ-সুবিধা।
সারাবাংলা/একে