‘বাংলাদেশের ভোট ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে’
১১ আগস্ট ২০২৩ ২১:৩০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বাংলাদেশের ভোট ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে বলে মন্তব্য এসেছে চট্টগ্রামের একটি সমাবেশ থেকে।
শুক্রবার (১১ আগস্ট) বিকেলে নগরীর সিনেমা প্যালেস মোড়ে সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), চট্টগ্রাম জেলার উদ্যেগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এই মন্তব্য করেন।
নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তন করে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন করার দাবি জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা সিপিবির সভাপতি অশোক সাহা বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনে আমরা বেশকিছু কেন্দ্র ঘুরেছি। সেখানে কতগুলো ছোট ছোট ছেলে, ১৮ কি ২০ বছর বয়স হবে। তারা ভোটারদের বলছে আপনার ভোট হয়ে গেছে আপনি বাড়ি চলে যান।’
‘আগামীতেও যে নির্বাচন হবে সেখানেও এটা হবে। কারণ আমাদের দেশে এখন যারা নির্বাচনে দাঁড়ায় তারা কোটি কোটি টাকা পকেটে নিয়ে নির্বাচনে দাঁড়ায়। এই টাকা দিয়ে তারা গুণ্ডা কেনে, দস্যু কেনে, ডাকাত কেনে। এদের কেন্দ্রে দাঁড় করায় ভোট ডাকাতি করার জন্য।’
‘বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা যদি ভালো করতে হয় তাহলে ভিন্ন নিয়মে নির্বাচন করতে চাই। সে নির্বাচন হলো সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন। সেটা কিরকম। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল তার প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে দাঁড়াবে। প্রার্থীর নাম জনগণ জানবে না। কোতোয়ালি থানায় কে প্রার্থী সেটা জনগণ জানবে না। জনগণ জানবে প্রতীকের নাম। সেটা নৌকা, কাস্তে বা ধানের শীষ। অর্থাৎ যার যে প্রতীকে ভালো লাগে সে প্রতীকে ভোট দেবে।’
‘যেই প্রতীক যত ভোট পাবে সেই ভোটের হিসেব করে বলবে আপনি এত ভোট পেয়েছেন এমপি পাবেন ৪০ জন, আপনি এত ভোট পেয়েছেন এমপি পাবেন ৩০ জন। এবার দল ঠিক করবে তার ৪০ জন এমপি কে হবে। তখন জনগণ ভোটের আগে আর প্রার্থী দেখবেনা।’
‘দেখবে দল ও মার্কা। এতে গুণ্ডামি কমবে, বদমায়শি কমবে। ভোটে যে কালো টাকার আদান প্রদান সেটাও কমবে। পৃথিবীর অনেক ভদ্রলোকের দেশে এরকম নির্বাচন হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে কোনোদিন ভালো নির্বাচন হয়নি। ভালো নির্বাচন আর হবে না। আমাদের দেশের নির্বাচনে জাল ভোট হয়, ভোটের সময় গুণ্ডামি হয়, রাতের আঁধারে ভোট চুরি হয়। এগুলো হতে হতে মানুষ আর ভোট দিতে যায় না। বাংলাদেশে ভোট ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে।’
চট্টগ্রাম জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘চারমাস পরে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হয়ে যাবে। কি পদ্ধতিতে কিভাবে নির্বাচন হবে…২০১৪ সালের মতো নাকি ২০১৮ সালের মতো এটা নিয়ে আমাদের দেশে তোড়জোড় চলছে।’
‘প্রতিদিন কেউ না কেউ বিদেশ থেকে আসছেন। তারা কখনও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন বা কখনও পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আবার কখনও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন। তারা আমাদের ছবক দিতে চায়।’
‘দুঃখজনক বিষয়। লজ্জার বিষয় আমাদের। আমরা স্বাধীন হয়েছি ৫৩ বছর আগে। এরকম পর্যায়েও একটি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গণতন্ত্রকে দাঁড় করাতে পারিনি। কোনো ব্যবস্থায় নির্বাচন হবে সেটা আমরা দাঁড় করাতে পারিনি। একটি নির্দলীয় ও তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়া দরকার। যাতে দেশের সব মানুষ তার ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারে।’
সিপিবি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি অশোক সাহা’র সভাপতিত্বে ও সহ-সাধারণ সম্পাদক নুরুচ্ছাফা ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মৃণাল চৌধুরী, চট্টগ্রাম জেলার সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য উত্তম চৌধুরী, সদস্য প্রদীপ ভট্টাচার্য, রেখা চৌধুরী ও জামাল উদ্দিন।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে চেরাগী মোড়ে এসে শেষ হয়।
সারাবাংলা/আইসি/এনএস