রাঙ্গামাটিতে দুর্ভোগ কমেনি, কৃষিতে ক্ষতি বেশি বান্দরবানে
১১ আগস্ট ২০২৩ ২৩:২৩
রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে গতকাল বৃহস্পতিবার এক দিনে পানিতে ডুবে চার শিশুর মৃত্যুসহ জেলায় বন্যা পরিস্থিতিতে এ পর্যন্ত ৬ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে প্রশাসন। বন্যায় রাঙ্গামাটির দশ উপজেলার মধ্যে বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, বিলাইছড়ি ও জুরাছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বসবাস করা মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। গত বুধবার থেকে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা কেটে গেছে। তবে বিলাইছড়ি ও জুরাছড়ি উপজেলার সবগুলো ইউনিয়নের ঢলের পানি নেমে গেলেও বাঘাইছড়ি এবং বরকলের বিভিন্ন এলাকা এখনও প্লাবিত রয়েছে।
বিলাইছড়ি ও জুরাছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘বন্যার কারণে বিলাইছড়ি ও জুরাছড়ি উপজেলা সবক’টি ইউনিয়নই প্লাবিত হয়েছিল। বর্তমানে দুই উপজেলার সব ইউনিয়নের পানি নেমেছে। হ্রদে পানি স্বাভাবিক থাকলেও বিধ্বস্ত, ক্ষতচিহ্ন ভেসে উঠেছে। বন্যায় মানুষের ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ায় দুর্ভোগ কমেনি।’
বরকল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নাজমা বিনতে আমিন বলেন, ‘বরকল উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা এখনো প্লাবিত রয়েছে। এরমধ্যে আইমাছড়া, ভূষণছড়া ও বড় হরিনা ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা এখনও প্লাবিত।’
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুমানা আক্তার বলেন, বাঘাইছড়ি পৌরসভা, বাঘাইছড়ি ইউনিয়ন, আমতলী ও বঙ্গলতলি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত রয়েছে। অনেক মানুষ এখনো ঘরে ফিরতে পারেনি। উপজেলার ২৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো হাজার খানেক মানুষ অবস্থান করছেন।’
রাঙ্গামাটি জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ডিপিএইচই) নির্বাহী প্রকৌশলী পরাগ বড়ুয়া জানান, ‘রাঙ্গামাটির বরকল, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি ও বাঘাইছড়ি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষই বন্যার কারণে সুপেয় পানির সংকটে পড়েছেন। আমরা যে এলাকার খবর পাচ্ছি, সেখানেই পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, জেরিক্যান ও হাইজিন কিট সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। তবে নির্দিষ্টভাবে কী পরিমাণ মানুষ সুপেয় পানির সংকটে আছেন; এর প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয়ের কাজ চলমান আছে।’
কৃষিতে বেশি ক্ষতি বান্দরবানে: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙ্গামাটি অঞ্চলের তথ্যমতে, গত ৪ আগস্ট থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত তিন পার্বত্য জেলায় ২৬টি উপজেলার মধ্যে ২১টি উপজেলার ফসলি জমি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলায় বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বান্দরবান জেলায়। তবে বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির সব উপজেলা বন্যায় আক্রান্ত হলেও খাগড়াছড়ির ৯ উপজেলার চারটি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
ডিএই’র হিসাবে বান্দরবান জেলায় আউশ এক হাজার ৬৮৪, আমন আবাদ ২ হাজার ৬৮৭, গ্রীষ্মকালীন সবজি ২ হাজার ১৪৫, কলা ও পেঁপে ১ হাজার ৪৮৭, আমন বীজতলা ২৫০ হেক্টর জমিসহ মোট ৮ হাজার ২৫৩ হেক্টর ফসলি জমির ক্ষতি হয়েছে। রাঙ্গামাটি জেলায় আউশ এক হাজার ৫২১, আমন ১ হাজার ৬৯০, গ্রীষ্মকালীন সবজী ৭৩৮, আদা ২৪ এবং হলুদ ২৩ হেক্টর জমির ফসলসহ মোট ৩ হাজার ৯৯৬ হেক্টর জমি ক্ষতি হয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলার আউশ ধান ১৪৩, আমন বীজতলা ৫৩, আমন আবাদ এক হাজার তিন এবং গ্রীষ্মকালীন সবজির ক্ষতি হয়েছে ৯০ হেক্টরসহ মোট ১ হাজার ৩৪৪ হেক্টর জমির ফসল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) রাঙ্গামাটি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক তপন কুমার পাল জানান, বন্যা পরিস্থিতির কারণে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলা থেকে বান্দরবান জেলায় বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
সারাবাংলা/একে