‘জাহাজ বিল্ডিংয়ে’ জঙ্গি হামলা, ৭ বছরেও শেষ হয়নি বিচার
১২ আগস্ট ২০২৩ ১১:৪৪
ঢাকা: ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কে ‘জাহাজ বিল্ডিংয়ে’ জঙ্গি আস্তানায় ভোরে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এক ঘণ্টার ওই অভিযানে ৯ জঙ্গি নিহত ও একজন আহত হন। ওই ঘটনার দুদিন পর মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. শাহ জালাল আলম সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। তবে এখন পর্যন্ত মামলাটির বিচারকার্য শুরু হয়নি। অতি দ্রুত মামলার বিচার শুরু হবে, চার্জগঠন করে মামলাটির বিচারকার্য দ্রুত শেষ করার কথা জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।
বর্তমানে মামলাটি সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে অধিকতর চার্জশুনানির জন্য রয়েছে। ২০২০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মামলাটির চার্জশুনানি শেষে ২৩ মার্চ আদেশের জন্য রাখেন আদালত। এরপর বিভিন্ন কারণে আর চার্জশুনানি হয়নি। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর এ মামলার এক আসামির মৃত্যু প্রতিবেদন ও অধিকতর চার্জ শুনানির জন্য ধার্য রয়েছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বলেন, ‘২০১৯ সালের মে মাসে মামলাটি সন্ত্রাস বিরোধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। মামলাতে কোনো আসামি পলাতক থাকলে বিচারকার্য শুরু করতে একটু সময় লেগে যায়। মামলাটিতে একজন আসামি পলাতক রয়েছেন। এজন্য সময় লেগেছে। বিশেষ কিছু কারণেও মামলার বিচার এখনও শুরু হয়নি। অনেক সময় কারাগার থেকে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয় না। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর মামলাটির এক আসামির মৃত্যু সংক্রান্ত প্রতিবেদন ও চার্জ শুনানির জন্য আছে। মৃত্যু প্রতিবেদন আসলে এ মামলার চার্জ গঠন হবে। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাক্ষীদের হাজির করে দ্রুত এই মামলাটির বিচার শেষ করার চেষ্টা করব।’
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, ‘বর্তমানে মামলাটি অধিকতর চার্জশুনানির জন্য রয়েছে। এই মামলায় কিছু গ্যাপ রয়েছে। মামলার শুনানিতে আমরা সেগুলো তুলে ধরব। এরপর যদি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন হয়ে যায়, তাহলে ট্রায়ালে গিয়ে আসামিদের নির্দোষ প্রমাণ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাব।’
আদালত সূত্র বলছে, গত বছরের ৩১ অক্টোবর এ মামলার আসামি মুফতি মাওলানা আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর মারা গেছেন বলে আদালতকে জানানো হয়। এরপর আদালত এ মামলায় মৃত্যু প্রতিবেদন ও অধিকতর চার্জ শুনানির জন্য ধার্য করেন। পরবর্তীতে ৫টি ধার্য তারিখ পার হলেও মৃত্যু সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেনি পুলিশ। এতেই এই মামলার চার্জ শুনানিও আটকে গেছে।
মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন— রাকিকুল হাসান রিগ্যান, সালাহ্ উদ্দিন কামরান, আব্দুর রউফ প্রধান, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, শরীফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ওরফে সোলায়মান, মামুনুর রশিদ রিপন ওরফে মামুন, আজাদুল কবিরাজ ওরফে হার্টবিট, মুফতি মাওলানা আবুল কাশেম ওরফে বড় হুজুর, আব্দুস সবুর খান হাসান ওরফে কুলমেন ও হাদিসুর রহমান সাগর। আসামিদের মধ্যে আজাদুল কবিরাজ পলাতক রয়েছেন। আব্দুর রউফ জামিনে আছেন। আর আসামি আবুল কাশেম মারা গেছেন।
২০১৯ সালের ১৮ জুলাই কল্যাণপুর জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের মামলায় সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক ১০ জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। ওইদিন সঙ্গে আজাদুল কবিরাজ নামের পলাতক এক আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন আদালত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের তদন্ত সংস্থা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন। এরপর গত ৯ মে মামলাটি বিচারের জন্য সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২৬ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুরের ৫ নম্বর সড়কে ‘জাহাজ বিল্ডিংয়ে’ জঙ্গি আস্তানায় রাতভর অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এক ঘণ্টার ওই অভিযানে ৯ জঙ্গি নিহত ও একজন আহত হন। তারা সবাই জেএমবি সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওই ঘটনার দুদিন পর মিরপুর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. শাহ জালাল আলম সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ১০ জনকে আসামি করা হয়।
সারাবাংলা/এআই/এনএস
কল্যাণপুর কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানা জঙ্গি হামলা জাহাজ বিল্ডিং