তবে কি আওয়ামী লীগে যাচ্ছেন রাঙ্গাঁ?
১২ আগস্ট ২০২৩ ১৮:২৫
রংপুর: জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত দলটির সাবেক মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে। আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনের আগে তিনি ক্ষমতাসীন দলটিতে যোগ দিতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সব পদ-পদবি থেকে মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ অব্যাহতি পাওয়ার পর থেকেই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। যা গত ২ আগস্ট আওয়ামী লীগের বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে স্থানীয় এমপি হিসেবে রাঙ্গাঁর ছাপানো ব্যানার-পোস্টার সেই গুঞ্জনকে পোক্ত করেছে। তবে রাঙ্গার দাবি, আওয়ামী লীগ থেকে এমন কোনো প্রস্তাব তিনি পাননি। এমনকি দলটিতে যোগদানের গুঞ্জন সত্যি নয়।
এদিকে, সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, রংপুরে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যানার-ফেস্টুন লাগায় রংপুর-১ আসনের জাতীয় পার্টির এমপি ও সংসদে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর কর্মী-সমর্থকরা। যা এখনো নগরীর বিভিন্ন স্থানে সাঁটানো আছে। আর এসব ফেস্টুন নিয়ে রংপুরে এখনো চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।
দেখা গেছে, ফেস্টুনের বামপাশে জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ও জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের ছবি এবং ডানপাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বড় ছবি। আর নিচে মসিউর রহমান রাঙ্গাঁর একটি বড় ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। পোস্টারে লেখা রয়েছে, ‘অবহেলিত রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনকে মডেল ও আধুনিক আসনে রূপান্তরিত করতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখায় রংপুরের পুত্রবধূ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রংপুর-১ আসনবাসীর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।’ পোস্টারে মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ নিজেকে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
জাতীয় নির্বাচনের আগে আকস্মিকভাবে রাঙ্গাঁর এভাবে শুভেচ্ছা জানানোর পেছনে আওয়ামী লীগে যোগদানের বিষয় থাকতে পারে ধারণা করছেন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। তবে নাম প্রকাশ করে কেউ রাঙ্গাঁর পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলতে চান না কেউ। জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাঙ্গাঁ আওয়ামী লীগে যোগ দেবেন বলে মনে হচ্ছে। তারই আলামত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়ে ব্যানার-ফেস্টুন লাগানো।’ রাঙ্গাঁ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে আগামী নির্বাচনে রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসন থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে মনে করেন তিনি।
অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির জেলা ও মহানগর কমিটির কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বলেন, রাঙ্গাঁকে দল বহিষ্কার করা হয়েছে। তাকে যে সম্মান দিয়ে দলের মহাসচিব করা হয়েছিল সেই সম্মান তিনি রক্ষা করতে পারেননি। সম্প্রতি সব পদ-পদবি থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। দলের বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো নয়। এ অবস্থায় নির্বাচনের আগে বিকল্প খুঁজতে আওয়ামী লীগের যোগ দেওয়ার জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন রাঙ্গাঁ।
তারা আরও বলেন, এখন রাঙ্গাঁ যদি আওয়ামী লীগের যোগ দেন তাহলে তিনি জাতীয় পার্টির সঙ্গে বেইমানি করবেন। কারণ, তার আজকের এই অবস্থান জাতীয় পার্টি তৈরি করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগে যোগ দিলে অনেক কর্মী তার বিপক্ষে চলে যাবে।
রাঙ্গাঁ বহিষ্কার হওয়ার আগ পর্যন্ত জাতীয় পার্টির জেলা কমিটির সভাপতি ছিলেন। আর সেই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আব্দুর রাজ্জাক। রাঙ্গাঁকে বহিষ্কারের পর সেই কমিটি ভেঙ্গে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। বর্তমানে এই আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্বে আছেন আব্দুর রাজ্জাক। এক সময় রাঙ্গাঁর সঙ্গে তার বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু বর্তমানে দু’জনের মধ্যে বিরোধ চলছে। এ ছাড়া, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সঙ্গেও রাঙ্গাঁর সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে রংপুরেও বেশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন তিনি। তাই আগামী নির্বাচনে রাঙ্গাঁ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে প্রার্থিতা চাইতে পারেন বলে জোর গুঞ্জন চলছে। আর প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে শুভেচ্ছা জানিয়ে টাঙানো ব্যানার-ফেস্টুন যোগদানের সেই গুঞ্জনকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে।
জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব আবদুর রাজ্জাক সারাবাংলাকে বলেন, ‘পার্টিতে রাঙ্গাঁর কোনো পদ নেই। তবে তিনি স্থানীয় এমপি ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপের দায়িত্বেও আছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রংপুর আগমন উপলক্ষে তিনি এলাকার এমপি হিসেবে শুভেচ্ছা–অভিনন্দন জানাতেই পারেন।’ তবে রাঙ্গাঁর আওয়ামী লীগে যোগদানের গুঞ্জন বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
এ দিকে, রাঙ্গাঁর আওয়ামী লীগে যোগদানের গুঞ্জন প্রসঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দলীয় ফোরামে রাঙ্গাঁকে নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’ তবে আওয়ামী লীগের এই নেতা ছাড়া জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কোনো দায়িত্বশীল নেতাই এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমার নির্বাচনি এলাকা (রংপুর-১ আসন) গঙ্গাচড়ায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। সেখান থেকে মঙ্গা চিরদিনের জন্য বিতাড়িত করেছেন। সেজন্য গঙ্গাচড়াবাসী তার প্রতি কৃতজ্ঞ। এ কারণে তাকে স্বাগত জানিয়ে ব্যানার-ফেস্টুন টাঙিয়েছি। এর বাইরে অন্য কিছু নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যোগ দেওয়ার কোনো প্রস্তাব আমাকে দেওয়া হয়নি। আমি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’ আপনি তো জাপা থেকে বহিষ্কৃত, তাহলে আগামী নির্বাচনে কোন দল থেকে নির্বাচন করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ বলেন, ‘সেটা সময় বলে দেবে।’
সারাবাংলা/আরএইচএস/পিটিএম