২২ বছরে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যু, ডব্লিউএইচও’র উদ্বেগ ও পরামর্শ
১২ আগস্ট ২০২৩ ২১:৩৫
ঢাকা: চলতি বছর বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা ও মৃত্যুহার গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। অস্বাভাবিক এ বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এ জন্য মশার বংশবিস্তারে দেশের অনুকূল পরিবেশকে দায়ী করেছে সংস্থাটি। শুক্রবার (১১ আগস্ট) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত ৬৯ হাজার ৪৮৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এ সংক্রান্ত মৃত্যু হয়েছে ৩২৭টি। যার মধ্যে ৬৩ শতাংশ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে জুলাইয়ে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুহার বেড়ে শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশে পৌঁছেছে, যা গত ৫ বছরের তুলনায় অনেক বেশি।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, যদিও বাংলাদেশে ডেঙ্গু মহামারি, কিন্তু বর্তমান ডেঙ্গুর বৃদ্ধি অস্বাভাবিক এবং আগের বছরগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। এই ঢেউ শুরু হয়েছিল জুনের শেষের দিকে। আগের বছরের তুলনায় এই বছর এখন পর্যন্ত মৃত্যুহার তুলনামূলকভাবে বেশি।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রাক-বর্ষা মৌসুমে এডিস মশার জরিপে দেখা যায় যে, মশার ঘনত্ব এবং সম্ভাব্য হটস্পটের সংখ্যা গত পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। উচ্চ তাপমাত্রা এবং উচ্চ আর্দ্রতা, অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের প্রেক্ষাপটে কারণে সারা বাংলাদেশে মশার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডব্লিউএইচও এর তথ্য মতে, গত পাঁচ বছরের মধ্যে চলতি বছর ২০২৩ সালের মে থেকে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর অস্বাভাবিক বিস্তার শুরু হয়েছে, যা এখনও অব্যাহত আছে। ২০০০ সাল থেকে রেকর্ড করা তথ্যানুযায়ী একই সময়ের তুলনায় চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ। বর্তমান পরিস্থিতিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে ফুল হাতার জামা পরার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটি বলছে, ডেঙ্গু মশার বিস্তার কমাতে যেন দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ডেঙ্গুর আধিক্য দেখা যাচ্ছে অস্বাভাবিক আকস্মিক বৃষ্টির কারণে। যার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উচ্চ তাপমাত্রা এবং উচ্চ আর্দ্রতা। এসব কারণে পুরো বাংলাদেশজুড়ে মশার বংশ বিস্তার বেড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের মূল্যায়নে বলেছে, বাংলাদেশ ডেঙ্গুর ‘উচ্চ’ ঝুঁকিতে রয়েছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেশি এবং ব্যাপক ভৌগলিক বিস্তৃতির কারণেই সংস্থাটি এমন মূল্যায়ন দিয়েছে। মশার বিস্তৃতি রোধে ডব্লিউএইচও সমন্বিত ভেক্টর ব্যবস্থাপনা (আইভিএম) গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। এ ছাড়া মানুষকে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছে তারা। যার মধ্যে রয়েছে মশার প্রজনন সহায়ক স্থানগুলো ধ্বংস করা।
এ ছাড়া সতর্কতা হিসেবে প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার হলেও ঘরের পানি জমিয়ে রাখার পাত্র বা ট্যাংক পরিষ্কার ও ঢেকে রাখা, মশারি ব্যবহার ও স্প্রে ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। অপরদিকে, ব্যক্তিগত পর্যায়ে সতর্কতার অংশ হিসেবে ফুলহাতা শার্ট-প্যান্ট পরা, মশার কয়েল ও স্প্রে ব্যবহার, দরজা-জানালায় মশা প্রতিরোধী জাল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে চলতি বছরের ১২ আগস্ট পর্যন্ত সরকারি তথ্যমতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৩৮৭ জন। আর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৮২ হাজার ৫০৬ জন।
সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম