‘ইসলাম ধর্মের মান-ইজ্জত রক্ষা করবেন’
১৩ আগস্ট ২০২৩ ১৫:১৭
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ইসলাম ধর্মের নামে বদনাম দেওয়া হয়, এই বদনামের হাত থেকে ইসলাম ধর্মকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য আপনাদের সকলের কাছে অনুরোধ থাকবে, আমাদের ধর্মের মান-ইজ্জতটা রক্ষা করবেন, কেউ যেন বিপথে না যায়।’
রোবববার (১৩ আগস্ট) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা-২০২৩’র বিজয়ী হাফেজদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
বাংলাদেশেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের কোরআন প্রতিযোগিতা আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আশা করি আজকে যারা পুরস্কার পেয়েছেন পবিত্র কোরআনের মর্মবাণী ধারণ করে নিজেদের আলোকিত করবেন। আমার খুব দুঃখ হয়, একটা সময় বেশি শুনতাম ইসলামিক টেরোরিস্ট। যখন যেখানে গিয়েছি প্রত্যেক জায়গায় আমি এটার প্রতিবাদ করেছি। ইসলাম শান্তির ধর্ম, আজকে এই ধর্ম সন্ত্রাসী বলে পরিচিত হবে এটা আমার কাছে গ্রহণযোগ্য না।’
তিনি বলেন, ‘মুষ্টিমেয় লোক এই ধর্মকে ব্যবহার করে জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়। জানি না তাদের কারা এই শিক্ষা দেয়? মানুষ হত্যা করলেই বেহেশতে যাওয়া যাবে? কোরআন শরীফে একথা কোথাও লেখা নাই বা নবী করিম (সা.) এটা বলেননি। বিদায় হজ্জের বাণীতেও তিনি বলে গেছেন, সব ধর্মের প্রতি সহনশীলতা দেখাতে। এটাই তো ইসলামের মর্মবাণী।’
‘আল্লাহর হুকুম ছাড়া গাছের পাতাও নড়ে না, তাহলে দেশে ভাল-মন্দ, ধর্ম-বিধর্ম যা আছে সবই আল্লাহর সৃষ্টি। কোনটা ভাল কোনটা মন্দ— সেটা দেখানোর জন্যই আল্লাহ এটা করেছেন। শেষ বিচার করবেন কে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। এই শেষ বিচারের দায়িত্ব আল্লাহ কাউকে দেয়নি বা নবী করিম (সা.) বলেননি। তাহলে নিরীহ মানুষকে হত্যা করে বেহেশতে কিভাবে যায়? আর যারা এ পর্যন্ত জঙ্গি কর্মকাণ্ড করে মানুষকে হত্যা করেছেন, বলেছেন তারা নাকি বেহেশতে যাবেন, কেউ কি বেহেশতে গেছেন? কেউ কি বলতে পারবেন, কেউ কি খবর দিয়েছে কোনোদিন তারা বেহেশতে সুখে আছেন?’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘নিরীহ মানুষ হত্যা করলে দোজখে যাবে, সেটাই বলা আছে। তাহলে কোমলমতি ছেলেদের মাথা খারাপ করে তাদের বিপথে চালানো এবং তাদের জীবনকে ধ্বংস করা, সুইসাইড অ্যাটাক করা, সুইসাইড অ্যাটাক করে মানুষ মারে। সুইসাইড করা তো ইসলাম ধর্মেই মহাপাপ, গুনাহের কাজ। সুইসাইড করলে তো কেউ বেহেশতে যাবে না। তাহলে আপনারাই বিবেচনা করেন, সুইসাইড করে বোম দিয়ে মানুষ মেরে কোন বেহেশতে যাচ্ছেন তারা?’
বিপথগামীদের সঠিক পথে ফেরানোর আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ইসলাম ধর্মের নামে যে বদনাম দেওয়া হয়, এই বদনামের হাত থেকে ইসলাম ধর্মকে রক্ষা করতে হবে। আমার সাধ্যমতো পৃথিবীর যেখানেই গেছি, যখনই কেউ ইসলামিক টেরোরিস্ট বলেছেন সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতিবাদ করেছি। টেরোরিস্ট সব ধর্মের লোকেই আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘টেরোরিস্ট তো টেরোরিস্টই, তাদের কোনো ধর্ম নাই। তাদের কোনো দেশ নাই। তাদের কোনো সীমানা নাই। এই টেরোরিজমই হচ্ছে তাদের ধর্ম। আমি নিজে এটার ভুক্তভোগী। একটা সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করার পর আমার জীবনের উপর থ্রেট গেছে, শত শত চিঠি পেয়েছিলাম। সেই চিঠিতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসীরা তার পক্ষ হয়ে চিঠি দিচ্ছেন এবং আমাকে থ্রেট করছে হত্যা করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শত শত চিঠি এসেছে। সেখানে খ্রিস্টান আছে, হিন্দু আছে, মুসলমান আছে, এমন কি বুদ্ধিস্ট পর্যন্ত। আমি অবাক হয়ে গেলাম। সেই দিন বুঝলাম তাদের আসলে কোনো ধর্ম নাই। এরা জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসী। এজন্য আপনাদের সকলের কাছে অনুরোধ থাকবে, আমাদের ধর্মের মান-ইজ্জতটা রক্ষা করবেন, কেউ যেন এই বিপথে না যায়। আপনাদের কাছে অনুরোধ, কুসংস্কার, জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস নির্মূল করতে আপনাদের সহযোগিতা চাই। আপনাদের ছেলে-মেয়ে যেন এই বিপথে না যায় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।’
‘বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণ হবে। এদেশে সব ধর্মের লোক আছে। যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। যেটা আমাদের নবীর (সা.) শিক্ষা। আমরা সেই শিক্ষা নিয়েই চলব।’ কেউ যেন ইসলাম ধর্মের বদনাম করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য আলেমদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। আজকে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে। এই মর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে বিশ্বের সঙ্গে চলতে চাই এবং আগামী দিনে উন্নত সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলা তথা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়াতে চাই।’
সারাবাংলা/এনআর/এনএস