১৬ বছর ধরে মেডিকেলের প্রশ্নফাঁস ব্যবসা!
১৩ আগস্ট ২০২৩ ১৯:৪৯
ঢাকা: কোচিং সেন্টারের আড়ালে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৭ চিকিৎসকসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এদের মধ্যে ৫ জন চিকিৎসক বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। চক্রটি ২০০১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে শত শত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্ন সরবরাহ করেছেন।
এর মাধ্যমে চক্রটি বিপুল পরিমাণ টাকা কামিয়েছে। এসব টাকা দিয়ে তারা দেশে বিলাসবহুল জীবনযাপনের পাশাপাশি বিদেশেও পাচার করেছেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন— ডা. ময়েজ উদ্দিন আহমেদ প্রধান (৫০), ডা. সোহেলী জামান (৪০), ডাক্তার মোহাম্মদ আবু রায়হান, ডা. জেডএম সালেহীন শোভন (৪৮), ডা. মো. জোবায়দুর রহমান জনি (৩৮), ডা. জিল্লুর হাসান রনি (৩৭), ডা. ইমরুল কায়েস হিমেল (৩২), জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া মুক্তার (৬৮), রওশন আলী হিমু (৪৫), আখতারুজ্জামান তুষার (৪৩), জহির উদ্দিন আহমেদ বাপ্পি (৪৫) ও আব্দুল কুদ্দুস সরকার (৬৩)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৯টি মোবাইল ফোন, ৪টি ল্যাপটপ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ব্যাংক কার্ড, ভর্তির এডমিট কার্ড নগদ দুই লাখ ১১ হাজার, থাইল্যান্ডের মুদ্রা ১৫ হাজার ১০০ বাথ উদ্ধার করা হয়েছে।
রোববার (১৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দফতরের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়ে সংস্থাটির প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী।
তিনি বলেন, পাবলিক পরীক্ষা এলেই প্রশ্নফাঁস চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই চক্র নানা কায়দায় প্রশ্নফাঁস করত। তারা শিক্ষাখাতের ক্যানসার হিসেবে বিবেচিত। এসব প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রকে নির্মূল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে সিআইডি। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে নিয়মিত প্রশ্নফাঁসকারী বিশাল এক সিন্ডিকেটের খোঁজ পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ।’
মিরপুর মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২০১৮ এর একটি মামলা তদন্ত করতে গিয়ে পাওয়া যায় এমন ঘটনা।
চক্রটির অন্তত ৮০ সদস্য প্রায় ১৬ বছর ধরে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে ফাঁস করা প্রশ্ন দিয়ে মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি করিয়ে শত কোটি টাকা আয় করেছেন বলে জানান তিনি।
সিআইডি প্রধান বলেন, ঢাকা, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের ১২ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডির সাইবার টিম। গ্রেফতারকৃত ১২ জনের মধ্যে ৭ জনই ডাক্তার। এদের প্রায় সবাই বিভিন্ন মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার, নয়তো প্রাইভেট পড়ানোর আড়ালে প্রশ্নফাঁস করতেন।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ৮ জন তাদের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। যাতে শতাধিক শিক্ষার্থীর নাম উঠে এসেছে, যারা প্রশ্ন পেয়ে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে। এরইমধ্যে অনেকে পাশ করে ডাক্তারও হয়ে গেছে। এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানান তিনি।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের দেওয়া বিপুল পরিমাণ ব্যাংকের চেক এবং এডমিট কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে সিআইডি প্রধান বলেন, ‘এগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এ ছাড়াও মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূঁইয়ার কাছ থেকে একটি গোপন ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে। যেখানে সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা চক্রের অন্যান্য সদস্যদের নাম রয়েছে। সেসব সদস্যদের ধরতে সিআইডির অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
তদন্তে উঠে এসেছে, ২০০১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে অন্তত ১০ বার এই চক্র মেডিকেলের প্রশ্নফাঁস করেছেন। এদের ব্যাংক একাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে, যেগুলো মানিলন্ডারিং মামলায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি জানান, সিআইডির হাতে গ্রেফতার ডাক্তার ময়েজ উদ্দিন প্রশ্নফাঁস চক্রের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড। মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে ফেইম নামের একটি কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে মেডিকেল প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়ান। গত ২০ বছর এভাবে শত শত শিক্ষার্থীকে ভর্তি করিয়েছেন।
ছাত্র শিবিরের সাবেক নেতা ময়েজ বর্তমানে জামায়াতের চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে দুটি মানিলন্ডারিং মামলা রয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ও সাবেক ছাত্রদলের রাজনীতি করা গ্রেফতার অন্য চিকিৎসকরা হলেন সালেহীন শোভন, জোবাইদুর রহমান, জিল্লুর হাসান রনি ও জহির উদ্দিন আহমেদ বাপ্পী। তারা কোচিং সেন্টারের আড়ালে প্রশ্ন ফাঁস করে আসছিলেন।
সারাবাংলা/একে
