ফেসবুকে ‘বিদায় রাজাকার’
১৪ আগস্ট ২০২৩ ২২:২৩
ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আমৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মারা গেছেন। তার মৃত্যুর খবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্বস্তি প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন স্বাধীনতার স্বপক্ষের মানুষ। তবে ভিন্ন চিত্রও রয়েছে। যদিও সেই সংখ্যা খুবই নগণ্য।
জামায়াত নেতার মৃত্যুতে স্বস্তি প্রকাশ করে শঙ্খনীল দেব নামের একজন লিখেছেন- ‘চান্দে পা রাখা প্রথম ব্যক্তি দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী মারা গেছেন। পৃথিবী একটু ভারমুক্ত হলো। বিদায় রাজাকার।’
মো. রাজন নামের একজন লিখেছেন, রাজাকার সাঈদীর মৃতুতে বাংলার আকাশের কালো মেঘ কেটে গেল। বিদায় রাজাকার।
সাঈদীর ছবি পোস্ট করে আরেকজন লিখেছেন, এই রাজাকারকে বাংলার মাটিতে কবর দেওয়া হবে ভাবতেই বুক ফেটে যাচ্ছে। ওকে পাকিস্তানেই পাঠিয়ে দেওয়া হোক।
মৃণাল কান্তি নামের একজন লিখেছেন, বিদায় রাজাকার। কবরে শুয়ে শুয়ে পাপের শাস্তি ভোগ করো।
হাসান আহমেদ লিখেছেন, যারা একজন মানবতাবিরোধী অপরাধি খুনি কে ‘কুরআনের পাখি’ বলছে, তারা ইসলাম অবমাননা করছে! আল্লাহর লানত পড়ুক এদের ওপর!
সাঈদীর মৃত্যুত স্বস্তি প্রকাশ করে আরেকজন লিখেছেন, ফাকিস্তান দিবসে মরলো দেইল্যা রাজাকার (পাইক্যা)…।আলহামদুলিল্লাহ…।
সাঈদীর মৃত্যুতে ফিরোজ ফরাজী নামের একজন লিখেছেন, একজন কিংবদন্তির বিদায়। ইসলামিক সিপাহ সালার বিদায়।
রিফাত আল মাহমুদ তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী, আল্লাহর তায়ালার ডাকে সাড়া দিয়ে চিরদিনের জন্য চলে গেলেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া লিল্লাহি রাজিউন)। আল্লাহ এই কুরআনের পাখিকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হিসেবে কবুল করুন। আমিন।
উল্লেখ্য, সোমবার (১৪ আগস্ট) রাত ৮টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল রোববারই (১৩ আগস্ট) গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বুকে ব্যথা অনুভব করলে সাঈদীকে কারা হাসপাতাল থেকে নেয়া হয় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে সেখান থেকে গতকাল বিএসএমএমইউয়ে এনে ভর্তি করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান সারাবাংলাকে বলেন, হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় (সোমবার) সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে নতুন করে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় তার। আমরা ৭টা ১০ মিনিটে তাকে লাইফ সাপোর্টে দেই। ৮টা ৪০ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।
ডা. মোস্তফা জামান আরও বলেন, তার ছেলেকে ডেকে আমরা ইনকিউবেশন টিউব খোলার অনুমতি চেয়েছি। তার অনুমতিতেই তা করা হয়েছে। উনার (দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী) দুই ছেলে এসেছেন হাসপাতালে। এখন আইনি প্রক্রিয়ায় তার মরদেহ হস্তান্তরের বাকি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।
২০১০ সালের ২৯ জুন রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে গ্রেফতারের পর থেকেই কারাগারে রয়েছেন জামায়াত ইসলামীর এই সাবেক নায়েবে আমির। হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, নির্যাতন ও ধর্মান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তাকে মৃত্যুদণ্ড সাজা দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ওই রায়ের পর দেশজুড়ে সহিংসতা চালায় জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা। এ ছাড়া বহু গাড়ি-দোকানপাট ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, হিন্দুদের মন্দির-ঘরবাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
সাঈদী আপিল করলে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে রায় দেয়। তাতে সাজা কমে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ আসে। ওই রায় রিভিউ আবেদন করলেও আগের সাজা বহাল রাখেন আদালত।
সারাবাংলা/এনইউ