প্রতিবাদী সেই ১৯ জন
১৫ আগস্ট ২০২৩ ০২:৪৪
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ইতিহাসের অন্যতম এক নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের সাক্ষী হলো পৃথিবী। মাত্র সাড়ে তিন বছর আগে যিনি জাতিকে এনে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার স্বাদ, স্বাধীন জমিনে সেই জাতির পিতাকেই নৃশংসভাবে হত্যা করা হলো সপরিবারে। নারকীয় সে হত্যাযজ্ঞে সবাই স্তব্ধ। সেই স্তব্ধতা ভেঙে দেশের যে কয়টি এলাকায় পিতাকে হারানোর প্রতিবাদ হয়েছে, তার অন্যতম কিশোরগঞ্জ। সুনির্দিষ্টভাবে বললে সেখানকার ১৯ সাহসী তরুণ সেদিন প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে সরব হয়েছিলেন।
প্রবীণ নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার সেই সকালটি দেশের বেশির ভাগ মানুষকেই স্তব্ধ করে দিয়েছিল, করেছিল কিংকর্তব্যবিমূঢ়। সেই বিমূঢ়তা কাটিয়ে খুব অল্প কিছু স্থানেই হয়েছিল প্রতিবাদ। কিশোরগঞ্জ তার অন্যতম, যেখানকার স্টেশন রোড থেকে বেরিয়েছিল ১৯ তরুণের সেই ঝটিকা মিছিল।
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরই একটি সংগঠন ‘আমরা একাত্তর’। সংগঠনটি খুঁজে বের করেছে সেই ১৯ জনের তালিকা। এই ১৯ জনের মধ্যে মাত্র ছয়জন গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা। বাকিরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও তাদের নাম গেজেটভুক্ত হয়নি।
‘আমরা একাত্তর’ সংগঠনটি জানাচ্ছে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেদিন মিছিল সংগঠিত করা সেই ১৯ জনের মধ্যে আট জনই পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। আর পঁচাত্তরের সেই ভয়াল স্মৃতি নিয়ে এখনো জীবিত আছেন ১১ জন।
মিছিলে অংশ নেয়া ১৯ জন
মিছিলে অংশ নেয়া ১৯ জনের মধ্যে গেজেটভুক্ত ছয় বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেন— হাবিবুর রহমান মুক্তু, ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, অশোক সরকার, সাইদুর রহমান খান পাঠান মানিক, গোলাম হায়দার চৌধুরী ও আমিরুল ইসলাম। তাদের মধ্যে শেষ দুজন পৃথিবীর মায়া কাটিয়েছেন।
বাকি ১৩ জনের মধ্যে মারা গেছেন সেকান্দর আলী ভূঁইয়া, নির্মলেন্স চক্রবর্তী, আকবর হোসেন খাঁন, সৈয়দ লিয়াকত আলী বুলবুল, আব্দুল আহাদ ও অরুন কুমার রাউত। আর এখনো বেঁচে আছেন অলক ভৌমিক, নুরুল হোসেন সবুজ, গোপাল দাস, এনামুল হক ইদ্রীস, পিজোষ কান্তি সরকার, রফিক উদদিন পনির ও হালিম দাদ খান।
‘আমরা একাত্তর’র আয়োজন
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সকালে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ মিছিল বের করেছিলেন যে ১৯ জন, তাদের শ্রদ্ধা জানাবে আমরা একাত্তর।
সংগঠনটির অন্যতম উদ্যোক্তা স্বাধীন বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) প্রথম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব জামান বলেন, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে সকাল সাড়ে ৯টায় আমরা তাদের সম্মাননা জানাব। তারা যে জায়গায় ঝটিকা মিছিলটি করেছিলেন, স্টেশন রোডের সেই জায়গাতেই তাদের সম্মাননা জানানো হবে।
মাহবুব জামান আরও জানান, পঁচাত্তরের মিছিলে অংশ নেয়া যে ১১ জন এখনো জীবিত আছেন, তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে তারা আশা করছেন। আর যারা মারা গেছেন, তাদের পরিবারের সদস্যরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেন।
সারাবাংলা/রমু/টিআর
১৫ আগস্ট আমরা একাত্তর কিশোরগঞ্জে মিছিল জাতীয় শোক দিবস প্রতিবাদ মিছিল