শ্রদ্ধা-ভালোবাসার জনস্রোত
১৫ আগস্ট ২০২৩ ১৭:২৫
ঢাকা: জাতীয় শোক দিবসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা ভালোবাসায় স্মরণ করছে বাঙালি জাতি। শোকের আবহে কালো ব্যাজ ধারণ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি ও তৎকালীন রাষ্ট্রপতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জনস্রোত ছিল ধানমন্ডি-৩২ নম্বর সড়কের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর অভিমুখে।
মঙ্গলবার ১৫ আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস। বাঙালির শোকের দিন। ১৯৭৫ সালের এদিনে ইতিহাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশের মানুষ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সদস্যদের হারায়।
১৫ আগস্ট কালরাতে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। বিদেশে থাকার বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই আত্মজা বর্তমান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা।
শ্রদ্ধা নিবেদনের শুরুতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল সাড়ে ৬টায় পুষ্পস্তবক দিয়ে এ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। প্রথমে রাষ্ট্রপতি এবং পরে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী। এরপর বঙ্গবন্ধুর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অংশ হিসেবে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে আর সশস্ত্র বাহিনীর সুসজ্জিত একটি চৌকস দল জাতির পিতাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
এরপর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলের নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনা দলের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জাতির পিতার প্রতিক্রিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে তার ছোট বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন।
বাঙালি জাতি আজ (মঙ্গলবার) গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দিবসটি পালন করছে। এ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভোরের সূর্য ওঠার আগেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, শিক্ষার্থীরা জাতির পিতাকে শ্রদ্ধা ভালোবাসায় স্মরণ করতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের সড়ক অভিমুখে অবস্থান নিতে শুরু করেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরাহ সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বেদনার আবহে কালো ব্যাজ ধারণ করে শ্রদ্ধা জানাতে আসতে শুরু করেন।
সকাল সাড়ে ছয়টায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী নিবেদনের পর সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ধানমন্ডির ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবনের গেট উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপর সারিবদ্ধ হয়ে সর্বস্তরের মানুষ জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা জানাতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে শ্রদ্ধা ভালবাসা জানাতে আসা মানুষের জনস্রোত বাড়তে শুরু করে।
অনেকে বেদনা ভরা দিনটিকে স্মৃতিবন্দী করতে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণের সামনে ধানমন্ডি লেকের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের আওতায় পরিচালিত বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সেই বাসভবন যেটি এখন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর সেটি ঘুরে দেখেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর রাতে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপথগামী সদস্য ধানমন্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেল এবং পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল।
পৃথিবীর এ জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত ও তার ছেলে আরিফ ও সুকান্তবাবু, মেয়ে বেবি, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তার গর্ভবতী স্ত্রী আরজু মণি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।
জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করার পর জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের বিচার আবারও শুরু হয়। সে বিচারের ধারাবাহিকতায় এরইমধ্যে খুনিদের কয়েকজনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এখনও কয়েকজন বিদেশে পলাতক রয়েছেন। সাজাপ্রাপ্ত পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার কূটনৈতিক পর্যায়ে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
সারাবাংলা/এনআর/একে