পান্থপথের ওলিও হোটেলে বিস্ফোরণের ৬ বছর: এখনও শেষ হয়নি বিচার
১৫ আগস্ট ২০২৩ ১৮:২২
ঢাকা: ২০১৭ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের আগে ঢাকার পান্থপথের ওলিও হোটেলে বিস্ফোরণের ৬ বছর পার হলেও এখনো শেষ হয়নি বিচারকার্য। কবে নাগাদ বিচার শেষ হবে তাও বলছে পারছে না সংশ্লিষ্টরা। তবে রাষ্টপক্ষ আশা করছেন, সাক্ষীরা যদি নিয়মিত আদালতে আসেন তাহলে মামলার বিচার দ্রুত শেষ হবে।
ছয় বছর আগে ১৫ আগস্টের এইদিনে কর্মসূচিতে হামলার পরিকল্পনা করতে পান্থপথের ওই হোটেলে আশ্রয় নেয় জঙ্গিরা। তবে তাদের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করতে দেয়নি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ঘটনার আগের রাতেই পুলিশের অভিযানের সব কিছু নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এক পর্যায়ে সকালে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এক জঙ্গি আত্মঘাতী হন। ওই ঘটনার পরের দিন পুলিশ বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলাটি বর্তমানে ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধ বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমানের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। চার্জগঠনের প্রায় আড়াই বছর পর গত ১৯ জুন মামলার বাদী কলাবাগান থানার এসআই সৈয়দ ইমরুল সাহেদ সাক্ষ্য দেন। এরপর আর কোনো সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। সর্বশেষ গত ১ আগস্ট মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিন কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হননি। এজন আদালত আগামী ১২ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।
সংশ্লিষ্ট টাইব্যুনালের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর গোলাম ছারোয়ান খান (জাকির) মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে সারাবাংলাকে জানান, ২০২১ সালে চার্জগঠন করে বিচারিক আদালত মামলাটির অনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরুর আদেশ দেন। কিন্তু ওই সালে করোনাভাইরাসের কারণে বিচারকার্য কিছুটা ব্যাহত ঘটেছে। পরিবেশ স্বাভাবিক হওয়ায় আবার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বর্তমানে মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। এক জনের সাক্ষ্য হয়েছে। সাক্ষীদের জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেও সাক্ষীদের আদালতে হাজির করা যাচ্ছে না। সাক্ষী হাজির করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সাক্ষী আসলে মামলার বিচার দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করবো।
আসামিদের পক্ষের আইনজীবী এম সাব্বির আহমেদ জানান, মামলার সাক্ষীরা ঠিকমত আসছে না। কিন্তু আমাদের তো নিয়মিত হাজিরা দিতে হচ্ছে। সাক্ষী না হওয়ায় আসামিরা হয়রানির স্বীকার হচ্ছে। আমরাও চাই সাক্ষীরা নিয়তির আসুক, দোষীদের সাজা হোক, আর নিরপরাধ ব্যক্তিরা খালাস পাক। তবে মামলাটিতে আসামিদের কিভাবে নির্দোষ প্রমাণ করা যায় সেই চেষ্টা করবো। তারা যেন ন্যায়বিচার পায় সে জন্য কাজ করবো। আশা করি আসামিরা ন্যায় বিচার পাবে।
২০১৯ সাকের ২৪ নভেম্বর জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচিতে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনায় সম্পৃক্ত ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।
মামলার চার্জশিটভূক্ত আসামিরা হলেন, আকরাম হোসেন খান নিলয় ওরফে স্লেড উইলসন, নাজমুল হাসান ওরফে মামুন, আবুল কাশেম ফকির ওরফে আবু মুসাব, আব্দুল্লাহ আইচান কবিরাজ ওরফে রফিক ,তারেক মোহাম্মদ ওরফে আদনান, কামরুল ইসলাম শাকিল ওরফে হারিকেন ওরফে রোবট ওরফে তানজিম, লুলু সরদার ওরফে সহিদ ওরফে মিস্ত্রি, তাজরীন খানম শুভ, সাদিয়া হোসনা লাকী , আবু তুরাব খান , তানভির ইয়াসিন করিম ওরফে হিটম্যান ওরফে জিন, হুমায়রা জাকির নাবিলা, নব মুসলিম আব্দুল্লাহ ও তাজুল ইসলাম ওরফে ছোটন ওরফে মোহাম্মদ ওরফে ফাহিম। এদের মধ্যে তাজুল ইসলাম কিশোর হওয়ায় তার বিরুদ্ধে শিশু আইনে পৃথক একটি চার্জশিট দাখিল করা হয়।
২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি আবু তুরাব খান ও লুলু সরদারকে অবাহতি দিয়ে ১১ আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করেন আদালত।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠান চলার মধ্যেই ৩০০ মিটার দূরে পান্থপথের হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে অভিযান চালায় কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও সোয়াট সদস্যরা। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলা ওই অভিযানের এক পর্যায়ে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনাল থেকে বিকট বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দ পাওয়া যায়। বিস্ফোরণে হোটেলের চতুর্থ তলার রাস্তার দিকের অংশের দেয়াল ও গ্রিল ধসে নিচে পড়ে।
হামলার পরিকল্পনা ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় ওই সময় কলাবাগান থানায় ১৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন কলাবাগান থানার এসআই সৈয়দ ইমরুল সায়েদ।
সারাবাংলা/এআই/এনইউ