প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শোক দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠিত
১৬ আগস্ট ২০২৩ ২১:৫১
ঢাকা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (১৬ আগস্ট) আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. আহসান কিবরিয়া সিদ্দিকি।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার দীর্ঘসময় কাজ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার ছিলেন মহৎ, উদার, অমায়িক মানবীয় গুণসম্পন্ন একজন মহান ব্যক্তিত্ব। মানুষকে তিনি অন্তরের গভীর থেকে সম্মান করতেন। খাওয়ার সময় হলে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে খেতেন, ব্যক্তিগত কর্মচারী ও কর্মকর্তারা খেয়েছেন কি না তার খবর নিতেন।’
বঙ্গবন্ধুর পরিবারের অন্য সদস্যদের কথা বলতে গিয়ে অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিলো— আচরণের সংযমতা, ভদ্রতা, বিনয়, স্নেহশীলতা, সাহসিকতা ও মানুষের প্রতি অসীম সম্মান।’
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি তুলে ধরেন। জাতির পিতা বাঙালি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার যে উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন, তা সে সময়ের তরুণ এই কর্মকর্তাকে কিভাবে সম্মোহিত করেছিল সেই ইতিহাসও তুলে ধরেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে আরও নিবেদিত হয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের মমতা, অ্যাপায়ন ও বঙ্গবন্ধু জেলে থাকা অবস্থায় দল পরিচালনার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমি শেখ কামালের বন্ধু ছিলাম। বঙ্গমাতা আমাদের মমতা নিয়ে আপ্যায়ন করতেন। খাওয়া শেষ না অবধি কাছে দাঁড়িয়ে থাকতেন।’ সরকার পরিচালনা বিশেষ করে শুন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগার নিয়ে বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালনায় জাতির পিতার দূরদর্শীতার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতীয়তাবাদের চেতনা দিয়ে গেছেন। তিনি খুনিদের প্রতি ধিক্কার জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে কেন আমরা বাঁচাতে পারলাম না? বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অপপ্রচার হয়েছে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য।’
মুখ্য সচিব বলেন, ‘জাতির পিতা রাজাকারদের মাফ করে দিয়েছেন তা সত্য নয়। বঙ্গবন্ধু ট্রাইবুনাল করে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও মানবতাবিরোধী কাজ যারা করেছিলেন তাদের বিচারের মুখোমুখি করেছেন।’ বঙ্গবন্ধু কিভাবে বাংলাদেশ নামে এই জাতিরাষ্ট্রর সৃষ্টি করেছেন সে বিষয়ে গবেষণালব্ধ তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন জাতির পিতা তার সাড়ে তিন বছর সরকার পরিচালনাকালে যেসকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করেছিলেন এবং বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করতে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন তা তুলে ধরেন। বিশেষ করে— অর্থনীতি, কৃষি, দারিদ্র্য বিমোচন, অবকাঠামো, শিক্ষা, নারী ও শিশু উন্নয়নের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স’র মহাপিরচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নিষ্ঠুরতায় রক্ষা পায়নি শিশু ও নারী। এ হত্যাকাণ্ডকে তিনি ‘কারবালা’র নিষ্ঠুরতার সঙ্গে তুলনা করেন। জাতির পিতা তার জীবন একটি স্বাধীন দেশ বিনির্মাণের জন্য ব্যয় করেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দেশ ও দেশের মানুষকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশী ভালোবাসতেন।’
আলোচনা শেষে ১৯৭৫ সালের ১৫ ঘাতকের নির্মম বুলেটে শাহাদাৎবরণকারী জাতির পিতা, বঙ্গমাতা ও পরিবারের সদস্যসহ নিহত সকল শহিদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। দোয়া অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল কবীর আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধিভুক্ত দফতর প্রধানরা, মহাপরিচালকরা এবং বিভিন্ন উইংয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এনআর/এনএস