Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কর্ণফুলীর ভাঙন ঠেকানোর উদ্যোগ, বাঁচবে ৭৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৭ আগস্ট ২০২৩ ০৮:৩৮

ঢাকা: চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার কর্ণফুলী নদীর ভাঙন রোধের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য উপজেলাধীন ‘কর্ণফুলী নদী এবং সংযুক্ত খালগুলোর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন রোধে তীর সংরক্ষণ কাজ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উপজেলার কঁধুরখীল, চরণদ্বীপ, শ্রীপুর খরণদ্বীপ, শাকপুরা, গোমদন্ডী ইউনিয়নে অবস্থিত জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও পাহাড় খরস্রোতা কর্ণফুলী, বোয়ালকালী, রাইখালী, ছন্দরীয় খাল, ভারাম্বা খাল ও নাজিরখালী খালের ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবন, বিভিন্ন এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার ও দোকান পাট, মসজিদ, মাদরাসা এবং পাকা রাস্তা ফসলি জমিসহ নানা স্থাপনা রক্ষা পবে। এগুলোর মূল্য প্রায় ৭৬ হাজার ৫৫০ কোটি টাকার সম্পদ।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বোয়লখালী উপজেলা ভৌগলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হিসাবে বিবেচিত। এই উপজেলার উপর দিয়ে বহমান কর্ণফুলী নদী দেশের দক্ষিণ-পূর্বঞ্চলে একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। খরস্রোতা কর্ণফুলী নদী ভারতের আসাম রাজ্যের লুসাই পাহাড় থেকে উৎপত্তি হয়ে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বরকল উপজেলা দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছে। তারপর এটি ভাটির দিকে পার্বত্য বনাঞ্চল পরিবেষ্টিত পাহাড়ের বিভিন্ন আঁকা-বাঁকা পথে প্রবাহিত হয়ে কাপ্তাই লেকের ওপর দিয়ে চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, বোয়ালখালী, আনোয়ারা উপজেলা ও চট্টগ্রাম শহরের মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। এছাড়া বোয়ালখালী খাল বান্দরবান পার্বত্য জেলার গহীন অরণ্য হতে উৎপাত্তি হয়ে দীর্ঘ আঁকা-বাঁকা পথে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কর্ণফুরী নদীতে পতিত হয়েছে। এছাড়াও ছন্দরীয়াখাল, রাইখালীখাল, ভারাম্বা খাল বান্দরবান পার্বত্য জেলার গহীন জঙ্গলে উৎপাত্তি হয়ে বোয়ালখালী উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কর্ণফুলী নদীতে মিলিত হয়েছে।

২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বোয়ালখালী উপজেলার বিভিন্ন অংশে নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন। এসময় নদী তীর ভাঙন কবলিত স্থানগুলো অন্তর্ভুক্ত করে প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়নের জন্য মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন করে হালনাগাদ তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সুপারিশমালাসহ সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এজন্য বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (পরিকল্পনা) মাধ্যমে ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি একটি সমীক্ষা সম্পাদন কমিটি গঠন করা হয়। এই সমীক্ষা কমিটি সরেজমিন পরিদর্শন ও তথ্য অনুসন্ধান করে ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর কারিগরি প্রতিবেদন দাখিল করে। পরবর্তীতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন এবং বোয়ালখালী উপজেলায় নদী ভাঙন রোধের জন্য নতুন একটি ডিপিপি প্রণয়ন করার জন্য সুপারিশ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্প প্রস্তাবটি তৈরি করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের মতামত: প্রস্তাবিত প্রকল্পটি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এবং তার পরবর্তী বছরগুলোর এমটিবিএফ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাস্তবায়নাধীন এবং অনুমোদিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেটে এবং এমটিবিএফ সিলিংয়ের মধ্যে একটি ফিজিকেল গ্যাপ রয়েছে বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। এ গ্যাপ পূরণ করে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় কিভাবে এ প্রকল্পের অর্থায়ন নিশ্চিত করবে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা প্রয়োজন। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ৭ দশমিক ২৬০ কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ কাজ বাবদ ১৫২ কোটি ৬১ লাখ টাকা (প্রতি কিলোমিটারে ২১ কোটি টাকা) টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। নদী তীর সংরক্ষণ কাজে অতিগুরুত্বপূর্ণ অংশটুকু রেখে এর পরিমাণ যৌক্তিক পর্যায়ে কমানো যেতে পারে।

আরও জানা যায়, প্রস্তাবিত প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটার প্রতিরক্ষা কাজের ব্যয় একই এলাকায় সমাপ্ত অপর ৩টি প্রকল্পের সঙ্গে তুলনামূলক পার্থক্য ডিপিপিতে সংযুক্ত করা যেতে পারে বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। এছাড়া নদী তীর সংরক্ষণ কাজের জন্য প্রস্তাবিত ডিজাইনে গত বছরের বন্যার পানির উচ্চতা, তীব্রতা, ভিলোসিটি ইত্যাদি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে, সেগুলোসহ কত বছর ফ্লাড পিরিয়ড ধরে তীর সংরক্ষণ কাজের নকশা প্রণয়ন করা হয়েছে, তার ভিত্তিসহ তীর সংরক্ষণ কাজের ডিজাইনের ওপর একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা ডিপিপিতে সংযোজন করা প্রয়োজন। প্রস্তাবিত প্রকল্প হতে মোটরযান, ক্যামেরা, স্মার্ট টিভি এবং আসবাবপত্র ক্রয় খাতগুলো বাদ দেওয়া যেতে পারে বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন।

সারাবাংলা/জেজে/এনএস

কর্ণফুলী নদী চট্টগ্রাম বোয়ালখালী উপজেলা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর