Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিরিজ বোমা হামলার দেড় যুগ: রাজশাহীতে ৪ মামলায় ৩১ জনের সাজা

মাহী ইলাহি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৭ আগস্ট ২০২৩ ০৯:১৯

রাজশাহী: আজ ১৭ আগস্ট। ২০০৫ সালের এই দিনে নগরীর ২৫টি স্থানে একসঙ্গে সিরিজ বোমা হামলা হয়েছিল। প্রকম্পিত হয়েছিল পুরো রাজশাহী নগরী। এ ঘটনায় নগরীর ৪টি থানায় পুলিশ বাদী হয়ে ৪টি মামলা করেছিল। মামলাগুলোতে মোট ৩১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে।

শুধু রাজশাহী শহরেই নয়, দেশের ৬৩ জেলার ৫ শতাধিক পয়েন্টে একযোগে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। দেড়যুগ পূর্তি করেছে এই সিরিজ বোমা হামলার ঘটনা। এ হামলায় দেশে ২ জনের প্রাণহানি ও ১০৪ জন আহত হয়েছিলেন।

জেএমবি আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছিল রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায়। ১৯৯৮ সাল থেকে গোপনে কার্যক্রম শুরু করলেও ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল আত্মপ্রকাশ করে জেএমবি। তৎকালীন বিএনপি জোট সরকারের আমলে জেএমবি সদস্যরা বাগমারা, নওগাঁর আত্রাই-রানীনগর, নাটোরের নলডাঙ্গায় সর্বহারা দমনের নামে প্রকাশ্যে গলা কেটে এবং নির্যাতন করে হত্যা করে ১৩ জন নিরীহ মানুষকে। পাশাপাশি জঙ্গি সংগঠনটির নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাই এবং তাদের সহযোগিদের নির্যাতনে পঙ্গুত্ব বরণ করেন অন্তত ২০ জন।

সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় ওই সময় নগরীর চারটি থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলাগুলো দায়ের করেছিল। মামলার সবগুলোতেই রায় হয়েছে।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বিজয় বসাক বলেন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশে যে মামলাগুলো করেছিল তার রায় হয়ে গেছে। আসামিরা বিভিন্ন মেয়াদের সাজাও ভোগ করছেন। চারটি মামলায় ৩১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। এছাড়া পাঁচজন খালাস পেয়েছেন।

আদালতের বিচার সম্পন্ন হওয়া মামলা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নগরীতে ওই বোমা বিস্ফোরণে কেউ হতাহত না হলেও নগরীজুড়ে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওইদিন সকাল ১১টা ৫ মিনিটে প্রথম বোমাটি বিস্ফোরিত হয় নগরী সাহেববাজার জিরোপয়েন্টের একটি বিদ্যুতের খুঁটির কাছে। এখানে একটি সাইকেলের উপর রাখা ব্যাগের মধ্যে দুটি বোমা রাখা হয়েছিল। এরপর আরডিএ মার্কেটের প্রধান গেট, রাজশাহী মহিলা কলেজের সামনে, নিউ মার্কেটের প্রধান ফটক, রেলগেট, রাজশাহী রেলস্টেশন চত্বর, তালাইমারী, কাজলা গেট, কাটাখালি, নওদাপাড়া, রুয়েট গেট, লক্ষীপুর পুলিশ ফাঁড়ির সামনে, রাজশাহী জেলা জজের গাড়ির নিচে, জেলা প্রশাসকের অফিসের নিচতলায়, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত চত্বরে- পাঁচটি স্থানে বোমাগুলো বিস্ফোরিত হয়। বাকি স্পটের বোমাগুলো বিস্ফোরিত হয়নি।

এ ঘটনার পর পুলিশ ও র‌্যাব ঘটনার বিস্ফোরণ স্থলগুলো ঘিরে ফেলে এবং আশেপাশে ব্যাপক তল্লাশি চালায়। পুলিশ বিভিন্ন স্পট থেকে অবিস্ফোরিত ১০টি তাজা বোমা উদ্ধার করে। বোমাগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পুলিশ কর্মকর্তারা এগুলোকে কম ক্ষমতা সম্পন্ন বলে দাবি করেছিল।

বোমা বিস্ফোরণে রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজের সরকারি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আদালত চত্বরে বোমা বিস্ফোরণের পর পরই আদালতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। নগরীর বিভিন্ন মার্কেটও ফাঁকা হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় সকল দোকানপাট। এসব ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে নগরীর বোয়ালিয়া, রাজপাড়া, মতিহার ও শাহমখদুম থানায় পৃথক চারটি মামলা দায়ের হয়েছিল।

রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট ও আরডিএ মার্কেট এলাকায় ১৭ আগস্ট বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় নগরীর বোয়ালিয়া থানার তৎকালীন এসআই সিদ্দিকুর রহমান বাদী হয়ে ওইদিন জেএমবি নেতা শায়খ আবদুর রহমান এবং সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইসহ ৮ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর ২০০৬ সালের ৩০ মে তিনি ১৯ জন জেএমবি ক্যাডারের নামে রাজশাহী মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এই মামলায় ২০১২ সালের ২৮ নভেম্বর জেএমবি ৭ সদস্যকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের রায় দেন আদালত। রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক একরামুল হক চৌধুরী এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে একইসঙ্গে প্রত্যেকের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- জেএমবি ক্যাডার শফিউল্লাহ ওরফে তারেক, আবু ইছা ওরফে এনামুল হক আকন্দ, জহুরুল ইসলাম, এনামুল হক ওরফে এনামুল, আমানুল্লাহ ওরফে আবু সাইদ, কোরবান আলী ও তরিকুল ইসলাম।

নগরীর কাজলা গেটের পশ্চিম পাশে ১৭ আগস্ট বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় মতিহার থানার তৎকালীন এসআই খতের আলী বাদী হয়ে ওইদিন জেএমবি নেতা শায়খ আবদুর রহমান এবং সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইসহ ১০ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় এসআই চাহেল উদ্দিন ২০০৬ সালের ৬ মার্চ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে রাজশাহী মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এই মামলায় ২০০৯ সালের ২২ মার্চ রাজশাহী বিভাগীয় স্পেশাল ও বিশেষ দায়রা জজ আদালতের বিচারক ১০ জেএমবি ক্যাডরের বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন। কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- এনামুল হক, আরিফ, আবদুর রহমান ওরফে খালিদ, তরিকুল ইসলাম, শফিউল্লাহ, আবু ইছা, সিদ্দিকুল ইসলাম, হাসান, জাহাঙ্গীর ও আবদুল আওয়াল।

নগরীর নওদাপাড়া এলাকায় বোমা হামলার ঘটনায় শাহমখদুম থানার তৎকালীন এসআই আমিরুল ইসলাম বাদি হয়ে হয়ে ওইদিন জেএমবি নেতা শায়খ আবদুর রহমান এবং সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইসহ ৮ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় শাহমখদুম থানার এসআই আমিনুল ইসলাম ২০০৬ সালের ১০ মে সাতজনের বিরুদ্ধে রাজশাহী মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ মামলা ২০১২ সালের ১২ নভেম্বর রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক একরামুল হক চৌধুরী রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ১০ বছর কারাদণ্ড দেন বিচারক। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হলেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কাঁঠালবাজার এলাকার জেএমবি ক্যাডার আবদুর রহিম। রায়ে একইসঙ্গে তার ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও অপর চার আসামিকে খালাস দেওয়া হয়।

নগরীর রাজপাড়া থানার কালেক্টরেট ভবন এলাকায় বোমা হামলার ঘটনায় থানার তৎতালীন এসআই একেএম মাসুদ রানা বাদী হয়ে ওইদিন জেএমবি নেতা শায়খ আবদুর রহমান এবং সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইসহ ১০ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় ২০০৬ সালের ১৫ জুন রাজপাড়া থানার ওসি আকরাম হোসেন ১০ জনের নামে রাজশাহী মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এই মামলায় দু’জন আসামির আগেই ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় জেএমবি ক্যাডার শফিউল্লাহ, এনামুল হক, আরিফ, তরিকুল ইসলাম, আবু ইছা, কোরবান, জহুরুল ও আমানুল্লাহর বিরুদ্ধে আদালতে বিচারকাজ শুরু হয়। তবে এই ৮ জনেরই নগরীর বোয়ালিয়া ও মতিহার থানায় দায়েরকৃত দুটি মামলায় সাজা হয়েছে।

সারাবাংলা/এমই/এনএস

১৭ আগস্ট বোমা হামলা টপ নিউজ রাজশাহী সিরিজ বোমা হামলা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর