প্রত্যেক মানুষের জীবনমান উন্নত করতে চাই: প্রধানমন্ত্রী
১৭ আগস্ট ২০২৩ ১৪:০২
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাবার রেখে যাওয়া কাজ সম্পূর্ণ করে দেশের প্রত্যেক মানুষের জীবন অর্থবহ করে তাদের জীবনমান উন্নত করতে চাই। কারণ আওয়ামী লীগের নীতি আদর্শই হচ্ছে জনগণের কল্যাণ সাধন করা।
বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সকালে গণভবনে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা-২০২৩’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট ও রংপুর জেলা প্রশাসন এবং সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাসে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে মতবিনিময় করেন তিনি। এর মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের সুরক্ষায় সর্বজনীন পেনশন যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। আপাতত চার শ্রেণির জনগোষ্ঠীর জন্য এতে চারটি স্কিম থাকছে।
সর্বজনীন পেনশন বিধিমালায় পৃথক চারটি স্কিম হলো— প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ‘প্রবাস স্কিম’, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য ‘প্রগতি স্কিম’, স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য ‘সুরক্ষা স্কিম’ ও স্বকর্মে নিয়োজিত স্বল্প আয়ের নাগরিকদের জন্য ‘সমতা স্কিম’।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের প্রেক্ষাপটের প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর আওয়ামী ফাউন্ডেশন গঠন করে দলের নেতাকর্মীদের সুরক্ষার একটি উদ্যোগ গ্রহণ করি। তবে সেটি পরবর্তীতে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। ১৯৯৬ সালে যখন সরকারে আসলাম তখন চিন্তা করলাম সর্বজনীনভাবে মানুষের জন্য কি করা যেতে পারে? এর উপর একটা ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না? সেই চিন্তা থেকে পরবর্তীতে ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে সর্বজনীন পেনশন স্কিম অন্তর্ভুক্ত করি।’
সরকারি চাকরিজীবীরা এই সর্বজনীন পেনশন স্কিমে আওতাভুক্ত হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি চাকরিজীবীরা পেনশন পান। কিন্তু যারা চাকরি করেন না তারা তো পান না। কাজেই এটা সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য না। যারা সরকারি বেতন পাবেন বা সরকারি পেনশন পাবেন তাদের জন্য এটা প্রযোজ্য না। শুধুমাত্র এর বাইরের জনগোষ্ঠী জন্য এই ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। যাতে করে তারাও একটু সম্মানজনকভাবে বাঁচতে পারেন। ফলে মানুষের মাঝে যে বৈষম্যটা আছে সেটাও দূর হবে।’
‘আওয়ামী লীগের নীতি আদর্শই হচ্ছে জনগণের কল্যাণ সাধন করা। আমরা সব সময় জনগণের মঙ্গলের কথাই চিন্তা করি। এই আদর্শ আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিখিয়েছেন। আমরা সেই আদর্শ নিয়ে কাজ করি বলে সরকারে আসার পর থেকে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছি’— বলে শেখ হাসিনা।
কোভিড-১৯ অতিমারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন-পাল্টা স্যাংশনের ফলে মুদ্রাস্ফীতি তার উপর মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ সবকিছু মোকাবেলা করেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যেহেতু জনগণ আমাদের পাশে আছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিমারি, মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ সব মোকাবেলা করেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। জনগণের আস্থা বিশ্বাস পেয়েছি। কাজেই তাদের জন্য কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।’ একটি বাড়ি একটি খামার, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, গৃহহীনদের জমিসহ ঘর উপহার প্রদানসহ সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় সরকারের টানা মেয়াদে নানামুখী কর্মসূচির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি।
বাবা-মা-ভাইসহ নিজের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাবার রেখে যাওয়া কাজ সম্পূর্ণ করে দেশের প্রত্যেক মানুষের জীবন অর্থবহ করে তাদের জীবনমান উন্নত করতে চাই। কারণ তিনি (বঙ্গবন্ধু) বারবার এ কথাই বলেছেন— দেশের মানুষের অন্ন-বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষার সুযোগ, একইসঙ্গে উন্নত জীবন দান করে দেশের মানুষের কল্যাণ করাই তার একমাত্র লক্ষ্য। যদি উন্নত জীবন দিতে না পারি তাহলে এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হতে দেব না। স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়নি। আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। আগামী দিনে উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের আস্থা বিশ্বাস আর ভালোবাসাই হচ্ছে আমার চলার শক্তি। কাজেই সেই আস্থা বিশ্বাস আপনারা রাখবেন। সেটাই আমি চাই। আজকে সত্যি খুব আনন্দিত, আজকের দিনে এটা উদ্বোধন করতে পেরেছি।’
গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রী মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার ও অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতেমা ইয়াসমিন। এসময় সার্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালার উপর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
এর আগে, গত ১৪ আগস্ট এই বিধিমালা চূড়ান্ত করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে চার শ্রেণিকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। সেখানে চাকরিজীবীদের জন্য চারটি পৃথক স্কিম রাখা হয়েছে। সেইসঙ্গে বিধিমালায় মোট ১৮টি ধারা রাখা হয়েছে।
সারাবাংলা/এনআর/এনএস