ভারতের ‘আওয়ামীপ্রীতি’ বিশ্বাস করছে না বিএনপি, মনোযোগ আন্দোলনে
২০ আগস্ট ২০২৩ ১৭:৩২
ঢাকা: ভারতের আনন্দবাজারের প্রতিবেদন। তাতে উল্লেখ, বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে থাকার ইঙ্গিত ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারের। জার্মানির ডয়েচে ভেলেও প্রতিবেদনেও একই বার্তা। তা নিয়ে তোলপাড় রাজনৈতিক অঙ্গন। বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো ‘উপযুক্ত’ সূত্রের উল্লেখ না থাকায় প্রতিবেদন দুটিকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে অভিহিত করছে। এসব প্রতিবেদন আন্দোলনে প্রভাব ফেলবে না বলেও দাবি করছে। তবে প্রতিবেদন দুটি নিয়ে বিএনপিতেও চলছে নানামুখী আলোচনা। প্রতিবেদন দুটি দলটিকে যথেষ্টই নাড়া দিয়েছে।
ওই প্রতিবেদন দুটি নিয়ে এরই মধ্যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ভারতকে ‘তিরষ্কার’ করে ‘নিজের ঘর সামলানো ও পরের ঘরে মাতবরি’ কমাতে বলেছেন। অন্যদিকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যদি ভারত কোনো পদক্ষেপ নেয়, তা হবে দুঃখজনক। আমরা মনে করি, সেটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য এবং এই অঞ্চলের মানুষের জন্য শুভ হবে না।’
সাবেক কয়েকজন কূটনীতিকরা অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বেশির ভাগ দেশকেই শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষে দেখছেন। তারা বলছেন, ভারতে জি-২০ সম্মেলন রয়েছে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে। ওই সম্মেলনটি ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ওই সম্মেলনের আগে এমন প্রতিবেদন সরকারের পক্ষেই যাবে, যা বিএনপি বা এর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলনরত রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি বার্তাও বটে।
বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা জানাচ্ছেন, দলগুলো এসব প্রতিবেদন আমলে নিচ্ছেন না। বরং তারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সমর্থন নিতে নতুন করে আন্দোলনের রূপরেখা সাজানোর চেষ্ট করছে। আন্দোলনের নতুন সেই রূপরেখা নিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চসহ অন্য দলগুলো শিগগিরই বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে বসবে।
ওই দুই প্রতিবেদনের কোনো প্রভাব বিএনপির চলমান আন্দোলনের ওপর পড়ছে কি না— জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘এসব রিপোর্টে আন্দোলনের ক্ষতি হবে না। কারণ এই রিপোর্টের কোনো সত্যতা নেই। বরং ক্ষতি হয়েছে ডয়েচে ভেলে ও আনন্দবাজার পত্রিকার। আমাদের আন্দোলন সফল হবে। জনগণ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছে। এই আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানের রূপ নেবে।’
সিপিবির সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান খান বলেন, ‘ভারত সবসময় বাংলাদেশকে দুর্বল রাখতে চায়। কারণ দুর্বল সরকার ও বিরোধী দল থাকলে তারা বেশি লাভবান হবে। তারা বঙ্গবন্ধুর সময়ও ষড়যন্ত্র করেছে, এখনো করছে। তবে বিএনপির আন্দোলনও সফল হবে না বলে মনে করছি। কারণ তাদের সঙ্গে জনগণ এখনো সম্পৃক্ত হয়নি।’
বিএনপির সমমনা দলগুলোও সরকারের পক্ষে যাওয়া প্রতিবেদন দুটিকে ‘ভিত্তিহীন’ মনে করছে। গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক সারাবাংলাকে বলেন, আনন্দবাজারে যে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে ভরত সরকারের নীতিনির্ধারক কারও পরিষ্কার কোনো মন্তব্য নেই। ফলে রিপোর্টটি ভিত্তিহীন ধরে নিচ্ছি। তবে ভারত হয়তো চাইছে ২০১৪ বা ২০১৮ সালের মতো এক ঝুড়িতে সব ডিম ভরতে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে দিতে। এতে ভারতের লাভ হবে না, বরং নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়বে।
গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা জনগণের শক্তির ওপর দাঁড়িয়ে লড়াই করছি। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি। গণতান্ত্রিক বিশ্ব আমাদের এই লড়াইকে সমর্থন দেবে। এর বিরুদ্ধে ভারতও অবস্থান নেবে না। আনন্দবাজার ও ডয়েচে ভেলের রিপোর্টে ভারত সরকারের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্যের কথা নেই। ফলে তাদের রিপোর্ট ভিত্তিহীন।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতা আ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, আনন্দবাজার ও ডয়েচে ভেলের প্রতিবেদন সঠিক হলে সেটি আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। আর আমাদের আন্দোলন সফল না হলে বাংলাদেশ দুর্নীতিসহ অনিয়মে ডুবে যাবে। তবে আমরা আন্দোলনে আছি।
সেপ্টেম্বরে ঘেরাও-অবস্থান
আন্দোলনের ক্ষেত্রে চলতি আগস্ট মাসে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো গণমিছিল, পদযাত্রা, বিক্ষোভ মিছিলেই কর্মসূচি সীমাবদ্ধ রাখতে চায়। দলগুলোর নেতা-কর্মীরা বলছেন, এরপর সেপ্টেম্বর মাসে ঘেরাও, অবস্থান ধর্মঘটসহ ঢাকা অচল করার মতো কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা রয়েছে। তবে কর্মসূচির মধ্যে থাকবে না হরতাল। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি বুঝে ঢাকা থেকে সারাদেশকে বিচ্ছিন্ন করার কর্মসূচি দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল ইসলাম বলেন, হরতাল ছাড়া আন্দোলনের যতগুলো ধরন আছে, আমরা সেপ্টেম্বর থেকে সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুতি নেব। সরকার পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
দেশের সব মানুষকে আন্দোলনে যুক্ত করার চেষ্টা চলছে জানিয়ে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম বলেন, জনগণের একটি অংশ এখনো আন্দোলনে সম্পৃক্ত নন। তাদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার চেষ্ট চলেছে। আশা করি সবাই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হবেন।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর