Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সীমান্তে গণহারে হত্যা চালাচ্ছে সৌদি আরব: এইচআরডব্লিউ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২১ আগস্ট ২০২৩ ১৪:০২

সৌদি সীমান্তরক্ষীদের বিরুদ্ধে ইয়েমেন সীমান্তে অভিবাসীদের গণহারে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) একটি প্রতিবেদনে গণহারে হত্যার চিত্র উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি সীমান্তরক্ষীরা শত শত মানুষকে সীমান্তে গুলি করে হত্যা করেছে। এসব মানুষদের মধ্যে অনেকেই ইথিওপিয়ান, যারা যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইয়েমেন পাড়ি দিয়ে সৌদি আরবে প্রবেশের চেষ্টা করে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নতুন প্রতিবেদনটির শিরোনাম ‘তারা আমাদের উপর বৃষ্টির মতো গুলি চালিয়েছে’। এই প্রতিবেদনটি ভুক্তভোগী অভিবাসীদের সাক্ষ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া অভিবাসীদের সঙ্গে বিবিসিও পৃথকভাবে যোগাযোগ করে তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

মৃত্যুপুরী

ইথিওপিয়ার একটি অভিবাসীদল সৌদি আরব প্রবেশের চেষ্টা করেছিল। এই দলে নারী-শিশুরাও ছিল। সীমান্তে সৌদি সীমান্তরক্ষীদের গুলির মুখে পড়েন তারা। দলে থাকা ২১ বছর বয়সী মোস্তফা সুফিয়া মোহাম্মদ বিবিসিকে বলেন, গুলি অনবরত চলতেই থাকে।

তিনি জানান, গত বছরের জুলাইয়ে সীমান্ত পেরিয়ে লুকিয়ে সৌদি আরব ঢোকার চেষ্টা করার সময় তাদের ৪৫ জন অভিবাসীর দলের কয়েকজন নিহত হন। তিনি বলেন, আমি খেয়ালও করিনি যে আমার গায়ে গুলি লেগেছে। কিন্তু যখন উঠে হাঁটার চেষ্টা করি তখন দেখি আমার পায়ের একটি অংশ নেই।

ইয়েমেনি এবং ইথিওপিয়ান চোরাকারবারিদের হাতে বিপদ, অনাহার এবং সহিংসতার মধ্যে তিন মাসের যাত্রা শেষে নৃশংস পরিস্থিতির মুখে পড়েন তারা।

কয়েক ঘণ্টা পরে শ্যুট করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মুস্তফার বাম পা প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পরে মুস্তফার পা হাঁটুর নীচে কেটে ফেলতে হয়। তিনি এখন ইথিওপিয়াতে তার মা-বাবার সঙ্গে থাকেন। দুই সন্তানের বাবা তিনি। পঙ্গু মুস্তফা ক্র্যাচ এবং নকল পা লাগিয়ে হাটার চেষ্টা করেন।

মুস্তফা বলেন, আমার পরিবারের জীবনমান উন্নত করতে সৌদি আরব গিয়েছিলাম। কিন্তু আমার আশা পূরণ হয়নি। এখন আমার মা-বাবা আমার জন্য সবকিছু করেন।

সীমান্তরক্ষীদের গুলিবর্ষণ থেকে বেঁচে ফেরা কিছু ব্যক্তি গভীর ট্রমা নিয়ে বেঁচে আছেন। ইয়েমেনের রাজধানীতে থাকেন ১৮ বছর বয়সী জাহরা (ছদ্মনাম)। তিনি কী অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেছেন তা মুখ ফুটে বলতে পারছে সামান্যই। তিনি বলেন, আমার বয়স ১৮ কিন্তু আমাকে আরও ছোট লাগে।

জাহরা জানান, সৌদি আরব যেতে তিনি রাস্তায় এবং দালালদের সব মিলিয়ে ২৫০০ ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন। কিন্তু তার এই যাত্রা সমাপ্ত হয় সীমান্তে বুলেটবৃষ্টিতে।

বুলেটের আঘাতে জাহরার এক হাতের সব আঙুল উড়ে যায়। তার এই আঘাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি কোনো জবাব না দিয়ে কেবল দূরে তাকিয়ে থাকেন।

জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বছরে দুই লাখেরও বেশি মানুষ বিপজ্জনকভাবে এক দেশ থেকে আরেক দেশের উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। তারা হর্ন অফ আফ্রিকা থেকে ইয়েমেনে সমুদ্রপথে পাড়ি দেয় এবং তারপরে সৌদি আরবে প্রবেশের চেষ্টা করে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, পথ চলাকালে অনেকেই কারাভোগ ও মারধরের শিকার হন।

সমুদ্র পারাপার বেশ বিপজ্জনক। গত সপ্তাহে জিবুতির উপকূলে একটি জাহাজডুবির ঘটনায় ২৪ জনেরও বেশি অভিবাসী নিখোঁজ হয়েছেন। ইয়েমেনে প্রধান অভিবাসী রুটগুলোর পথের ধারে মানুষের কবরে ভরা।

উত্তর ইয়েমেনের বেশিরভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে দেশটির হুতি বিদ্রোহীরা। ইয়েমেনের রাজধানী সানায় একটি আটক কেন্দ্রে আগুন লেগে দুই বছর আগে কয়েক ডজন অভিবাসী নিহত হয়েছিলেন।

কিন্তু সর্বশেষ হিউম্যান রাইট ওয়াচের প্রতিবেদনে অভিবাসীদের অপব্যবহারের ভিন্ন মাত্রা এবং প্রকৃতি উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনের প্রধান লেখক নাদিয়া হার্ডম্যান বিবিসিকে বলেন, আমরা যা নথিভুক্ত করেছি তা মূলত গণহারে হত্যা। মানুষরা এমন জায়গাগুলোর বর্ণনা করেছে যা মৃত্যুপুরীর মতো মনে হয়। পাহাড়গুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মৃতদেহ।

প্রতিবেদনটি ২০২২ সালের মার্চ থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত সময়কাল ধরা করা হয়েছে। এই সময় অভিবাসীরা বিস্ফোরক অস্ত্রের মুখোমুখি হয়েছেন অন্তত ২৮ বার। আর একেবারে কাছ থেকে গুলিবর্ষণের শিকার হয়েছে অন্তত ১৪ বার।

সৌদি আরব অবশ্য লাগাতার গণহারে হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

সারাবাংলা/আইই

টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর