Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফিকুল আলম বলছি— প্রতারকের ধমক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২১ আগস্ট ২০২৩ ১৭:৫৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ‘আমি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফিকুল আলম বলছি’— এভাবেই সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেলের পরিচয় দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের নানাভাবে বিভ্রান্তি করার অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

রোববার (২০ আগস্ট) রাতে নগরীর বন্দর থানার কলসিদীঘির ধুমপাড়া সাগরপাড় এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতার চারজন হলেন- হারিফ মিয়া (২৩), ইয়ার হোসেন (৪২), মিলন খান (৩০) ও ইউসুফ মিয়া (৪০)।

নগর ‍পুলিশের বন্দর জোনের সহকারী কমিশনার আরিফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল ও মাঝে মধ্যে তার আপন ভাই পরিচয় দিয়ে একটি চক্র সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও পুলিশ সদস্যদের বিভ্রান্তি করে আসছিল। তাদের প্রাথমিক টার্গেট হলো সেনাবাহিনীর নাম পরিচয় ব্যবহার করে ও কর্মকর্তাদের আত্মীয়-স্বজন পরিচয় দিয়ে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে টাকা আত্মসাৎ করা।’

‘এই কাজে তারা বিভিন্ন কোম্পানির সিম কার্ড ব্যবহার করত। তাদের কাছ থেকে ১৭টি সিম কার্ড জব্দ করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এদের মধ্যে হারিফ মিয়াই মূল হোতা বলে আমরা জানতে পেরেছি। ওই থানার উপ-পরিদর্শক পদের পুলিশ সদস্যদের কল দিয়ে সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফিকুল আলমের পরিচয় দিয়ে বিব্রত করে অনৈতিক কাজ করার তদবির করত। ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের একটি ভিজিটিং কার্ড ব্যবহার করে এসব কাজ করত। আমাদের সন্দেহ হলে আমরা অভিযান চালিয়ে এই চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করি।’

বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সঞ্জয় কুমার সিনহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘বন্দর থানা এলাকায় পুলিশের একটি পেট্রোল টিমের এক এসআই তার পেট্রোল ডিউটি করছিল। কলসীদীঘি এলাকার সাগরপাড়ে একজন বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে ভাড়া নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছিল। আশেপাশের লোকজন যখন ৯৯৯ এ যখন কল দেয় তখন তারা রেসপন্স করে। পরে পেট্রোল টিম গেলে ওই বাড়ির ইনচার্জ মিলন খান আমাদের পুলিশ অফিসারকে এসে মোবাইল দিয়ে বলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল স্যার এসে কথা বলবে। আপনি একটু কথা বলেন।’

‘তখন পুলিশের ওই সদস্য সম্মানের সঙ্গে মোবাইলের অন্যপাশে থাকা ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে ওপাশ থেকে বলে-যে মোবাইল ধরিয়ে দিয়েছে সে আপনাকে বলেনি আমি কে, আপনি আবার আমার নাম জিজ্ঞেস করছেন, আপনি ওখানে কেন গেছেন? পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণকে বলব, আপনার বাড়ি কোথায়। তখন ওই এসআই তার বাড়ি ফেনী বললে মোবাইলের ওপাশে থাকা ব্যক্তি বলে ফেনীর এসপিকে আপনার বাড়িতে পাঠাব?’

বিব্রত পুলিশ সদস্য কল কেটে ওসিকে বিষয়টি জানান। ওসি সঞ্জয় বলেন, ‘সেনাবাহিনীর একজন প্রধান ব্যক্তি পুলিশের এক এসআইকে কল দিয়ে এভাবে তদবির করবে বা হুমকি দেবে সেটা আমাদের কোনোমতেই বোধগম্য হচ্ছিল না। পরে আমি ওই নম্বর সংগ্রহ করে আমাদের একটি গ্রুপে দিয়ে অন্যন্য অফিসারদেরকে সতর্ক থাকতে বলি। তখন অনেকে আমাকে জানায় অনেকদিন ধরে তাদেরকে ‘আমি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শফিকুল আলম বলছি’ পরিচয় দিয়ে কোনো কাজে গেলে কল দিয়ে বিভ্রান্ত করে।’—

‘এরপর আমার পরিচিত এক সেনাবাহিনীর মেজরের সঙ্গে আমি কথা বললাম এবং তাকে ওই ভিজিটিং কার্ড পাঠিয়ে সেটা যাচাই করতে অনুরোধ করলাম। পরে তিনি বললেন কার্ডটি ভুয়া। এরপর আমরা এই চক্রের চার সদস্যকে একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করি।’

বন্দর থানার ওসি আরও বলেন, ‘অভিযানে ওই বাসা থেকে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীসহ বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলাবাহিনীতে নিয়োগ দেওয়ার নামে মানুষজনের সঙ্গে প্রতারণা করার প্রমাণ পাই। এদের দ্বারা প্রতারিত এক ভুক্তভোগী আমাদের জানিয়েছে ৬০-৭০ জনের কাছ থেকে তারা চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেছে। তাদের সঙ্গে এই কাজে আর কেউ জড়িত আছে কিনা আমরা খতিয়ে দেখছি।’

সারাবাংলা/আইসি/ইআ

টপ নিউজ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর