Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রতারণার ফাঁদ এমটিএফই অ্যাপে সর্বস্বান্ত নওগাঁর হাজারও মানুষ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২১ আগস্ট ২০২৩ ১৮:৩১

নওগাঁ: ডিজিটাল প্রতারণার মাধ্যম হিসেবে অনলাইনে বিনিয়োগ করে কম সময়ে অধিক মুনাফার মাধ্যমে লাভবান হওয়ার অন্যতম প্লাটফর্মের মধ্যে রিপটন কয়েন, সিজি ট্রেড ও এমটিএফই হচ্ছে অন্যতম অ্যাপ। বাংলাদেশে এগুলোর কোনোটিরই বৈধ কোনো নিজস্ব অফিস নেই। আছে শুধু এলাকাভিত্তিক প্রতিনিধি। যে প্রতিনিধিরা কোম্পানির কাছ থেকে পাওয়া বড় ধরনের একটি নির্দিষ্ট মুনাফার বিনিময়ে দেশের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষদের কম সময়ে অধিক মুনাফার আকর্ষণীয় লোভ দেখিয়ে য়ে অর্থ বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করে আসছেন।

বিজ্ঞাপন

তারই ধারাবাহিকতায় নওগাঁয় অনলাইনভিত্তিক ‘এমটিএফই’ নামে একটি অ্যাপের মাধ্যমে হাজার থেকে লাখ টাকা বিনিয়োগ করে দ্রুত অধিক মুনাফার আয় করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। শহর কিংবা গ্রাম সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছিল এই অ্যাপটি। যেখানে প্রতিদিন সাধারণ মানুষ টাকা বিনিয়োগ করে দ্রুত অধিক মুনাফার আয় করার স্বপ্ন দেখছিলেন। সম্প্রতি এই অভিনব পদ্ধতির ডিজিটাল প্রতারণার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ হারানোর কাহিনিটি ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। নিঃস্ব হওয়ার পর কে কত অর্থ কিভাবে বিনিয়োগ করেছিলেন তার সবকিছুই বেরিয়ে আসছে। অর্থবিনিয়োগের উপযুক্ত কোনো কাগজপত্রাদি না থাকায় বর্তমানে অ্যাপে বিনিয়োগকারী সবারই মাথায় হাত।

বিজ্ঞাপন

হঠাৎ করে এমটিএফই অ্যাপ থেকে বিনিয়োগকারীর নিজস্ব অ্যাকাউন্ট থেকে ডলারে পরিণত করা টাকা উধাও হয়ে গেছে। বর্তমানে বিনিয়োগকারী প্রতিটি অ্যাকাউন্ট থেকে ওই অ্যাপটি আরো অর্থ পাবে মর্মে উল্টো ঋণের বোঝা ধরিয়ে দিয়ে বিভিন্ন পরিমাণ অর্থের আগে মাইনাস চিহ্ন দিয়ে রেখেছে। এতে করে যারা দ্রুত আয় করার স্বপ্ন নিয়ে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন তারা এখন সর্বস্বান্ত হয়ে চোখে সরিষার ফুল দেখছেন। এতে করে বিনিয়োগকারীরা পথে বসলেও কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন এলাকাভিত্তিক ওই কোম্পানীর সিইও নামক কতিপয় ব্যক্তি, যাদের দেখানো প্রলোভনে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ বিনিয়োগ করেছিলেন।

জানা গেছে, বিদেশি অ্যাপ মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ (এমটিএফই) নামের একটি অনলাইন ট্রেডিং ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। এমটিএফই অ্যাপটি চালু থাকা অবস্থায় একাউন্ট চালু করার জন্য সর্বনিম্ন ২৬ ডলারের সমপরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করতে হতো। সেই টাকা বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন পাওয়া যাবে শতকরা হিসেবে নির্দিষ্ট পরিমাণ মুনাফা। যার অ্যাকাউন্টে যত বেশি অর্থ থাকবে সে তত বেশি মুনাফা পাবেন। এ সব লোভনীয় প্রলোভন দেখিয়ে প্রচারণা করছিল কিছু যুবক। আর এতেই হুমড়ি খেয়ে অ্যাপটিতে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।

কোনো কাজ ছাড়াই এই রকম মুনাফা পাওয়ার আশায় সেই অ্যাকাউন্টে কেউ জমি বন্ধক রেখে, কেউবা জমানো টাকা আবার কেউবা বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ ও ধার দেনা করে লাখ লাখ টাকা এমটিএফই অ্যাপের কয়েজন সিইও নামক ব্যক্তির মাধ্যমে বিনিয়োগ করেছিলেন। নিযুক্ত সিইওরা কাউকে অ্যাকাউন্ট খুলে দিলে কোম্পানি থেকে তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন দেওয়ার পাশাপাশি তার মাধ্যমে যতগুলো ব্যক্তি বিনিয়োগ করবেন তাদের সবার কাছ থেকে ওই সিইও একটি নির্দিষ্ট হারে মুনাফা পেতেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, এই আ্যাপে অ্যাকাউন্ট খোলার পর বিনোযোগ করা টাকার ওপর নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা হতো। হঠাৎ করেই অ্যাকাউন্ট থেকে তারা টাকা উঠাতে গিয়ে দেখে তাদের অ্যাকাউন্টে কোনো ডলার নেই। বরং তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে কোম্পানি আরও টাকা পাবেন মর্মে মাইনাস চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। প্রতারণা করে তাদের টাকা নিয়ে উধাও হয়েছে এমটিএফই। লাভের আশায় এসে উল্টো ঋণের বোঝাও ধরিয়ে দিয়েছে এমটিএফই। এতে করে যারা দ্রুত আয় করার স্বপ্ন নিয়ে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন তারা এখন পথে বসেছে। তবে প্রথম দিকে যারা বিনিয়োগ করেছিলেন এবং যারা চতুর লোক তাদের অনেকেই মুনাফা তুলে নিয়েছেন। আর যারা বেশি মুনাফার আশায় এবং শেষের দিকে যারা ছিলেন যারা প্রাপ্ত মুনাফার অর্থ তুলে নিতে পারেননি তারা সর্বস্বান্ত হয়েছেন।

রাণীনগর উপজেলার বাজার এলাকার নিশাদ ইসলাম আকাশ জানান, তিনি মূলত অনলাইনে কাজ করেন। এই বিষয়টি জানার পর তিনি সম্প্রতি ৬০হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন এমটিএফইতে। তার দেখাদেখি তার আরও চারজন সহকর্মীরা একই পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেন। অন্য সবার মতো তাদের অর্থও হাতিয়ে নিয়েছে ওই কোম্পানি।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে নওগাঁ শহরের এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘একটু লাভের আশায় ধার করে ১ লাখ টাকা ইনভেস্ট করেছিলাম। কিছুদিন তারা ওই টাকার ওপর লাভও দিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে কিছুদিন আগে থেকে অ্যাপটি থেকে টাকা উঠানো বন্ধ করে দেন। এখন শুনছি তারা টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। এখন ধারের টাকা পরিশোধ করব কীভাবে সেই চিন্তায় আছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘লাভের আশায় এসে উল্টো ঋণের বোঝা ধরিয়ে দিয়েছে এমটিএফই। সব ডলার কেটে নিয়ে উল্টো একাউন্টে বিশাল অংকের মাইনাস ডলার ধরিয়ে দিয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা পরিশোধ করতে বলেছে। ২৪ ঘণ্টা পর আজকে আবার তাদের অ্যাপে নোটিশ দিচ্ছে যে, ২৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে আপনি ঋণ পরিশোধ করেননি। আপনাকে আরও ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হলো, এরমধ্যে ঋণ পরিশোধ না করলে আপনাকে আইনি নোটিশ পাঠানো হবে।’

নওগাঁ সদর উপজেলার শৈলগাছী ইউনিয়নের ভুক্তভোগী আলামিন বলেন, ‘একজন এসে বলল, এমটিএফই টাকা ইনভেস্ট করলে নাকি দ্বিগুণ পরিমাণ টাকা আয় করা যাবে। পরে একটি এনজিও থেকে ৬০ হাজার টাকা তুলে সেখানে বিনিয়োগ করি। এখন ওই অ্যাপসে আর প্রবেশ করা যাচ্ছে। এখন টাকাগুলো না পেলে এনজিওর টাকা পরিশোধ করবো কিভাবে? কোনো কিছু বুঝতে পারছি না।’

রাণীনগর উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের আরেক ভুক্তভোগী নাঈম বলেন, ‘আমি অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাই। একজনের পাল্লায় পরে লাভের আশায় কিছুদিন আগেই এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ২৫ হাজার টাকা ইনভেস্ট করেছিলাম। কিন্তু তারা টাকা নিয়ে পালিয়ে গেল। এখন কীভাবে কী করব বুঝতেই পারছি না।’

এমটিএফই অ্যাপসের সিইও হিসেবে পরিচয়দানকারী রাণীনগর উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে রাব্বী জানান, প্রথমে মহাদেবপুর উপজেলার লতিফুল নামে একজন তাকে লিংক দিয়ে সেখানে কাজ করার জন্য বলেন। পরে তিনি সেখানে বিনোয়োগ করেন এবং বেশ কয়েকজনকেও উদ্বুদ্ধ করেন। তবে কাউকে কোনো ধরণের প্রলোভন দেখানো হয়নি বলে দাবি করেন রাব্বী।

রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দিলে এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।’

সারাবাংলা/একে

অ্যাপ এমটিএফই নওগাঁ প্রতারণা

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর