৭ নবজাতকের হন্তারক সেই ব্রিটিশ নার্স আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত
২১ আগস্ট ২০২৩ ২২:০৫
সাত নবজাতককে হত্যা এবং আরও ছয় নবজাতককে হত্যাচেষ্টার দায়ে যুক্তরাজ্যের নার্স লুসি লেটবিকে (৩৩) আমৃত্যু কারাদণ্ড সাজা দিয়েছেন আদালত। রায়ে আদালত বলেছেন, ‘সিরিয়াল কিলার’ এই নার্স কখনো কারাগার থেকে বের হতে পারবেন না। এমনকি তিনি কারাগারের বাইরে পা রাখতে পারবেন না প্যারোল নিয়েও।
ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়, সোমবার (২১ আগস্ট) যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টারের ক্রাউন আদালত লুসি লেটবিকে এই সাজা দেন। তার মতো এরকম আমৃত্যু কারাদণ্ড সাজা যুক্তরাজ্যে পেয়েছেন আর মাত্র তিনজন নারী।
১৩ নবজাতককে হত্যা ও হত্যাচেষ্টায় দায়ী লুসি লেটবিকে যুক্তরাজ্যের আধুনিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় শিশু সিরিয়াল কিলার বলা হচ্ছে। ২০১৫ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে লিভারপুলের কাউন্টেস অব চেস্টার হাসপাতালে নবজাতক বিভাগে কাজ করতেন লুসি। সেখানেই এসব হত্যাকাণ্ড ঘটান তিনি।
আরও পড়ুন- যুক্তরাজ্যে সাত শিশুকে হত্যায় দোষী সাব্যস্ত সিরিয়াল কিলার নার্স
লুসির বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার সময় বিচারক জাস্টিস গস তার অপরাধকে ‘নিষ্ঠুর ও হিসেবি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। আদালত বলেছেন, সবচেয়ে ছোট ও সবচেয়ে নাজুক শিশুদের সঙ্গে তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন। তিনি জানতেন, তার কর্মকাণ্ড শারীরিক ও মানসিকভাবে অসহনীয় পীড়ন তৈরি করবে। তা সত্ত্বেও তিনি ধর্ষকামীর মতোই আচরণ করেছেন।
আদালত আরও বলেন, লুসি লেটবির আচরণ শিশুদের প্রতি মানুষের স্নেহের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিরোধপূর্ণ। শিশুদের পরিচর্যা করার চেষ্টা করেছেন বলে যে দাবি তিনি বারবার বিচার চলাকালে করেছেন, তা তার বলা অনেকগুলো মিথ্যার একটিমাত্র।
লেটবি কীভাবে নবজাতকদের নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করতেন এবং তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতেন, তার বর্ণনাও শোনা হয় আদালতে। সেই বিবরণে উঠে এসেছে, নবজাতকদের পাশ থেকে তাদের মা-বাবা কিংবা অন্য নার্সরা সরে গেলেই লেটবি তৎপর হয়ে উঠতেন। তিনি শরীরে বায়ুপ্রবেশ করিয়ে হত্যা করেন সাত নবজাতককে। আরও দুই নবজাতকের খাবারের ব্যাগে ইনসুলিন দিয়ে হত্যাচেষ্টা চালান। শ্বাসনালীতে নল ঢুকিয়ে আরেক নবজাতককে মেরে ফেলার চেষ্টা করেন।
বিচারক বলেন, লেটবি অভিভাবকদের বহুল আকাঙ্ক্ষিত সন্তান থেকে বঞ্চিত করেছেন। তার নির্যাতন থেকে যেসব নবজাতক বেঁচে গেছে, তাদেরও সেই নির্যাতনের প্রভাব বয়ে বেড়াতে হবে। লেটবি ভাই-বোনদের বঞ্চিত করেছেন সহোদর-সহোদরা থেকে। ভুক্তভোগী প্রতিটি পরিবারের জন্য তিনি বয়ে এনেছেন অসীম দুর্ভোগ।
রায় ঘোষণার সময় লেটবি আদালতে উপস্থিত হতে অস্বীকৃতি জানান। তবে এদিন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তারা কেমন অসহনীয় মানসিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তা সবিস্তারে তুলে ধরেন। এক অভিভাবক বলেন, লেটবির নিষ্ঠুরতার পরিণতিতে তারা নিজেরাই সন্তান হারিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের সমতুল্য কষ্ট ভোগ করছেন।
বিচারক গস দণ্ডের নথিপত্র লেটবির কাছে পৌঁছে দিতে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি এসব অভিভাবকের বর্ণনার লিখিত রূপও লেটবিকে দিতে বলেন। এদিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা কেইর স্টার্মার বিদ্যমান আইন পরিবর্তন করতে আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, আইন পরিবর্তন করে এমন করা হোক যেন আদালতে রায় ঘোষণার সময় আসামি উপস্থিত হতে বাধ্য হন।
লুসি লেটবির আগে ব্রিটেনের ইতিহাসে আর যে তিন নারীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল তারা হলেন মায়রা হিন্ডলে, রোজমেরি ওয়েস্ট ও জোয়ান্না ডেনেহি। এর মধ্যে রোজ ওয়েস্ট সত্তর ও আশির দশকে অন্তত ৯ তরুণীকে নির্যাতন করে হত্যা করেছিলেন। জোয়ান্না ২০১৩ সালে হত্যা করেছিলেন তিন পুরুষকে, যে ঘটনা পিটারবরো ডিচ মার্ডারস হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। আর ইয়ান ব্র্যাডির সঙ্গে মিলে মায়রা হিন্ডলে ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৬৫ সালের মধ্যে ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী অন্তত পাঁচ শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িত ছিলেন, যে ঘটনাটি মুরস মার্ডারস হিসেবে আখ্যায়িত।
সারাবাংলা/টিআর