এত টাকার পেছনে কেন ঘুরতে হবে, শুনানিতে হাইকোর্ট
২২ আগস্ট ২০২৩ ০১:১১
`
ঢাকা: এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সম্পর্কিত এক শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘একটা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য কত অর্থ প্রয়োজন? কত অট্টালিকা দরকার? এত টাকার পেছনে কেন ঘুরতে হবে?’
সোমবার (২১ আগস্ট) দেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ-সম্পর্কিত আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের পক্ষভুক্তির আবেদনের শুনানিতে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।
ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারে ‘এস আলম’স আলাদিন’স ল্যাম্প’ (এস আলমের আলাদিনের চেরাগ) শিরোনামে গত ৪ আগস্ট একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটি নজরে আনার পর শুনানি নিয়ে গত ৬ আগস্ট হাইকোর্টের একই বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ অভিযোগ অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সূত্রে অর্থ পাচার (মানি লন্ডারিং) রোধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা বা ব্যর্থতা কেন আইনি কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা রুলে জানতে চাওয়া হয়।
ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনা আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন সোমবার হাইকোর্টে লিখিত আবেদন করেন। তিনি এস আলম সম্পর্কিত বিষয়ে পক্ষভুক্তি চান। তবে সায়েদুল হকের এই আবেদনের তীব্র বিরোধিতা করেন এস আলম গ্রুপের আইনজীবী আহসানুল করিম এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুদ্দিন খালেদ।
শুনানি শেষে এস আলম গ্রুপের বিষয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশনা প্রদান সংক্রান্ত মামলায় পক্ষভুক্ত হতে আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের আবেদন গ্রহণ করেননি হাইকোর্ট। তবে আবেদনটি আদালতের নথিতে রাখা হয়েছে।
সোমবারের শুনানির একপর্যায়ে এস আলম গ্রুপের আইনজীবী আহসানুল করিমের কাছে আদালত জানতে চান, ‘সায়েদুল হক পক্ষভুক্ত হলে সমস্যা কোথায়?’
জবাবে আহসানুল করিম আদালতকে বলেন, রুলের বিচারাধীন অবস্থায় এস আলম গ্রুপ-সম্পর্কিত বিষয়ে বিভ্রান্তিকার তথ্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জনমনে ভ্রান্ত ধারণা ও আতঙ্ক তৈরি হয়। তাতে প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘কথা না বলাটা অপরাধ। সবাই যদি চুপ করে থাকি তাহলে তো হবে না। জেনেশুনে চুপ থাকা যাবে না।’
এ পর্যায়ে আইনজীবী আহসানুল করিম আদালতকে বলেন, ‘আপনারা তো দেখবেনই।’ আদালত তখন বলেন, ‘এখন তো আগের যুগ নেই। একটা কথা বললে সঙ্গে সঙ্গে তা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। দেশ ও জাতির স্বার্থে আমরা মনে করি, আমাদের দায়বদ্ধতার ব্যাপার রয়েছে। যদি আমরা সবকিছু দেখে চোখ বন্ধ করে থাকি, সেটা কাম্য নয়। এটা অন্যায়।’
হাইকোর্ট আরও বলেন, ‘যদি কোনো প্রতিষ্ঠান বা কাউকে হিউমিলিয়েট (হেয়) করার জন্য কোনো ভুল রিপোর্টিং হয়, যদি দেখা যায় ভুল রিপোর্ট হয়েছে, আমরা কাউকে ছাড়ার পাত্র নই।’ তখন আইনজীবী আহসানুল করিম আদালতের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা সবার মঙ্গলের জন্যই করেন।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুর্নীতিবিরোধী বক্তব্য তুলে ধরে তা স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্য হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। আদালত আরও বলেন, ‘আমরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যদি বিচার করতে পারতাম, আমরা যা বলি তা করি কি না, মানুষের সামনে যা বলি তা ঘরে করি কি না- যদি করতাম, তাহলে কি দেশের এই অবস্থা হয়? কত অট্টালিকা দরকার? কে কী মনে করল সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। শপথ নিয়ে লাভটা কী?’
এ পর্যায় আইনজীবী আহসানুল করিম আদালতকে বলেন, ‘আপনাদের (বিচারপতি) এ ধরনের বক্তব্যে মানুষ উজ্জীবিত হয়।’ তখন আদালত বলেন, ‘একটা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য কত অর্থ প্রয়োজন? কত অট্টালিকা দরকার? এত টাকার পেছনে কেন ঘুরবে হবে?’
একপর্যায় হাইকোর্ট সায়েদুল হকের উদ্দেশে বলেন, ‘পক্ষভুক্ত হওয়ার যে আবেদন, সেটি আমরা খারিজ করছি না। আপনার আবেদন নথিতে সংযুক্ত থাকবে। প্রয়োজন হলে আমরা আপনাকে ডাকব।’
এদিকে এস আলমের বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে করা আবেদনের ওপর বুধবার শুনানি হবে। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এই দিন নির্ধারণ করে দেন। এ সময় দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খান ও এস আলমের পক্ষে আহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/কেআইএফ/টিআর