ভোটের দর কষাকষি: আসন চেয়ে রওশন গ্রুপের তালিকা আ.লীগ হাইকমান্ডে
২২ আগস্ট ২০২৩ ০৯:৫৬
ঢাকা: আগামী নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসেল ঘোষণার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সে হিসাবে নির্বাচন হতে পারে এ বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ কিংবা নতুন বছরের শুরুর সপ্তাহেই। ঘনিয়ে আসা এই নির্বাচন নিয়ে ছক কষছে সব রাজনৈতিক দলই। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান জানিয়ে ‘ঘর গুছাতে’ শুরু করেছে।
দলের রওশন এরশাদপন্থি দায়িত্বশীল নেতাদের কাছ থেকে জানা গেছে, সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ নির্বাচনের জন্য দলীয় সংসদ সদস্য ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছেও দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি তালিকা দিয়েছেন।
দলের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রওশন এরশাদের পক্ষ থেকে দেওয়া মনোনয়নের তালিকাটি নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি রওশন এরশাদকে বলেছেন, এবারের নির্বাচন অনেক বেশি ‘কঠিন’ হবে। ফলে নির্বাচনের মাঠে লড়াই করে জয় নিয়ে আসতে সক্ষম, এমন ‘যোগ্য’ প্রার্থীদেরই যেন মনোনয়ন দেওয়া হয়।
জাপার ওই সূত্রটি আরও জানায়, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা জি এম কাদেরের সঙ্গে প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের দ্বন্দ্ব এখনো নিরসন হয়নি। এর মধ্যে জি এম কাদের ভারত সরকারের আমন্ত্রণে দিল্লিতে অবস্থান করছেন। সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এসব বৈঠক থেকে পাওয়া ‘প্রেসক্রিপশন’ নিয়ে দেশে ফিরলে এই দুই নেতার মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বের নিরসন হতে পারে।
দলীয় সূত্রগুলো আরও বলছে, রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের মধ্যে দ্বন্দ্বের অবসান না হলে শেষ পর্যন্ত জি এম কাদেরকে ‘মাইনাস করে’ রওশন এরশাদের নেতৃত্বে সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে কাউন্সিলের মাধ্যমে জাপার নতুন কমিটির ঘোষণা আসতে পারে। বিভিন্ন মহল থেকে এ বিষয়ে সহায়তার আশ্বাসও পেয়েছেন রওশন এরশাদপন্থিরা। বিষয়টি আঁচ করতে পেরেই রওশন এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপার মনোননয়নপ্রত্যাশীরা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জাপায় রওশন এরশাদপন্থিদের মধ্যে অন্যতম শীর্ষ নেতা গোলাম মসিহ সারাবাংলাকে বলেন, সরকারি দলের কাছে মনোনয়নের জন্য কোনো তালিকা দেওয়া হয়নি। এখনো সেই সময় হয়নি। আর কিছু দিন পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটা পরিষ্কার হবে। তখন চূড়ান্ত সিন্ধান্ত নেওয়া হবে। আসন নিয়ে দরকষাকষি হবে।
তবে রওশনপন্থি এক নেতা নাম গোপন রাখার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, রওশন এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় শেখ হাসিনা বলেছেন, ৩ সেপ্টেম্বর শুরু হতে যাওয়া সংসদ অধিবেশনেই বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ অধিবেশন। ফলে অধিবেশনটি খুই গুরুত্ব বহন করবে। এ ছাড়া এবারের নির্বাচন খুবই ‘টাফ’ হবে জানিয়ে তিনি ‘যোগ্য প্রার্থী’ অর্থাৎ নির্বাচনে লড়াই করার সক্ষমতাসম্পন্ন প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি মাথায় রাখতে বলেছেন।
জাতীয় পার্টির ওই নেতা আরও বলেন, ‘আমরা সরকারি দলের কাছে ৬০ থেকে ৭০টি আসন চাইতে পারি। ম্যাডাম (রওশন এরশাদ) আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জাপার বর্তমান দলীয় এমপিসহ ৯৮ জনের একটি তালিকা দিয়েছেন বলে শুনেছি। আরও শুনেছি, একজন নেতা আগামী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হওয়ার ইচ্ছাও পোষণ করেছেন।’
জাপার রওশনপন্থি নেতা ইকবাল হোসেন রাজু বলেন, ‘আমরা সরকারি দলের কাছে হাতি চাইব। তাহলে অন্তত ঘোড়া তো পাব। আর যারা আগামী সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, তাদের স্বপ্নের মধ্যেও মধু খাওয়ার চেয়ে বিষ খওয়া ভালো।’
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর