Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘পশ্চিমা বিশ্ব এবং ভারতকে দেখাতেই সরকারের জঙ্গি নাটক’

স্পেশাল করেসপন্ড্নেট
২২ আগস্ট ২০২৩ ১৭:১৯

ঢাকা: পশ্চিমা বিশ্ব এবং ভারতকে দেখাতেই সরকার দেশে ‘জঙ্গি নাটক’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দুপুরে কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটউট মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন।

জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রয়াত চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমেদের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কিছু দিন আগে গহীন জঙ্গলের একটা পাড়া থেকে নিরীহ সাধারণ মানুষজনকে জঙ্গি বলে তুলে নিয়ে আসল। এটা প্রয়োজন আছে তাদের। কারণ, তারা দেখাতে চায় যে, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ আছে, জঙ্গি আছে, এটাকে দমন করবার জন্য শুধু তাদেরকেই দরকার। এটাই হচ্ছে তাদের মূল উদ্দেশ্যে এবং সেটা দেখাতে চায় পশ্চিমা বিশ্বকে, ভারতকে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা তো জানি- জঙ্গি আওয়ামী লীগ, জঙ্গি এই সরকার। তারা সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে, ধবংস করছে, তাদের সব অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। হ্যাঁ, এ দেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ- এটা পাপ নয়, অপরাধ নয়। সেজন্যই যে কোনো মানুষ, যারা ধর্ম পালন করেন তাদেরকে জঙ্গি বানিয়ে সরকার ফয়দা হাসিল করে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পত্রিকায় দেখেছেন তিনটা অস্ত্র। সেই অস্ত্রগুলো দেখে মনে হবে যে, ২০/২৫ বছর আগে মাটিতে লুকানো ছিল, সেই অস্ত্র তুলে নিয়ে আসছে। এই মিথ্যা প্রচারণা, এই যে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করা। ওরা দেশের মানুষকে বোকা মনে করে।’

তিনি বলেন, ‘গতকাল বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) জিয়াউর রহমানের পরিবারকে বলেছেন খুনি। আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন, যুদ্ধ করেছিলেন এবং তাকে খুন হতে হয়েছে এদেশের স্বার্থ রক্ষা করার কারণে, তাকে খুন হতে হয়েছে রাষ্ট্রকে সত্যিকার অর্থে একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বানানোর কারণে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া তিনি একইভাবে এ দেশের জন্য এখনও কারাবন্দি আছেন, এখনও হাসপাতালে বন্দি অবস্থায় আছেন। তাদের ছেলে যিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করবার জন্য নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং এদের (সরকার) চক্রান্তে বিদেশে নির্বাসিত অবস্থায় থাকতে হচ্ছে। আপনারা দেখেছেন যে, কীভাবে তাকে ২১ আগস্টের মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে।’

‘আমরা বার বার বলেছি, ওই মামলার তিন তিনটা চার্জশিটে তার নাম কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। কোনো সাক্ষী প্রমাণ দেখাতে পারেনি। সেখানে চতুর্থ যে চার্জশিট তৈরি করা হল আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পরে সেখানে তার নাম যুক্ত করা হল। মুফতি হান্নানকে গ্রেফতার করেছে বিএনপি সরকার। তাকে ১৪৫দিন রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে তাকে দিয়ে ফলস এফিডিভেড করিয়ে তারেক রহমানের নাম যুক্ত করা হয়। পরে ‍মুফতি হান্নান তার প্রফিডিভেড প্রত্যাহার করেছিলেন সেই এফিডেভিড আদালত হাজির করা হয়নি। আদালতে যাওয়ার আগেই তাকে আরেক মামলায় ফাঁসি কার্য্কর করা হয়’- বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘কেন? এতো বড় ইম্পটেন্ট একটা মামলা যেখানে ভয়াবহ একটা ঘটনা ঘটেছে, একটা নিকৃষ্টতম, কলঙ্কজনক ঘটনা, এতোগুলো মানুষের প্রাণ গেছে সেই মামলায় প্রধান আসামিকে (মুফতি হান্নান) আদালতে হাজির করার আগেই তার ফাঁসি কার্যকর করা হল? খুব পরিষ্কার। যেটা আইন বিরোধী। মুফতি হান্নান যে স্টেটমেন্ট দিয়েছিলেন সেটা আদালতে দেওয়া হয়নি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘২১ আগস্টের ঘটনা পর ওই সময় স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড এসেছিল তদন্ত করার জন্য তাদের তরফ থেকে পরবর্তীকালে প্রকাশ করা। আজকের প্রধানমন্ত্রী যিনি আছেন তিনি এই মামলার সাক্ষী, তিনি সাক্ষ্যও দিতে যান নাই। আমরা এই বিষয়গুলো বারবার তুলতে চাই না, অবতারণা করতে চাই না। আমরা অবশ্যই এই ধরনের ঘটনাকে শুধু নিন্দা নয়, ঘৃণা প্রকাশ করি। আমরা কখনও কোনো সন্ত্রাসকে পছন্দ করি না, এটা কলঙ্কজনক ঘটনা, ন্যাক্কারজনক ঘটনা, এটা যে কোনো জাতির জন্য কলঙ্কময়। কিন্তু তারা বারবার এই মিথ্যা কথা বলে প্রতারণা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। এটা করে কোনো লাভ হবে না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সব রাজনৈতিক দলগুলো এখানে যারা আছেন তারা, বাইরে যারা আছেন তারা এবং কি যুগপৎ আন্দোলন যারা করছি তার বাইরেও সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো আজকে একম হয়েছে প্রায় যে, এখন আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাব না। এই প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করে দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। তাহলেই শুধুমাত্র একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সুযোগ সৃষ্টি করা যাবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি আজকে একটা আবেদন রাখতে চাই যুবকদের কাছে। কাজী জাফর চলে গেছেন, মোস্তফা জামাল হায়দার অসুস্থ। এখানে যারা বয়স্ক মানুষ আছি আমিসহ আমাদের সময় প্রায় শেষ হয়ে আসছে। আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করছি সেই লড়াইটা কিন্তু ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থে নয়, সেই লড়াইটা হচ্ছে মানুষের জন্য, তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য লড়াই।’

তিনি বলেন, ‘কাজী জাফর আহমদ, মোস্তফা জামাল হায়দার তারা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন, স্বাধীন ভূ-খণ্ড নিয়ে এসেছিলেন। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন আমাদের জহিরউদ্দিন স্বপনেরা, তাদের জেনারেলশনরা। এখন আজকের তরুণদের দায়িত্ব হচ্ছে যে, এই ফ্যাসিবাদের হাত থেকে গণতন্ত্র ফিরে নিয়ে আসার মহান দায়িত্ব তাদের পালন করতে হবে। এটা আমার বিশেষ আবেদন। প্রত্যেকটা সময়-যুগে একেক সময় আসে যখন এই কথাটা বলতে হয়, কে আছো জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যত।’

জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম মহাসচিব এএসএম শামীমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বিএনপির জহির উদ্দিন স্বপন, জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, ভাইস চেয়ারম্যান কাজী নাহিদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য নওয়াব আলী আব্বাস খান, মুজিবুর রহমান, মাওলানা রুহুল আমিন, সেলিম মাস্টার, কামাল উদ্দিন চৌধুরী, কাজী জাফর আহমেদের বড় মেয়ে কাজী জয়া প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/এনইউ

‘জঙ্গি নাটক’ টপ নিউজ বিএনপি মির্জা ফখরুল


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

৯০০তম গোলে ইতিহাস গড়লেন রোনালদো
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:০৪

সম্পর্কিত খবর