সালামের বাড়ি: ১৫ অক্টোবরের মধ্যে রিপোর্ট না দিলে আদালত অবমাননা

ঢাকা: খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা রাজধানীর গুলশানের বাড়ি নিয়ে অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের প্রতিবেদন আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল না করলে দুদক আদালত অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

বুধবার (২৩ আগস্ট) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

আজ শুনানিতে রিটকারী আইনজীবী সুমন বলেন, আদালত বার বার আদেশ দেওয়ার পরও দুদক আদালতে অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করছে না। এ সময় দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, প্রতিবেদন প্রস্তুত আছে। এখন কমিশনের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। আমরা যেনতেন প্রতিবেদন জমা দিতে পারি না। বিচার বিশ্লেষণ শেষে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। এজন্য সময়ের প্রয়োজন।

তখন আইনজীবী সুমন বলেন, একই কথা আদালতে বার বার বলছেন। হাইকোর্টের আদেশের চেয়ে কি দুদক কমিশনারদের বৈঠক বড় হয়ে গেল? দুদকের সদিচ্ছা থাকলে প্রতিবেদন দাখিলে এত সময় নেওয়ার কথা না। দুদক আদালতের আদেশ মানছে না। এ কারণে দুদকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হওয়া উচিত। এক পর্যায়ে দুপক্ষ বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। পরে আদালতের হস্তক্ষেপে উভয় পক্ষে শান্ত হন।

পরে আদালত দুদকের প্রতিবেদন আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল না করলে দুদকের আদালত অবমাননা হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়।

২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর খুলনা-৪ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে গুলশানের পরিত্যক্ত (‘খ’ তালিকাভুক্ত) বাড়িটি দখলের অভিযোগ তুলে এর তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

রিট আবেদনে বলা হয়, রাজধানীর গুলশান-২ এর ১০৪ নম্বর সড়কে সি ই এন (ডি)-২৭-এর ২৯ নম্বর বাড়িটি ১৯৮৬ সালের অতিরিক্ত গেজেটে ‘খ’ তালিকায় পরিত্যক্ত হিসেবে তালিকাভুক্ত। কিন্তু আব্দুস সালাম মুর্শেদী সেটি দখল করে বসবাস করছেন।

রিটে ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল, ২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারি ও চলতি বছরের ৪ জুলাই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যানকে দেওয়া গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তিনটি চিঠি যুক্ত করা হয়।

সে রিটের শুনানি নিয়ে গত ১ নভেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। আদেশে বাড়ি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র ১০ দিনের মধ্যে হলফনামা আকারে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, রাজউক চেয়ারম্যান এবং আব্দুস সালাম মুর্শেদীকে তা দাখিল করতে বলা হয়েছিল।

একই সঙ্গে পরিত্যক্ত সম্পতির ‘খ’ তালিকাভুক্ত বাড়িটি বেআইনিভাবে দখল করার অভিযোগে আব্দুস সালাম মুর্শেদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

পাশাপাশি ওই বাড়ি নিয়ে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দুর্নীতি দমন কমিশনকে দিতে গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিবকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

এরপর গত ১৩ নভেম্বর সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি সম্পর্কিত কাগজপত্র হাইকোর্টে দাখিল করা হয়।

পরে গত ২৭ নভেম্বর গুলশানের পরিত্যক্ত বাড়ি সংক্রান্ত বিষয়ে সব নথিপত্র দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।

এরপর গত ১ ডিসেম্বর শুনানি নিয়ে আদালত সালাম মুর্শেদীর রাজধানীর গুলশানের বাড়ির বিষয়ে ১৬ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এবং গত ১৬ জানুয়ারি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি সংক্রান্ত মূল নথি ও এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হলফনামা আকারে এক সপ্তাহের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

এরপর গত ৮ ফেব্রুয়ারি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর বাড়ির মূল লে আউট প্ল্যান (নকশা) সাত দিনের মধ্যে দাখিল করতে রাজউকের প্রতি নির্দেশ দেন আদালত।

একইসঙ্গে কোর্টের কার্যক্রম ছাড়া এ মামলার বিষয়বস্তু নিয়ে কোনো প্রকার প্রচার-প্রচারণা না চালাতে উভয়পক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

পাশাপাশি এ বিষয়ে রুল শুনানির জন্য আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত।

শুনানির ধারাবাহিকতায় গত ২০ জুলাই দুদকের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়, খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি নিয়ে অভিযোগের অনুসন্ধান শেষ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গঠিত অনুসন্ধান টিম।

অনুসন্ধান প্রতিবেদন দুদক কার্যালয়ে দাখিল করা হয়েছে। যা এখন পর্যালোচনাধীন। কমিশন অনুমোদন দিলেই এ প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হবে।

অনুসন্ধান কমিটির টিম লিডার ও দুদকের উপ-পরিচালক মো. ইয়াছির আরাফাত স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এর আগে খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দখলে থাকা গুলশানের বাড়ি নিয়ে অভিযোগ অনুসন্ধানে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করে দুর্নীতি দমন (দুদক)।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এনইউ