সাড়ে ৫ শতাংশ বাস্তবায়নে শেষ প্রকল্পের মেয়াদ
২৪ আগস্ট ২০২৩ ০৯:৫২
ঢাকা: প্রকল্পের মেয়াদ শেষ কিন্তু কাজের অগ্রগতি নেই বললেই চলে। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল মেয়াদ। দীর্ঘ এই সময়ে কাজের অগ্রগতি মাত্র ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। আর ব্যয় হয়েছে দুই কোটি ৩০ লাখ ৪৭ হাজার টাকা।
‘কুলাউড়া ও গোলাপগঞ্জ পৌরসভার পানি সরবরাহ ও এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নতিকরণ’ প্রকল্পে এমন চিত্র দেখা গেছে।
মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও অগ্রগতি হতাশাজনক হওয়ায় বাড়ছে প্রকল্পের মেয়াদ। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি নিয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা ডাকা হয়েছে। আগামী ৪ সেপ্টেম্বর সভাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, প্রকল্পের অগ্রগতি এত কম কেন? সেটির ব্যাখ্যা জানতে চাইবে পরিকল্পনা কমিশন।
আরও জানা গেছে, প্রকল্পের কার্যক্রমের আওতায় যে অংশের কাজ শুরু হয়েছে এবং যে অংশের কাজ শুরু করা যায়নি তার কারণ সম্পর্কেও সভায় আলোচনা করা হবে। প্রকল্পটির অনুমোদিত মেয়াদ ছিল তিন বছর যা গত বছরের ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় দুই কোটি ৩০ লাখ ৪৭ হাজার টাকা এবং বাস্তব অগ্রগতি ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। কাজের অগ্রগ্রতি কেন এত কম এবং সমস্যা সমাধানে কী করা যায়? সে বিষয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা হবে।
সভায় সভাপতিত্ব করবেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সারাবাংলাকে বলেন, জমির সমস্যা সার্বিক প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় বাধা। এটি মেনে নিয়েই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে। প্রকল্পের অগ্রগতি কম হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় বাস্তব সম্মত কিছু কারণও আছে। এসব সমস্যা সমাধানে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের ক্ষেত্রে সুনিদিষ্ট করে এই মুহূর্তে বলতে পারব না। বিষয়টি পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য নিয়শ্চই দেখবেন।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর কুলাউড়া ও গোলাপগঞ্জ পৌরসভার পানি সরবরাহ ও এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নতিকরণ প্রকল্পটি মোট ৪৬ কোটি ৮ লাখ প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। সংশোধিত প্রকল্পটির উপর এরই মধ্যে একবার গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর থেকে গোলাপগঞ্জ উপজেলা সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য পৌরসভা প্রস্তাবিত জমি ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগারের জন্য যথাযথ কিনা তা পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়াসহ প্রকল্পটির আওতায় গোলাপগঞ্জ পৌরসভার উন্নয়নের বিষয়টি বাস্তবতার জন্য পুন:পরীক্ষা করে যাচাই-বাছাই করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। পুনর্গঠিত ডিপিপি পাওয়ার পর পুনরায় পিইসি সভা ডাকা হয়েছে।
সূত্র জানায়, গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় নিরাপদ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ করা অত্যন্ত প্রয়োজন হওয়ায় গোলাপগঞ্জ পৌরসভা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য শূণ্য দশমিক ৩৫ একর ভূমির সংস্থান করেন। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কুলাউড়া ও গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগারের পরিবর্তে ভূগর্ভস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণসহ নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংশোধিত ডিপিপি প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাবের ক্ষেত্রে প্রকল্পের অঙ্গভিত্তিক ব্যয় বিভাজন অংশে বেশ কয়েকটি অঙ্গ যেমন ( কঠিন বর্জ্য বহনকারী ট্যাংক, ব্যাক হো লোডার, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য রিকশা ভ্যান, ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার, ট্রান্সমিশন লাইন, সলিড ওয়েস্ট ল্যান্ডফিল সিস্টেম, কমিউনিটি বিন) বাদ দেওয়ার যৌক্তিক কারণ সম্পর্কে সভায় প্রশ্ন তোলা হবে।
প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে জমি বুঝিয়ে না দিতে পারায় গোলাপগঞ্জ পৌরসভার সব কার্যক্রম বাদ দিয়ে শুধু কুলাউড়া পৌরসভা অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে এর আগে সংশোধিত ডিপিপি প্রস্তাব করা হয়েছিল। বর্তমানে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় রাজস্ব তহবিল হতে শূন্য ৩৫ একর জমি ক্রয়ের প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া গেছে। এ কার্যক্রম কোন পর্যায়ে আছে সে বিষয়েও জানতে চাওয়া হবে পিইসি সভায়।
এছাড়া মূল ডিপিপিতে ২০০ মিলিমিটার ডায়ার ৭ কিলোমিটার পাইপ লাইনের জন্য ধরা ছিল এক কোটি ৬১ হাজার টাকা যা সংশোধিত ডিপিপিতে দুই কিলোমিটারের জন্য ধরা হয়েছে এক কোটি ৫৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা। ১৫০ মিলিমিটার ডায়ার ৮ কিলোমিটার পাইপ লাইনের জন্য ধরা ছিল এক কোটি ২০ লাখ টাকা যা সংশোধিত ডিপিপিতে ৫ কিলোমিটার পাইপ লাইনের জন্য ধরা হয়েছে এক কোটি ৯১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ১০০ মিলিমিটার ডায়ার ৬ কিলোমিটার পাইপ লাইনের জন্য ধরা ছিল ৬০ লাখ টাকা যা সংশোধিত ডিপিপিতে ৯ কিলোমিটারের জন্য ধরা হয়েছে ২ কোটি ৪৯ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। এ সব অঙ্গের ব্যয় বৃদ্ধি ও প্রাক্কলনের ভিত্তি ও ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা হবে।
প্রস্তাবিত আরডিপিপিতে এক কোটি ৫০ লাখ টাকার এক হাজারটি মিটারসহ গৃহ সংযোগ অঙ্গটি বাদ দিয়ে এক কোটি ২৮ লাখ টাকার দুই হাজারটি গৃহ সংযোগ (মিটার ছাড়া)অঙ্গ অন্তর্ভূক্ত করার যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাইবে পিইসি। এক কিলোমিটার সেকেন্ডারি আরসিসি ড্রেন স্থাপন বাবদ ৩ কোটি টাকার স্থলে ৩ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার এই অঙ্গের জন্য ৯ কোটি ৮২ লাখ ৬৩ হাজার টাকা প্রস্তাব নিয়েও প্রশ্ন তোলা হবে।
উৎপাদক নলকূপ, পাম্প হাউজ, বাউন্ডারী ওয়াল, মেকানিক্যাল ওয়াকর্স, ইলেট্রিক সংযোগসহ অন্যান্য কাজ সংশোধিত ডিপিপিতে অন্তর্ভূক্ত না থাকলেও বর্তমান ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮টি ধরা হয়েছে কেন সেটিও জানতে চাওয়া হবে। সংশোধিত ডিপিপিতে নতুনভাবে দুইটি ভূগর্ভস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণ অঙ্গ অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ কোটি টাকা। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হবে পিইসি সভায়।
সারাবাংলা/জেজে/এনইউ