|| ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট ||
ঢাবি: নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত রফিক জামান, তার স্ত্রী সানজিদা হক বিপাশা ও সন্তান অনিরুদ্ধ জামানের স্মৃতি ধরে রাখতে তাদেরকে নিয়ে একটি স্মারক গ্রন্থ বের করেছেন বন্ধু ও শুভানুধ্যায়ীরা ।
রোববার (১৩ মে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) তাদের স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রিমু-বিপাশা-অনিরুদ্ধ নামের এই স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
গত ১২ মার্চ নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন রিমু, বিপাশা, ও অনিরুদ্ধ। ছোট্ট এই পরিবারটির স্মরণে আলোকচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও স্মরণঅনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচিত্র সংসদ (ডিইউএফএস) ও স্লোগান ৭১। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকার সময় রিমু ও বিপাশা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। রিমু সক্রিয় ছিলেন স্লোগান ৭১ এও।
স্মরণসভায় রফিক জামান রিমুর মা রওশন আরা, বোন রেফায়েত আরা ঋতু এবং পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও বন্ধু, সহকর্মী ও তাদের গুণমুগ্ধরা যোগ দেন।
উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় চলচিত্র সংসদের মডারেটর আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, সারাবাংলা ডট নেটের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক রফিকুল্লাহ রোমেল, ইউ এস বাংলা বিমান দুর্ঘটনায় নিহত নেপালি নাগরিক শ্বেপা থাপার পরিবারের উর্মিলা প্রধান ও চারু বড়ালের পরিবার থেকে পীযুষ বড়াল প্রমুখ।
রফিক জামান রিমুর মা রওশন আরা স্মৃতিচারণ করে বলেন, রিমু আমার তৃতীয় সন্তান। ছোটবেলা থেকেই রিমু অত্যন্ত শান্ত ছিল। একটু বড় হলেই সে নিজের কাজ নিজে করত। সে নিজের স্কুল ড্রেস নিজেই পড়ত এবং বলত আমি নিজে নিজেই পারি। সে যেটা করতে চাইত আমি করতে দিতাম। এসএসসি পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হওয়ার পর সে বিভিন্ন আন্দোলনে যুক্ত হয়ে পরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর সে নানা কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে পরে। পরে একসময় বিপাশার সাথে বিয়ে হয়। বিপাশা আমার মেয়ে মত ছিল। সে আমাকে তার নিজের মায়ের মত দেখত। ২০১০ সালে অনিরুদ্ধের জন্ম হয়। চার বছর বয়স থেকে অনিরুদ্ধ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত।
অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘একজন মানুষ যখন চলে যান, তার ঘনিষ্ঠজনরা তাকে বিভিন্ন ঘটনায় স্মরণ করেন। পেশাগত জীবনেও তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। রিমুর কথা আমরা জানি, তার নিজস্ব জমি সে ব্যবহার করেছে বিশেষভাবে সক্ষমদের উন্নয়নের স্বার্থে। এত অল্প বয়সে রিমু অনেক কাজ করে গেছেন। সেগুলো তার স্বজনদের কাছ থেকে জেনে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, রিমু ও বিপাশার সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যদের বেদনা হালকা করার জন্য এই আয়োজন। আমরা টিএসসিতে এক সাথে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। আমরা সবাই এক, কেউ আলাদা নই। আজকে রিমু ও বিপাশা নেই, তাদের সহকর্মীরা তাদের সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সেই সহযোদ্ধা হিসেবে আমিও থাকতে চাই।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে নিহতদের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত করা হয়। গান পরিবেশন করেন হৃদয় অধিকার ও কবিতা আবৃত্তি করেন এম আই চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয় চলচিত্র সংসদের সভাপতি মীর রেজওয়ান মাহমুদ এবং ইশারা ভাষায় উপস্থাপনা করেন তানজীলা।
এছাড়া এই অনুষ্ঠানে রিমু-বিপাশা-অনিরুদ্ধকে নিয়ে বিপ্লব মোস্তাফিজের গ্রন্থনা ও পরিচালনায় এবং রফিক উল্লাহ রোমেলের প্রযোজনায় নির্মিত একটি তথ্যচিত্র ও প্রদর্শিত হয়। মনোজ্ঞ আবৃত্তি পরিবেশনা করে স্রোত আবৃত্তি সংসদ।
সারাবাংলা/টিআর/এমআইএস