Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভূঞাপুরে বাড়ছে লাম্পি স্কিনের প্রাদুর্ভাব, উদাসীন কর্তৃপক্ষ

ডিস্ট্রিক্ট করসেপন্ডেন্ট
২৬ আগস্ট ২০২৩ ১২:১৬

টাঙ্গাইল:  টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে গবাদি পশুর লাম্পি স্কিন (এলএসডি) রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ভ্যাকসিন সংকট আর জনসচেতনতার অভাবে প্রতিনিয়ত লাম্পি স্কিন ভাইরাসে গরু মারা যাচ্ছে। এতে নিঃস্ব হচ্ছেন ছোট ছোট খামারিরা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুকুমার চন্দ্র দাস জানিয়েছেন, মাঠ পর্যায়ে প্রাণিসম্পদের কর্মী থাকলেও এলএসডি রোগে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা হিসাব করা হয় না। যারা হাসপাতালে গরু নিয়ে চিকিৎসা করাতে আসেন শুধু সেই তথ্য রাখা হয়।

উপজেলার মোবারক হোসেনের গরু লাম্পি স্কিন ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে এসেছিলেন। ভ্যাকসিন না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অ্যান্টিবায়োটিকসহ রোগ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ওষুধ কেনার জন্য ব্যবস্থাপত্র লিখে দেন। কিন্তু তার কাছে এতো ওষুধ কেনার টাকা না থাকায় গরুটি ফেরত নিতে হয়েছে বাড়িতে।

মোবারক হোসেন জানান, চরাঞ্চলের প্রত্যেক গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে গরুর এই রোগ। কয়েকশ গরু আক্রান্ত হয়েছে এই রোগে। অনেক গরু মারা গেছে। কেউ কোনো খুঁজ নেয়নি। হাসপাতালে আসা ছাড়া কোনো সেবা পাওয়া যায় না। ফলে বাধ্য হয়ে হাসপাতালে আসলাম। কিন্তু গরু দেখে কর্মকর্তা ওষুধপত্র লিখে দিলেন শুধু।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ৬-১০টি গরু উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে নিয়ে যান খামারিরা। তবে হাসপাতালে এই রোগের ভ্যাকসিন পর্যাপ্ত না থাকায় গরুর খামারিদের ফেরত যেতে হচ্ছে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় প্রায় ৪৩ হাজার গবাদি পশু রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৫ হাজার গরুকে লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) রোগের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। গত দুই মাসে ৩০২টি গরুকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে পাঁচটি গরু মারা গেছে।

তবে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ের হিসেবে এ পর্যন্ত লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়ে দুইশতাধিক গরু মারা গেছে। এছাড়া আক্রান্ত হয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি গবাদি পশু।

জানা গেছে, বর্ষার শুরুতে লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামাঞ্চলে। মশা-মাছি এবং খাবারের মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে এ রোগ ছড়ায়। ফলে আক্রান্ত গরুকে অন্য গরু থেকে আলাদা করে মশারির ভেতরে রাখতে হয়। আক্রান্ত গরুগুলোর মাথাসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে টিউমারের মতো দেখা দেয়।

ভূঞাপুরের খামারিদের অভিযোগ, হাসপাতাল যাওয়া ছাড়া কোনো চিকিৎসা বা পরামর্শ পাওয়া যায় না। প্রাণিসম্পদের কেউ এলাকাতে আসেন না।

তারা বলেন, আমরা জানিও না এই রোগ সম্পর্কে। কী করলে কিভাবে গরুগুলোকে রোগ থেকে বাঁচানো যেতে পারে তা আমাদের ধারণা নেই।

চন্ডিপুর গ্রামের খামারি লতিফ মিয়া বলেন, আমার গ্রামেই ২৫টি গরু মারা গেছে। এছাড়া অসংখ্য আক্রান্ত রয়েছে। কেউ খুঁজ নেয় না। চরের মানুষ নদী পার হয়ে আবার গাড়িতে করে ভূঞাপুর যেতে চায় না। অনেকের ধারণা এই রোগ হলে গরু বাঁচে না, তাই খামারিরাও গরু নিয়ে হাসপাতালে যেতে চায় না।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুকুমার চন্দ্র দাস জানান, লাম্পি স্কিন ভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করেছে। উপজেলায় প্রায় ১০ হাজার গবাদি পশুকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হলে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে রোগটি। কিন্তু ভ্যাকসিন সংকটের কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া উপজেলায় তিনটি জায়গাতে ক্যাম্পিং করা হয়েছে। সব জায়গা করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ ভ্যাকসিন সংকট রয়েছে। ওষুধ ছাড়া খামারিরা শুধু পরামর্শ শুনতে ক্যাম্পে আসতে চায় না।

সারাবাংলা/আইই


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর