গতি কমেছে রেমিট্যান্সের, দৈনিক আসছে ৫৮০ কোটি টাকা
২৭ আগস্ট ২০২৩ ১৯:৫৫
ঢাকা: প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়াতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও আশানুরূপ সাড়া মিলছে না, বরং ধারাবাহিকভাবে কমছে প্রবাসী আয়। চলতি আগস্টের প্রথম ২৫ দিনে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ১৩২ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। দেশিয় মুদ্রায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় (প্রতি ডলার ১০৯ টাকা ৭৫ পয়সা ধরে) ১৪ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। গড়ে প্রতিদিন রেমিট্যান্স আসছে মাত্র ৫ কোটি ২৯ লাখ ডলার বা ৫৮০ কোটি টাকা।
এই ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে তা বেড়ে দাঁড়াতে পারে মাত্র ১৬৪ কোটি ডলার। যা সদ্য বিদায়ী জুলাই মাস থেকে ৩৩ কোটি ডলার এবং গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৮ কোটি ডলার কম।
রোববার (২৭ আগষ্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। উল্লেখ্য, গত জুলাইয়ে রেমিট্যান্স ১৯৭ কোটি ৩০ লাখ ডলার এবং গত বছরের আগস্টে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০৩ কোটি ডলার।
জানা গেছে, চলতি আগস্ট মাসের ২৫ দিনে ১৩২ কোটি ৩০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে। এরমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৪ কোটি ৯২ লাখ ৮০ হাজার ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ২ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১১৪ কোটি ৪০ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৪৭ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। এর আগে আগস্টের প্রথম ১৮ দিনে রেমিট্যান্স আসে ১০৪ কোটি ৫ লাখ ডলার। গড়ে এসেছে ৫ দশমিক ৮০ কোটি ডলার। গত সপ্তাহে তা আরও কমে ৫ দশমিক ২৯ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।
রেমিট্যান্স বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ: দেশে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেবার বিনিময়ে দেশে রেমিট্যান্স আয় আনতে ফরম সি পূরণ করার শর্ত শিথিল করেছে। পাশাপাশি সেবা খাতের উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারকদের ঘোষণা ছাড়াই ২০ হাজার মার্কিন ডলার বা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও রেমিট্যান্স বাড়াতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে বৈধ উপায়ে ওয়েজ আর্নার্স রেমিট্যান্সের বিপরীতে আড়াই শতাংশ নগদ প্রণোদনা, রেমিট্যান্স প্রেরণকারীদের সিআইপি সম্মাননা দেওয়া। রেমিট্যান্স বিতরণ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ ও সহজ করার পাশাপাশি অনিবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বিনিয়োগ ও গৃহায়ন অর্থায়ন সুবিধা দেওয়া, ফিনটেক পদ্ধতির আওতায় আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার অপারেটরকে বাংলাদেশের ব্যাংকের সঙ্গে ড্রয়িং ব্যবস্থা স্থাপনে উদ্বুদ্ধ করা এবং রেমিট্যান্স পাঠাতে ব্যাংক বা এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোর চার্জ ফি মওকুফ করা হয়েছে।
বিভিন্ন অর্থবছরভিত্তিক রেমিট্যান্স: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরের রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ১৬১ কোটি ডলার। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসীরা ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠান। এছাড়াও ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের এক হাজার ৬৩১ কোটি ডলার ,২০১৭-১৮ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
পঞ্জিকাবর্ষ হিসাবে রেমিট্যান্স: ২০২২ সালে প্রবাসীরা দুই হাজার ১২৭ কোটি ডলার বা ২১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে ২০২১ সালে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ দুই হাজার ২০৭ কোটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। অন্যদিকে ২০২০ সালে দুই হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। ২০১৯ সালে এক হাজার ৮৩৩ কোটি মার্কিন ডলার,২০১৮ সালে এক হাজার ৫৫৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার, ২০১৭ সালে এক হাজার ৩৫৩ কোটি ডলার, ২০১৬ সালে এক হাজার ৩৬১ কোটি ডলার এবং ২০১৫ সালে এক হাজার ৫৩১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স আসে দেশে।
সারাবাংলা/জিএস/এনইউ