Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফের সংলাপ-সমঝোতার প্রস্তাব আনছেন ড. কামাল

আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৭ আগস্ট ২০২৩ ২১:১৪

ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত। সরকার নিজেদের অধীনে নির্বাচনের বিষয়ে অনড়। অন্যদিকে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো নির্বাচনের আগে সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ কোনো সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিকল্প কিছু ভাবছে না। জ্যেষ্ঠ রাজনীতিবিদ ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষপাতী না। এ পরিস্থিতিতে চলমান এই রাজনৈতিক টানাপোড়েন নিরসনে সমঝোতার ডাক দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ড. কামাল হোসেন।

বিজ্ঞাপন

গণফোরামের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আগামী মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জাতীয় প্রেসক্লাব অডিটোরিয়ামে আলোচনা সভা আয়োজন করেছে দলটি। ওই দিনই ড. কামাল রাজনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য একটি সংলাপ ডাকতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবেন এবং একটি রাজনৈতিক সমঝোতা প্রস্তাব পেশ করবেন। দলের এই অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক কোনো দলের নেতাদের আমন্ত্রণ করছেন না গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল। দেশের বিশিষ্ট কয়েকজন নাগরিককে তিনি আমন্ত্রণ দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও বিরোধী দলগুলো নিয়ে গঠন করেছিলেন রাজনৈতিক জোট। সরকার ও বিরোধী দলগুলোর অনমনীয় অবস্থানের মুখে সেই রাজনৈতিক জোটের হয়ে সরকারের সঙ্গে সংলাপে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সে সংলাপ সফল হয়নি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর রাজনীতি থেকেও কিছুটা দূরে সরে গিয়েছিলেন ড. কামাল হোসেন। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ফের সংলাপ ও সমঝোতার প্রস্তাব নিয়ে হাজির হতে যাচ্ছেন তিনি।

গণফোরাম নেতা আ্যাডভোকেট আলতাফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে গণফোরাম নির্বাচনে অংশ নেবে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে ড. কামাল বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য একটি প্রস্তাব পেশ করবেন। সেটি জাতীয় সরকার হতে পারে, অন্য নামে অন্য কোনো ধরনের সরকারও হতে পারে। সেই সরকারের ধরন কেমন হবে, সরকারপ্রধান কীভাবে নির্ধারণ করা হবে- এসব ঠিক করতে সব দলকে নিয়ে সংলাপ আয়োজনের জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবেন।

দলটির সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়ে, চার-পাঁচ মাস আগে থেকেই সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যেকার রাজনৈতিক মতপার্থক্য নিরসন করে সমঝোতার পথ তৈরিতে একটি রূপরেখা তৈরি করছেন ড. কামাল। বিষয়টি নিয়ে দেশের কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন তিনি। সম্প্রতি দলের প্রেসিডিয়াম সভায় রাজনৈতিক সমঝোতার প্রস্তাবটি পেশ করার জন্য প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন নির্ধারণ করা হয়।

এর আগে দলের সাধারণ সম্পাদক ড. মিজানুর রহমানও সারাবাংলাকে জানিয়েছিলেন, গণফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটিতে সমঝোতা প্রস্তাব পেশ করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ২৯ আগস্ট তথা গণফোরামের প্রতিষ্ঠাবর্ষিকীর দিন এটি পেশ করার পক্ষেই ছিলেন দলের নেতারা।

দেশে নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে রাজণৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রথম সংলাপ হয় ১৯৯৪ সালে। কমনওয়েলথের বিশেষ দূত স্যার নিনিয়ান স্টেফানের সেই উদ্যোগ সফল হয়নি। ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ-বিএনপি মহাসচিব পর্যায়ের সংলাপও ব্যর্থ হয়। ব্যর্থ হয় ২০১৩ সালে জাতিসংঘের প্রতিনিধি অস্কার ফার্নান্দেজ তারাঙ্কোর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সংলাপ। সর্বশেষ ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির নেতৃত্বে গঠিত ঐক্যফ্রন্টের সংলাপও কোনো কাজে আসেনি।

এবারের সংলাপও সফল হবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান সব রাজনৈতিক দলসহ রাজনীতি বিশ্লেষকরা। তা সত্ত্বেও সংঘাত এড়াতে সংলাপ ও আলোচনাই সংকট নিরসন করতে পারে ধারণা থেকেই ড. কামাল এবারও সংলাপ আহ্বানের পথেই হাঁটছেন বলে জানিয়েছেন দলটির নেতারা।

এদিকে জাতীয় রাজনীতিতে সমাঝোতার ডাক দিতে যাওয়া ড. কামাল হোসেনের নিজের দলই বিভক্ত দীর্ঘ দিন ধরে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপরই এই বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ড. রেজা কিবরিয়া ওই নির্বাচনের কিছুদিন আগে গণফোরামে যোগ দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। পরে তাকে দলের সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেছিলেন ড. কামাল। তা মেনে নিতে পারেনি দলের একাংশ।

ওই ঘটনার জের ধরে গণফোরামের দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি বহিষ্কার দলে বেশ কিছু দিন ধরে। পরে পরে মোস্তফা মোহসীন মন্টুর নেতৃত্বে গণফোরামের নেতা-কর্মীদের একাংশ আলাদা হয়ে যায়। এই অংশ নিজেরা কাউন্সিল করে মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে সভাপতি, আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদকে সহসভাপতি ও অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে। ওই কাউন্সিলে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছিলেন ড. কামাল হোসেন।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিচিতমুখ ড. কামাল হোসেন সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়েও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলীয় সভাপতির সঙ্গে নির্বাাচন নিয়ে মতবিরোধের জের ধরে তিনি দূরে যেতে থাকেন। পরে দল ছেড়ে দেন তিনি। ১৯৯৩ সলের ২৯ আগস্ট গড়ে তোলেন গণফোরম।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

গণফোরাম জাতীয় সরকার জাতীয় সংলাপ ড. কামাল হোসেন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংলাপ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর