Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হঠাৎ ঝিমিয়ে পড়া বিএনপি গুরুত্ব হারাচ্ছে কূটনীতিতেও

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৮ আগস্ট ২০২৩ ১০:০৩

ঢাকা: সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২৯ জুলাই পুলিশের অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ে বিএনপি। এদিন দলের দুই শীর্ষ নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমান উল্লাহ আমান হেনস্তার শিকার হন।

ওই ঘটনা সবিস্তারে বর্ণনা করার জন্য ২ আগস্ট ঢাকার হোটেল লেকশোরে কূটনীতিকদের দাওয়াত দেয় বিএনপি। অনুষ্ঠানের গুরুত্ব বিবেচনা করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ স্থায়ী কমিটির ছয় জন সদস্য সেখানে উপস্থিত হন। প্রবেশাধিকার সংরক্ষণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদেরও ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠান শেষে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয় ২৫টি দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় নিযুক্ত মাত্র নয়টি দেশের প্রতিনিধি ওই ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে সবাই আবার কূটনীতিক নন।

বিদেশি রাষ্ট্র এবং কূটনীতিকদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের জন্য ২১ সদস্যবিশিষ্ট একটি ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটি’ রয়েছে বিএনপির। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন এ কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন— চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপির বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, কেন্দ্রীয় নেতা শামা ওবায়েদ, আসাদুজ্জামান, জেবা খান, নওশাদ জমির, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, ফাহিমা মুন্নি, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, তাবিথ আউয়াল, মীর হেলাল উদ্দিন ও ইশরাক হোসেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গুরুত্বপূর্ণ ওই অনুষ্ঠানে কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক বিদেশি কূটনীতিক হাজির করতে না পারায় বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটিকে দাঁড় করানো হয় আসামির কাঠগড়ায়। পরে জানা যায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, শামা ওবায়েদ এবং আসাদুজ্জামান ছাড়া কমিটির বাকি সবাই নিষ্ক্রিয়। কমিটি গঠনের পর গত সাড়ে চার বছরে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে মাত্র একটি। অবহিতকরণ সভা হয়েছে কয়েকটি। আর এসব কারণেই কাজের আগ্রহ হারিয়েছেন কমিটির অন্য সদস্যরা।

বিজ্ঞাপন

দলীয় সূত্র মতে, আমেরিকা বাদে ঢাকায় বিদেশি দূতাবাসগুলোর কূটনৈতিকদের সঙ্গে সম্পর্কে ঘাটতি রয়েছে বিএনপির। এ কারণেই কূটনীতিকদের ডেকেও হাজির করা সম্ভব হচ্ছে না বিএনপির অনুষ্ঠানগুলোতে। গত দুই আগস্ট নয়টি দেশের কূটনীতিক এবং তাদের প্রতিনিধি বিএনপির ব্রিফিংয়ে উপিস্থিত থাকলেও ১৪ আগস্ট একই ভেন্যুতে আয়োজিত বিএনপির একটি সেমিনারে আমন্ত্রিত কূটনীতিকদের মধ্যে মাত্র চারটি দেশের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।

সরকারবিরোধী আন্দোলনের ‘চরম মুহূর্তে’ চলতি আগস্টে দলের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে বিদেশি কূটনীতিকরা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হাজির না হওয়ায় বড়ধরনের ধাক্কা খেয়েছে বিএনপি। ১১ দিনের ব্যবধানে কূটনীতিকদের জন্য আয়োজিত ব্রিফিং ও সেমিনারে কূটনীতিকদের হতাশাজনক উপস্থিতি চিন্তায় ফেলে দিয়েছে দলটিকে।

অতীতে বিএনপির কূটনীতি দেখভাল করতেন এমন নেতারা বলছেন, মজবুত বিদেশনীতির জন্য কূটনীতির ওপর সবসময় দৃষ্টি রাখতে হয়। আর এ কাজটি করার জন্য রিয়াজ রহমান, শমসের মবিন চৌধুরী, প্রয়াত সাবিহ উদ্দীন আহমেদের মতো পেশাদার কূটনীতিক প্রয়োজন। কিন্তু এমন কেউ এখন আর বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটিতে সক্রিয় নেই। রিয়াজ রহমান এ কমিটিতে থাকলেও কোনো এক অজানা কারণে নিষ্ক্রিয়। ফলে কূটনীতিতে বারবার হোঁচট খাচ্ছে বিএনপি।

জানা গেছে, সম্প্রতি ঢাকা সফরে আসা মার্কিন দুই কংগ্রেসম্যানের সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়েছিল বিএনপি। এ ব্যাপারে বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়। কিন্তু তাতে সাড়া মেলেনি। পরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এক টেবিলে বৈঠকের আমন্ত্রণ পেয়ে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি তাতে অংশ নেন।

এর কয়েক দিন আগে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) শীর্ষ কর্মকর্তার ঢাকা সফরের সময় বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটি বৈঠক করার আগ্রহ প্রকাশ করে। সেখানেও সাড়া মেলেনি।

শুধু যোগাযোগ আর সমন্বয়হীনতা নয়, অতিকথন এবং সত্য-মিথ্যার সংমিশ্রণজনিত কারণেও বিএনপির সঙ্গে কূটনীতিকদের দূরত্ব বেড়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের দেওয়া ব্রিফিংয়ে বেশ কয়েকবার আপত্তি তুলেছে কয়েকটি দেশ। বিএনপির বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ হচ্ছে- ভেতরে যা আলোচনা হয়, বাইরে এসে সেভাবে বক্তব্য দেন না বিএনপি নেতারা। তারা তাদের সুবিধা মতো বক্তব্য পরিবর্তন করে, যা কূটনীতিকদের জন্য বিব্রতকর।

গত ৪ জুন জাপান রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকের পর আমীর খসরু মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপির সময় জাপান থেকে প্রচুর বিনিয়োগ এসেছিল। প্রচুর অবকাঠামোগত বিনিয়োগ বাংলাদেশে হয়েছে। তারা দেখতে চায় সরকার বদল হলেও যেন এটা অব্যাহত থাকে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ‘সরকার বদল হলেও সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে চায় জাপান’— আমীর খসরুর এ বক্তব্যে জাপান বেশ নাখোশ হয়। বৈঠকে সরকার বদলের বিষয়ে জাপান কোনো মন্তব্য করেনি বলে বিভিন্ন মাধ্যমে বিএনপিকে জানিয়েছে তারা।

গত বছর ১৭ মার্চ জার্মান রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টারের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটি প্রধান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যমে যে বক্তব্য দেন, তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে অসন্তোষ প্রকাশ করেন জার্মান রাষ্ট্রদূত।

বৈঠকের দু’দিন পর গত বছর ২০ এপ্রিল জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে জার্মান রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি যে উদ্ধৃতি পড়েছি তা বাস্তবের সঙ্গে মিলছে না। সেখানে বলা হয়েছে, আমি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। এমন শব্দচয়ন সত্য নয়। এতে আমি কিছুটা অসন্তুষ্ট হয়েছি। বিএনপির সঙ্গে আমার যে বৈঠক হয়েছে, সেখানে বিএনপি নেতারা কেন নির্বাচনে অংশ নেননি বা নিতে চান না, সেই বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। এর বেশি কিছু নয়।’

জানা গেছে, এর পর থেকে ঢাকার জার্মান দূতাবাস বিএনপির কোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ব্যাপারে খুব বেশি আগ্রহ দেখায় না।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘কূটনীতিতে আমাদের সাফল্য কতটুকু আর ব্যর্থতা কতটুকু তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। এ নিয়ে নতুন করে কিছু বলতে চাই না। কাজ করতে গেলে নানা কথা শুনতে হয়। সব কথার গুরুত্ব দিতে হয় না।’

‘বিদেশিদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক চমৎকার। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে আমাদের বক্তব্যের সঙ্গে তাদের বক্তব্যের হুবহু মিল আছে। সুতরাং এখানে দ্বিমত পোষণ করার সুযোগ নেই। তারা দ্বিমত পোষণ করছে না’— বলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী কূটনীতি ঝিমিয়ে পড়া বিএনপি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর