Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সন্তানের পিতৃপরিচয় চায় কিশোরী এশা, ডিএনএ পরিবর্তনের শঙ্কা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৮ আগস্ট ২০২৩ ১৮:৪৪

ঢাকা: টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য ছোট মনিরের বড় ভাই গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তুলেছেন মির্জা তাসনিম আফরোজ এশা (১৭) নামের এক কিশোরী। পাশাপাশি তিনি সন্তানের পিতৃপরিচয় চেয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘ধর্ষণ মামলা করার পর থেকেই নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এখন সন্তানের পরিচয় নিশ্চিতে আমি ডিএনএ পরীক্ষা করতে দিয়েছি। কিন্তু বড় মনি প্রভাব খাটিয়ে এই ডিএনএ রিপোর্ট পরিবর্তন করে ফেলতে পারেন বলে আশঙ্কা করছি।’

ওই কিশোরী বলেন, ‘তারা (বড় মনি, ছোট মনি) আমাকে বিভিন্ন প্রলোভন ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। আমাকে ফ্লাট ও টাকা দিতে চাচ্ছেন। এখন বড় মনি আমাকে বিয়ে করতে চাইলেও আমি রাজি না। আমি শুধু আমার সন্তানের অধিকার চাই এবং তারা যাতে প্রভাব খাটিয়ে ডিএনএ রিপোর্ট পরিবর্তন করতে না পারে সেটি চাই।’

সোমবার (২৮ আগস্ট) ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলন করে এশা নামের ওই কিশোরী অভিযোগের পাশাপাশি আশঙ্কার কথা বলেন। এ সময় তার পাশে এক ফুপু এবং তার ছোট শিশু উপস্থিত ছিল।

এশা বলেন, ‘বড় মনি আমার সম্পত্তির সমস্যা সমাধান করে দেবে বলে তার বাসায় ডেকে নিয়া সুকৌশলে ধর্ষণ করে। এবং আমার বিভিন্ন রকমের ছবি তোলে। ধর্ষণের পর বিষয়টি কারও কাছে প্রকাশ করতে নিষেধ করে এবং প্রকাশ করলে আমাকে জানে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।’

তিনি বলেন, ‘এর পর থেকে বড় মনি আমাকে একই কায়দায় ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করতে থাকে। এক পর্যায়ে আমি গর্ভবতী হয়ে পগি। এ ঘটনা বিবাদীকে বললে আমাকে গর্ভের বাচ্চা নষ্ট করার জন্য চাপ ও হুমকি দিতে থাকে। পরে বড় মনি গর্ভের বাচ্চাকে অস্বীকার করে জোরপূর্বক তার শশুরের বাসায় আমাকে উঠিয়ে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে।’

এশা বলেন, ‘আমি মামলা করার জন্য টাঙ্গাইল সদর থানায় গেলে থানা পুলিশ প্রথমে মামলা নিতে রাজি হয়নি। আমি দুপুর ৩টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত বসে থাকার পরেও মামলা নেয়নি। পরবর্তী সময়ে বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর পুলিশ মামলা নিতে বাধ্য হয়।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘মামলা রেকর্ড হওয়ার পরেও আসামি প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করেছে। পুলিশ আসামিকে গ্রেফতার করেনি। এমনকি তিনি থানা পুলিশের সঙ্গেও প্রকাশ্যে ঘুরেছেন। পুলিশ আমাকে সহযোগিতার বদলে বিভিন্ন সময় হয়রানি করেছে। আসামি আদালতে হাজিরা দিতে গেলে আদালত তাকে জেল-হাজতে পাঠায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বড় মনি জেল-হাজতে যাওয়ার পর থেকে অসুস্থতা দেখিয়ে টাঙ্গাইলের একটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। দীর্ঘদিন ডিএনএ স্যাম্পল দিতে গড়িমসি করার পর গত ২১ আগস্ট হাইকোর্টের আদেশে আসামি স্যাম্পল দিতে বাধ্য হয়।’

এশা বলেন, ‘আসামি ও আমার প্রায় দুই মাস বয়সী বাচ্চার ডিএনএ পরীক্ষার সময় সিআইডি’র কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা দ্বারা অসৌজন্যমূলক আচরণের শিকার হই। আমি ভিকটিম হলেও তাদের আচরণে মনে হয়েছে আমি একজন আসামি।’

ওই কিশোরী বলেন, ‘টাঙ্গাইলের নারী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী নুসরাত এদীব লুনা’র সঙ্গে ছোট মনির ও বড় মনি’র ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। লুনার স্বামী তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মিনহাজুল ইসলাম। তার আপন বড় ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের ক্যাডার থাকার কারণে মিনহাজুল ও কাজী নুসরাত এদীব লুনার পদোন্নতি বন্ধ হয়েছিল। বড় মনির ও ছোট মনিরের এক পাওয়াফুল মন্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকায় তাদের সুপারিশে দু’জনের পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এতে পুলিশ সুপার কাজী নুসরাত এদীব লুনা ও মুহাম্মদ মিনহাজুল ইসলামের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়। পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম বর্তমানে ঢাকা সিআইডিতে কর্মরত আছে। তাই আমি আশঙ্কা করছি, এই মামলার ডিএনএ’র ফলাফল পরিবর্তন করতে আসামিদের কোনো পেরেশানি হবে না। পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম ডিএনএ পরিবর্তন করতে আসামিদের সহযোগিতা করতে পারেন বলে আমার আশঙ্কা।’

এশা বলেন, ‘আমি যাতে ডিএনএ স্যাম্পল দিতে না যাই, সেজন্য এক কোটি টাকা ও একটি ফ্ল্যাট দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয় বড় মনিরের পক্ষ থেকে। এ ছাড়া তাদের পক্ষের কিছু আওয়ামী লীগ নেতা আমাকে কয়েক কোটি টাকা দিয়ে বিদেশে স্থানান্তরসহ সারাজীবনের দায়িত্ব নিতে চেয়েছেন। আমি টাকা চাই না, আমি আমার বাচ্চার অধিকার চাই।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘মামলা উঠিয়ে নেওয়ার জন্য আমাকে এক ছাত্রলীগ নেতা হুমকি দিয়েছেন। মামলার দ্বিতীয় আসামি বড় মনির স্ত্রী আমাকে ফোন করে নানারকম হুমকি দেয়। আমাকে চারপাশে থেকে লোকজন নজরবন্ধী করে রাখে। আমি আমার শিশুপুত্রকে নিয়ে কোথাও যেতে পারি না। আমি স্বাভাবিক জীবন থেকে বঞ্চিত। বড় মনির সঙ্গে রাজনীতি করে এমন কিছু লোকজন রাত ১২ টার পর আমাকে মাঝে মধ্যে ফোন দিতে থাকে। আমার আত্মীয়স্বজন দ্বারা আমাকে এ মামলা তুলে নেওয়ার পর চাপ দেয়।’

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে এশা বলেন, ‘ধর্ষণ মামলা হওয়ার পর থেকে পুলিশের কোনো সহযোগিতা পাইনি। উল্টো অনেক সময় পুলিশের দ্বারা হয়রানির শিকার হয়েছি। আমি ডিএনএ স্যাম্পল দিয়ে আসার পর থেকে লক্ষ্য করি কিছু লোক আমাকে ফলো করে এবং আমার বাসার নিচে দাঁড়িয়ে থাকে। এ বিষয়ে আমি ৯৯৯ জাতীয় জরুরি সেবায় অভিযোগ দিই। সেখান থেকে পুলিশি সহায়তা দেওয়ার লক্ষ্যে টাঙ্গাইল সদর থানায় যোগাযোগ করানো হয়। সেখানেও আমি থানা পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার সম্মুখীন হই।’

তিনি বলেন, ‘পরেরদিন নিজের জীবনকে হুমকির মুখে নিয়ে থানায় যাই এবং তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে সবকিছু জানাই। পিবিআইকেও জানাই। কিন্তু আমাকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করে থানা কোনো অভিযোগ নেয়নি। আমাকে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তখন আমি আমার মামলার আইও-কে বিষয়টি জানাই। কিন্তু তাদের কোনো পদক্ষেপ বা ভূমিকা দেখিনি।’

এখন আপনি কী চান? বড় মনি আপনাকে বিয়ে করতে চাইলে আপনি রাজি কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘না, আমি বিয়ে করতে রাজি না। আমি আমার সন্তানের অধিকার চাই, স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে চাই। আসামির শাস্তি চাই। টাকা দিয়ে যাতে ডিএনএ রিপোর্ট পরিবর্তন এবং মামলা ধাপাচাপা দিতে না পারে, সেটি চাই। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।’

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

এশা টপ নিউজ পিতৃপরিচয় বড় মনির


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর