২২ হাজার আবেদন পেয়ে নিয়োগই ঝুলিয়ে দিলো চট্টগ্রাম বন্দর
২৮ আগস্ট ২০২৩ ২২:৩৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো : পদের নাম ‘জুনিয়র অ্যাকাউন্টস অ্যাসিস্ট্যান্ট’। তিনবছর আগে এই পদে ৫৩ জন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। শুধু বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবেদন গ্রহণ করেই খালাস, নিয়োগ পরীক্ষার খবর নেই।
কেন ঝুলে আছে এ প্রক্রিয়া, অনুসন্ধানে মিলেছে অভিনব তথ্য। ৫৩ জনের বিপরীতে আবেদন করেছেন প্রায় ২২ হাজার নিয়োগ প্রত্যাশী। প্রত্যেক প্রার্থীকে ১০০ টাকা করে ব্যাংকে ফি-ও জমা দিতে হয়েছে। এত চাকরিপ্রার্থী দেখে নিয়োগ পরীক্ষাটাই ঝুলিয়ে দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। অজুহাত দিচ্ছে, একসঙ্গে এত চাকরিপ্রার্থীর পরীক্ষা নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত কেন্দ্র মিলছে না।
২০২০ সালের ৪ নভেম্বর ‘জুনিয়র অ্যাকাউন্টস অ্যাসিস্ট্যান্ট’ পদে ৫৩ জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। অনলাইনে আবেদন শুরু হয় ১২ নভেম্বর। গ্রহণের শেষসময় ছিল ১২ ডিসেম্বর। ব্যাংকে ফি জমাদানের শেষ তারিখ ছিল ১৪ ডিসেম্বর।
একইদিন সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) পদে দুজন, উপ সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) পদে চারজন, পরিবহন কর্মকর্তা পদে পাঁচজন, অ্যাকাউন্টস অফিসার পদে একজন, বন্দর স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে দুজন ও সহকারী শিক্ষক পদে দুজনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। এসব পদে পরীক্ষা হয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়াও শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু প্রায় তিন বছরেও জুনিয়র অ্যাকাউন্টস অ্যাসিটেন্ট পদের নিয়োগ পরীক্ষা না হওয়ায় ক্ষোভ ঝেড়েছেন অনেক আবেদনকারী।
জানা গেছে, বন্দরের নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে ১০টি। এর মধ্যে দুটি উচ্চ বিদ্যালয়, দুটি কলেজ, একটি মাদরাসা এবং পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব প্রতিষ্ঠানে একইসঙ্গে তিন হাজার পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা নেয়া সম্ভব। কিন্তু ২২ হাজার পরীক্ষার্থীর একইদিনে পরীক্ষা নিতে প্রয়োজন অন্তঃত শ’খানেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
বন্দরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যে কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ছাড়পত্রের মেয়াদ থাকে এক বছর। যেহেতু এই পদের আবেদনকারীদের জন্য দেওয়া ছাড়পত্রের মেয়াদ শেষ, আবার নতুন করে ছাড়পত্র দিতে হবে। বিষয়টি ১৫ দিন আগে বন্দরের এক সভায় নতুন চেয়ারম্যান রিয়াল অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েলকে অবহিত করা হয়। তবে এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
শুভ বড়ুয়া নামে ওই পদে আবেদনকারী এক প্রার্থী সারাবাংলাকে বলেন, ‘জুনিয়র অ্যাকাউন্টস অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে আবেদন করেছি তিন বছর হয়ে গেল। কিন্তু বন্দর থেকে এখনও কোনো পরীক্ষার ব্যাপারে কিছু জানানো হয়নি। আবেদন যখন করেছিলাম তখন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে ছিলাম। এখন মাস্টার্স শেষ হয়ে যাবে আমার। আদৌ ওই পরীক্ষা হবে কিনা সেটা নিয়েও চিন্তিত।’
ইরফান চৌধুরী নামে আরেক আবেদনকারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘শুনেছি বন্দরে ঘুষ ছাড়া চাকরি হয় না। মনে হয় টাকা ভাগাভাগি নিয়ে তাদের বনিবনা হয়নি, তাই তারা পরীক্ষা নিচ্ছে না। আমরা ১৫ বন্ধু একসঙ্গে ওই পদে আবেদন করেছি। ব্যাংকে গিয়ে টাকা জমা দিয়েছি। মনে হচ্ছে সেই টাকাটা গচ্চা গেছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম বন্দরের সাধারণ শাখার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘২২ হাজার পরীক্ষার্থীর জন্য ২২টি বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন, যদি এক হাজার করেও ধরি। সেটা একইদিনে চট্টগ্রামে জোগাড় করা যাচ্ছে না। যদি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা তিন বা চার হাজার হতো তাহলে এতদিন অপেক্ষা করতে হতো না।’
‘২০১৭ সালের জুনিয়র আউটডোর অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে ৭২ হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। সেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে হয়েছিল। এজন্য তাদের দুই কোটি টাকা দিতে হয়েছিল। কিন্তু আবেদনকারীদের কাছ থেকে সে পরিমান অর্থ পাওয়া যায়নি। তাই পরীক্ষা চট্টগ্রামেই নিজেদের তত্ত্বাবধানে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এত টাকা তো রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে খরচ করার কোনো মানে হয় না। এ ছাড়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পরপরই করোনার হানা যেভাবে জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল, সেটিও একটি এর কারণ। ওইটার প্রভাব কিন্তু এখনও কাটেনি। ১০-১৫ দিন আগে একটি মিটিং হয়েছে। সেখানে চেয়ারম্যান মহোদয় ও সচিব স্যারও ছিলেন। এই বিষয়ে সেখানে আলাপ হয়েছে। খুব শিগগিরই এটি নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, ‘দরখাস্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। ছাড়পত্রের মেয়াদও শেষ। নতুন করে ছাড়পত্র করে পরীক্ষা নেওয়া হবে।’
সারাবাংলা/আইসি/একে