কলাবাগানে শিশু গৃহকর্মীকে হত্যার তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি দাবি
২৮ আগস্ট ২০২৩ ২২:৫৫
ঢাকা: গত ২৬ আগস্ট রাজধানীর কলাবাগানের ভূতের গলি এলাকার একটি বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৮/১০ বছরের শিশু গৃহকর্মীর লাশ। তাকে নির্মমভাবে নির্যাতনের পরে হত্যা করে পালিয়ে গেছে তার গৃহকর্ত্রী। বিষয়টি যেমন দুঃখজনক তেমনি আতঙ্কের। প্রতিনিয়ত বাড়ছে গৃহকর্মীদের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা। একটি মৃত্যুর যথাযথ তদন্ত হওয়ার আগেই ঘটছে আরেকটি ঘটনা। কোনো নির্যাতন বা হত্যার যথাযথ তদন্ত হচ্ছে না, অত্যাচারী থেকে যাচ্ছে শাস্তির বাইরে এবং আইনের ফাঁক গলে বেড়িয়ে যাচ্ছে। হতভাগ্য গৃহকর্মীদের পরিবার পাচ্ছে না কোনো বিচার।
বাংলাদেশের গৃহকর্মীদের অধিকার সুরক্ষায় বাস্তবায়িত ‘সুনীতি’ প্রকল্পের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ এবং সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের যথাযথ শাস্তি দাবি করা হচ্ছে
সোমবার (২৮ আগস্ট) এক বিবৃতিতে সুনীতি প্রকল্পের পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়। আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফ্যাম এর সহায়তায় পরিচালিত এবং দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে), কর্মজীবী নারী, হ্যালো টাস্ক, রেডঅরেঞ্জ, বিলস্, গণসাক্ষরতা অভিযান ও ইউসেপ-বাংলাদেশসহ মোট সাতটি সংস্থা বাংলাদেশে ‘সুনীতি’ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত খবরে জানা যায়, ঢাকার কলাবাগান এলকার অন্তর্ভূক্ত সেন্ট্রাল রোড (ভুতের গলি) এলাকার একটি বাসায় একজন গৃহকর্মীর লাশ আছে এ খবর পেয়ে কলাবাগান থানা থেকে সেখানে পুলিশ যায়। বাসার দরজা বন্ধ দেখে পুলিশ বাহিনী চাবিওয়ালা ডেকে তালা খোলার ব্যবস্থা করে এবং বাসার ভিতরে শিশুটির লাশ পায়। শিশুটির শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন ছিল। মৃত্যুর কারণ এখনও স্পষ্ট নয় তবে ধারণা করা হচ্ছে যে শিশুটিকে নির্যাতন করা হয় এবং তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। ভবনের নিরাপত্তা প্রহরী জানায়, শিশুটি দুই বছরের অধিক সময় ধরে এ বাসায় কাজ করছে।
বাসার মালিক একজন নারী এবং সে এক সন্তানের মা, সে বর্তমানে পলাতক রয়েছে।
সংগঠনটি জানায়, শিশু গৃহকর্মীর এ মৃত্যুর ঘটনায় আমরা বিমূঢ়, শোকাহত। কীভাবে একজন নারী, একজন মা আর একটি শিশুকে এভাবে হত্যা করতে পারে?
গত কয়েক মাসের ঘটনা পর্যালোচনায় করে দেখা যাচ্ছে, গৃহকর্মীদের এ ধরনের ঘটনা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে; নিয়োগকারী কর্তৃক গৃহকর্মী নির্যাতন/অত্যাচারের ফলে গৃহকর্র্মীদের মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। মাত্র কিছুদিন আগে ঢাকার রূপনগরে তামান্না নামে একজন গৃহকর্মীকে ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে, ধানমন্ডিতে নাসিমা নামে একজন ছয়তলা থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছে, বলা হয়েছে আত্মহত্যা, কেরানীগঞ্জে নির্যাতন করে কিশোরী মেহেরুননাহারকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এবার যুক্ত হলো ওই গৃহকর্মী।
সুনীতি প্রকল্প উদ্বেগ প্রকাশ করে জানায়, এদের নামের তালিকা বেড়েই যাচ্ছে। মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা এ নামগুলো জানতে পারছি, এর বাইরে যে কত নির্যাতন, অত্যাচার বা নিগ্রহের ঘটনা ঘটছে তার খবর আমরা জানতেও পারছি না। কিন্ত গৃহকর্তা বা নিয়োগকারীদের যথাযথভাবে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে না; বিভিন্ন ফাঁকফোঁকর দিয়ে তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে ময়নাতদন্তের সঠিক প্রতিবেদনও জনসমক্ষে প্রচার করা হচ্ছে না। এ ধরনের ঘটনায় আমরা যথারীতি উদ্বিগ্ন, আতঙ্কিত ও বিক্ষুব্ধ। এরকম পরিস্থিতিতে গৃহকর্মীদের নিরাপত্তা কোথাও নিশ্চিত করা হচ্ছে না।
সংগঠনটি জানায়, জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে মানুষের বাসায় কর্মরত এ সব গৃহকর্মীদের মানবাধিকার দূরে থাক, সাধারণ নিরাপত্তাসহ মৌলিক অধিকারও নিশ্চিত করা হচ্ছে না। আমরা এ অবস্থার অবসান চাই। আমরা সব গৃহকর্মীর অকাল ও অস্বাভাবিক মৃত্যুর সঠিক তদন্ত চাই। তাদের মৃত্যুর কারণ জনসমক্ষে প্রকাশ এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া সব গৃহকর্মী নির্যাতনকারী ও হত্যাকারী শাস্তির দাবি করছি।
সারাবাংলা/একে