গৃহকর্মী হেনার মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর
২৮ আগস্ট ২০২৩ ২৩:১৩
ঢাকা: রাজধানীর কলাবাগানে সেন্ট্রাল রোডের একটি বাসায় নির্যাতনে নিহত গৃহকর্মী হেনার (১০) মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। মরদেহ গ্রহণ করেন হেনার ফুফু লিপি খাতুন।
রোববার (২৮ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গ থেকে হেনার মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় কলাবাগান থানা পুলিশ উপস্থিত ছিল।
হেনার ফুফু লিপি খাতুন জানান, তাদের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার নন্দিগ্রামে। তিন বছর আগে হেনার বাবা নাম হক মিয়া ও পাঁচ বছর আগে মা হাসিনা বেগম মারা যান। মা বাবার একমাত্র মেয়ে ছিল হেনা। মা মারা যাওয়ার পর থেকে তার কাছেই থাকত।
তিনি জানান, তিন বছর আগে গৃহকত্রী সাথী পারভীন ডলি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় একটি ট্রেনিং করতে যান। সেখান থেকে পরিচয়ের মাধ্যমে হেনাকে দেখেন। স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে তাকে ঢাকায়ে নিয়ে আসেন। গৃহকর্ত্রী বলেছিলেন, তার নিজের সন্তানের মতো হেনাকে দেখবেন।
তিনি বলেন, গতকাল বিকেলে নিউজের মাধ্যমে জানতে পারি, নির্যাতন করে হেনাকে মেরে ফেলছে। পরে ঢাকায় আসি। থানা পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারি, হেনার শরীরে খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়েছে। আরও অনেকভাবে নির্যাতন করেছে। ওই নারীর ফাঁসি চাই। সরকারের কাছে অনুরোধ আসামি যেন কোনোভাবেই পালিয়ে না যায়। আমরা তার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।
প্রসঙ্গত, কলাবাগানের সেন্ট্রাল রোডের ৭৭ নম্বর ভবনের দ্বিতীয় তলায় ই-১ নম্বর ফ্ল্যাটে সাথী পারভীন ডলি তার শিশু সন্তান ও হেনাকে নিয়ে বসবাস করতেন। তিনি হেনাকে নির্যাতন করতেন বলে ধারণা পুলিশের। গত শুক্রবার (২৫ আগস্ট) সকালেও হেনাকে নির্যাতন করা হয়। এতে তার মৃত্যু হয়। পরে সাথী তার সমস্ত কিছু ফেলে রেখে পালিয়ে যান।
কলাবাগান থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) বাবুল হোসেন জানান, গত শুক্রবার রাতে অজ্ঞাত ফোনে গৃহকর্মী নির্যাতনের প্রাথমিক তথ্য পাওয়া যায়। রাত দেড়টার দিকে সেন্ট্রাল রোডের ওই ভবনে পুলিশ গিয়ে বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাটে খোঁজও নেয়। ভবনটিতে ৪৪টি ফ্ল্যাট থাকায় শনাক্ত করা যায়নি।
এসআই জানান, শনিবার (২৬ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে বাড়ির মালিক ও সোসাইটির লোকজন নিয়ে ভবনটির দ্বিতীয় তলায় ই-১ নম্বর ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে হেনার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
এসআই জানান, হেনার শরীরে নতুন ও পুরাতন অনেক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মুখে ফেনা, শরীর ফোলা। দুই হাতে আঘাতের চিহ্ন, দুই পায়ে হাটুতে আঘাতের চিহ্ন আছে। এছাড়া কপালে ও দুই চোখের নিচে আঘাতের চিহ্ন ছিল। খাটের পাশে একটি বালিশ পড়ে ছিল। ধারণা করা হচ্ছে ওই শিশুকে শ্বাসরোধ হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর গৃহকত্রী সাথী পারভীন ডলি সবকিছু ফেলে পালিয়ে গেছে।
এ ঘটনায় (এসআই) বাবুল হোসেন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।
গতকাল রোববার (২৭ আগস্ট) দুপুরে ওই শিশুর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিন বিভাগের প্রভাষক ডা. তৌহিদা বেগম।
মর্গ সূত্রে জানা যায়, ও শিশুর ভিসেরা, ব্রেইন, ও ডিএনএ ‘র জন্য রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই শিশুকে শ্বাসরোধে হত্যার প্রাথমিক প্রমাণ মিলেছে।
সারাবাংলা/এসএসআর/একে