সর্বজনীন পেনশন নিয়ে অপপ্রচারে কান না দিতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
২৯ আগস্ট ২০২৩ ১৮:০৪
ঢাকা: সর্বজনীন পেনশন নিয়ে অপপ্রচারকারীদের অর্বাচীন আখ্যায়িত করে তাদের অপপ্রচারে কান না দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যারা পরশ্রীকাতরতায় ভোগে, যারা সবসময় হতাশায় ভোগে, যারা নিজেরা কিছু করতে পারে না, যারা সম্পূর্ণ অর্বাচীন; এই অর্বাচীনদের এই ধরনের কথায় জনগণ যেন কান না দেয়। আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের কল্যাণে কাজ করতে এসেছে, সে ভরসাটা দেশবাসীর থাকতে হবে।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) বিকালে গণভবনে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানসবার্গে ১৫তম ব্রিকস সম্মেলনের সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। শুরুতে সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর দুই পাশে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
সর্বজনীন পেনশন নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই টাকা নিয়ে ইলেকশন ফান্ড করতে হবে, আওয়ামী লীগের তো ওইরকম দৈন্যতায় পড়েনি। আওয়ামী লীগ হচ্ছে নিজের খেয়ে নৌকা। নিজের খেয়ে নৌকা, জনগণ নিজের খেয়েই কিন্তু নৌকায় ভোট দেয় এবং আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করে। এটিই হলো বাস্তবতা।’
‘সরকারি অফিসাররা পেনশন পায় কিন্তু সাধারণ জনগণ কোনো পেনশন ব্যবস্থায় নেই। বৃদ্ধ বয়সে তাদের নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্যই এই সর্বজনীন পেনশনের কথাটা আমরা বলেছি। আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারে এটা ঘোষণা ছিল, যা এখন কার্যকর করেছি’ বলেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘এখানে এখন যে টাকাটা তারা রাখবে এই টাকাটাই ধীরে ধীরে যখন তার ম্যাচিউরড হবে তার সময়সীমা নির্দিষ্ট। বয়সসীমাও দেওয়া আছে। এরপর থেকে তার টাকাটা সে তুলতে পারবে। যেটা তার সেই সময় চিকিৎসা বা জীবন জীবিকার কাজে লাগবে। এই টাকা তো অন্য কোনো দিকে যাওয়ার উপায় নাই। কারণ সম্পূর্ণ টাকাটা সরকারি কোষাগারে যাচ্ছে এবং পেনশনের যে স্কিম সেই স্কিমে টাকাটা থেকে যাবে। এটা যে কেউ তুলে নিতে পারবে না। ব্যবহারও করতে পারবে না। কেউ এটিকে নিয়ে কোনোরকম নয়ছয় করতে পারবে না। সেই নিশ্চয়তা দিয়েই তো এই স্কিম করা।’
দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই সমস্ত নেতিবাচক কথায় কান না দিয়ে নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য এবং যারা আজকে বলছে তারাই পেনশনে যোগ হবে সেটিও বলে দিতে পারি। আজকে আপনি টাকা জমা রাখবেন একটা নির্দিষ্ট বয়সে যেয়ে সেটা আপনি প্রতি মাসে টাকা তুলতে পারবেন। যে টাকা দিয়ে আপনি আপনার নিজের জীবন-জীবিকা চিকিৎসা অনেক কাজ কাজ করতে পারবেন। এই যে সুযোগটা সৃষ্টি করে দিলাম জনগণের জন্য এটি সব থেকে কল্যাণমুখী একটি পদক্ষেপ। আওয়ামী লীগ সরকার এই পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নেতিবাচক কথা শুনে কেউ যেন বিভ্রান্ত না হয় সেই আহ্বান থাকবে জাতির কাছে। যারা নেতিবাচক কথাগুলো বলে, এ পর্যন্ত যে কয়টা কথা বলেছে সব মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। মেট্রোরেলের কথাই বলেন, রাস্তার কথাই বলেন বা ট্রেনের কথা বলেন।’
বিএনপির দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরা আগুন দিয়ে মানুষ পোড়াতে পারে। এরা জনগণকে খুন করতে পারে। হত্যা করতে পারে গ্রেনেড মারতে পারে। দুর্নীতি করে টাকা পাচার করতে পারে এই সমস্ত কাজে তাদের পারদর্শিতা আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার এ সব করতে আসেনি। আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের কল্যাণে কাজ করতে এসেছে।’
১৫তম ব্রিকস সম্মেলনে যোগদান শেষে রোববার (২৭ আগস্ট) স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে আটটায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এর আগে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের ওআর টাম্বো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা হয় প্রধানমন্ত্রী। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতির পর ঢাকা আসেন তিনি। এ সফরে প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা ও একমাত্র মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ তার সঙ্গে ছিলেন।
এর আগে ১৫তম ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে ২২ আগস্ট রাতে জোহানেসবার্গে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। ব্রিকস সম্মেলনে অংশ নেয়ার পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বেশ কয়েকজন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের সঙ্গে সাইডলাইন বৈঠক করেন শেখ হাসিনা।
সারাবাংলা/এনআর/একে