নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে ৮৪% মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলেছে
৩০ আগস্ট ২০২৩ ১২:২৮
ঢাকা: দেশের ৮৪ শতাংশ মানুষ মনে করেন, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি তাদের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভুল পথে যাচ্ছে বলে মনে করেন ৭০ শতাংশ মানুষ।
দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক জরিপে দেশের মানুষের এই মতামত উঠে এসেছে। মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) জরিপটি এশিয়া ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
৬৪ জেলার ১০ হাজার ২৪০ জন মানুষের ওপর করা হয় এই জরিপ। ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে উত্তরদাতাদের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হয়। প্রতিটি জেলা থেকে ১৬০ জন উত্তরদাতা নেওয়া হয়েছে।
জরিপে একটি প্রশ্ন ছিল— আপনি কি মনে করেন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সঠিক পথে যাচ্ছে। এই প্রশ্নের জবাবে ৭০ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, বাংলাদেশ ভুল পথে যাচ্ছে। ২৫ শতাংশের মত হলো, বাংলাদেশ সঠিক পথে যাচ্ছে। আর ৪ শতাংশ বলেছেন, তারা এ বিষয়ে জানেন না। ১ শতাংশ কোন উত্তর দেননি।
উল্লেখ্য, যাদের আয় কম, সেই সব উত্তরদাতার অর্থনৈতিক দিক দিয়ে দেশ ভুল পথে যাওয়ার মতামত বেশি এসেছে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক দিক নিয়েও জরিপে উত্তরদাতাদের মতামত নেওয়া হয়। সাড়ে ৪৭ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, রাজনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ ভুল পথে যাচ্ছে, হারটি ২০১৯ সালে ছিল প্রায় ৩১ শতাংশ। অন্যদিকে ৩৯ শতাংশ উত্তরদাতার মতে, রাজনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ সঠিক পথে রয়েছে। ২০১৯ সালে হারটি ছিল প্রায় ৬৪ শতাংশ।
দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলো কী কী- এই প্রশ্নের উত্তরে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ সামনে এনেছেন নিত্যপণ্যের দামকে। এরপর রয়েছে অর্থনীতি অথবা ব্যবসার মন্দা, বেকারত্ব অথবা জীবিকার সমস্যা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অথবা অসহিষ্ণুতা, দুর্নীতি ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি।
৪৪ শতাংশ মানুষ সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন নিত্যপণ্যের দামকে। ২০১৯ সালে ছিল এই হার ৩৩ শতাংশ। অর্থনীতি অথবা ব্যবসার মন্দাকে বড় সমস্যা মনে করেন ১১ শতাংশ উত্তরদাতা। ২০১৯ সালে এই হার ছিল ৫ শতাংশ। বেকারত্ব অথবা জীবিকার সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন ১০ শতাংশ মানুষ। ২০১৯ সালে ছিল ১৮ শতাংশ। দুর্নীতিকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ৩ শতাংশ মানুষ, যা ২০১৯ সালে ছিল ১১ শতাংশ। অন্যান্য সমস্যাকে বড় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ১৮ শতাংশ উত্তরদাতা। ৪ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন প্রশ্নটির উত্তর তাদের জানা নেই।
জরিপ অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের প্রতি দেশের মানুষের সহানুভূতি কমেছে। রোহিঙ্গাদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন ১৩ শতাংশ মানুষ, ২০১৯ সালে এই হার ছিল ১৫ শতাংশ।
৭২ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। সেতু নির্মাণের কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েছেন ৪৭ শতাংশ। ২৮ শতাংশ মানুষ কৃতিত্ব দিয়েছেন সরকারকে।
এশিয়া ফাউন্ডেশন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি অলাভজনক উন্নয়ন সংস্থা। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোতে এটি সুশাসন, নারীর ক্ষমতা, জেন্ডার বৈষম্য দূর করা, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে। অন্যদিকে বিআইজিডি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা সংস্থা।
দুই সংস্থার জরিপ ‘দ্য স্টেট অব বাংলাদেশ’স পলিটিক্যাল, গভর্ন্যান্স, ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সোসাইটি: অ্যাকোর্ডিং টু ইটস সিটিজেনস’ (বাংলাদেশের রাজনৈতিক, শাসন, উন্নয়ন ও সামাজিক পরিস্থিতি: নাগরিকদের মত) ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালেও করা হয়।
সারাবাংলা/ইআ