নেত্রকোনা বাইপাস: ভূমি অধিগ্রহণই শেষ হয়নি ৪ বছরে
৩১ আগস্ট ২০২৩ ০৮:০৫
নেত্রকোনা: এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবির পর চার বছরেরও বেশি সময় আগে শুরু হয় নেত্রকোনা বাইপাসসড়কের কাজ। লক্ষ্য ছিল নেত্রকোনা শহরে চলাচল নির্বিঘ্ন রাখা। পাশাপাশি ভাটি এলাকার মোহনগঞ্জ, বারহাট্টা, কলমাকান্দা, ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোাগযোগ সহজ করা। এরই মধ্যে এই সড়কের নকশায় থাকা চারটি সেতু নির্মাণের কাজ শেষ। কিন্তু মূল যে সড়ক, তার এক মিটারের কাজও হয়নি। হবেই বা কী করে, এই সড়কের জন্য যে ভূমি অধিগ্রহণের কাজই শেষ হয়নি।
প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৯ সালে এই সড়ক নির্মাণের প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতা শেষ হয়নি। ভূমি অধিগ্রহণের জন্য চূড়ান্ত প্রাক্কলনই এখনো তৈরি হয়নি। ফলে জমি অধিগ্রহণের সব টাকা ছাড় করা যায়নি। অন্যদিকে জমির মালিকরাও সব টাকা বুঝে না পেয়ে জমি ছাড়তে রাজি নন। এ অবস্থায় প্রকল্প অনুমোদন, বরাদ্দ সব ঠিক থাকলেও সড়কের কাজই থমকে রয়েছে।
২০১৯ সালের জানুয়ারিতে নেত্রকোনার এই সংযোগ মহাসড়ক নির্মাণের প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন পায়। চারটি সেতু ও ২১টি বক্স কালভার্টসহ ১১ দশমিক ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ২৫৭ কোটি ২১ লাখ ৭২ হাজার টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় নেত্রকোনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ।
জেলা সড়ক বিভাগ জানিয়েছে, বাইপাস সড়কের ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ২০১৯ সালে ১৭ জুন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয় ৬৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এরই মধ্যে জমি অধিগ্রহণের জন্য ৬২ কোটি টাকা জেলা প্রশাসন বরাবর ছাড় করা হয়েছে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণের চূড়ান্ত প্রাক্কলনই তৈরি হয়নি। জমির মালিকরাও পুরো টাকা হাতে না পেয়ে জমি ছাড়বেন না বলে অনড় অবস্থান নিয়েছেন। তাতে স্থবির হয়ে রয়েছে সড়কটির কাজ।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বাইপাস সড়কটি এই মূলত ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, মোহনগঞ্জ, সুনামগঞ্জ মহাড়কের একটি সংযোগ সড়ক। এটি নেত্রকোনা সদর উপজেলার চল্লিশা এলাকা থেকে শুরু হয়ে সদর উপজেলার নুরুলিয়া, কুনিয়া, রাজুর বাজারের ওপর দিয়ে শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গিয়ে একই সড়কের সঙ্গে যুক্ত হবে।
সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রকল্পের কাজ বন্ধ। চল্লিশা এলাকায় মগড়া নদীর ওপর একটি, কারলী এলাকায় একটি, উলুয়াটিতে একটি ও দুধকুড়ি খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। তবে সেতুগুলোর দুই পাশে নেই কোনো সংযোগ সড়ক। বালিজুরী-দুধকুড়ি এলাকার হাওরে সড়ক বানানোর জন্য প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে ধানক্ষেতের মধ্যে দুই পাশে কিছু মাটি তুলে রাখা হয়েছে। সড়ক নির্মাণের এই প্রকল্পের আর কোনো অগ্রগতি নেই।
স্থানীয়রা বলছেন, বাইপাস সড়কের নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় বর্তমানে চল্লিশা এলাকা থেকে রাজুরবাজার পর্যন্ত মহাসড়কের ওই অংশ পাড়ি দিতে হয় নেত্রকোনা শহরের ওপর দিয়ে। আবার মোহনগঞ্জসহ আশপাশের উপজেলার পণ্যবাহী ট্রাক আর যাত্রীবাহী বাসের চলাচলের পথও শহরের ভেতরের ওই সড়ক। সরু সড়কে শহরবাসীর অটোরিকশার চাপ তো আছেই। সব মিলিয়ে নেত্রকোনা শহরে যানজট লেগেই থাকে। যানবাহনের চাপের কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা আর প্রাণহানিও।
জানতে চাইলে নেত্রকোনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আলনূর সালেহীন বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণ শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ করানো যাচ্ছে না। তবে এর মধ্যেও প্রকল্পের চারটি সেতু নির্মাণসহ ৪০ শতাংশ কাজ করা হয়েছে। কাজের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আশা করি, এ সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাবে।’
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসনের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) ও ভূমি অধিগ্রহণের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাদিয়া ইসলাম সীমা বলেন, ‘সংযোগ মহাসড়ক প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রাক্কলন তৈরির কাজ শেষ হবে।
সারাবাংলা/টিআর
জমি অধিগ্রহণ নেত্রকোনা বাইপাস সড়ক ভূমি অধিগ্রহণ সড়ক প্রকল্প সংযোগ সড়ক