ঢাকা: জাগো ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা করভি রাকসান্দ ‘এশিয়ার নোবেল’ খ্যাত র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পাওয়া ১৩তম বাংলাদেশি। এর আগে মোট ১২ বাংলাদেশি তাদের নিজ নিজ কাজের জন্য এ পুরস্কার পেয়েছেন।
বাংলাদেশিদের মধ্যে প্রথম ম্যাগসাইসাই পান সমাজসেবী তহরুন্নেসা আবদুল্লাহ। তিনি ম্যাগসাইসাই পান ১৯৭৮ সালে। তিনি প্রধানত নারী সমবায় সমিতি গঠন ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে কাজ করেন।
এরপর ১৯৮০ সালে ম্যাগসাইসাই পান ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ। গ্রামীণ দারিদ্র্য নিরসনে ব্র্যাকের মতো প্রতিষ্ঠানের বিস্তার এবং এর জন্য তার সাংগঠনিক দক্ষতার স্বীকৃতি মেলে এই পুরস্কারে।
এর চার বছর পর ১৯৮৪ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ পুরস্কার পান। গ্রামীণ দরিদ্র নারীদের ক্ষমতায়নে তার ক্ষুদ্রঋণ মডেলের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পুরস্কার পান তিনি।
১৯৮৫ সালে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সামাজিক নেতৃত্বের খাতে ম্যাগসাইসাই পান। বাংলাদেশের নতুন ওষুধনীতি তৈরিতে অবদান, অপ্রয়োজনীয় ওষুধের বিস্তার রোধ এবং সাধারণ মানুষের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য তাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
ক্যাথলিক ধর্মযাজক রিচার্ড উইলিয়াম টিম ১৯৮৭ সালে ম্যাগসাইসাই পান। ১৯৫২ সালে তিনি বাংলাদেশে আসেন। এরপর সেই ১৯৭০ এর জলোচ্ছ্বাসের ত্রাণ থেকে শুরু করে নানা দুর্যোগে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। ৩৫ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষের জন্য তার এই সেবার জন্যই তিনি পান ম্যাগসাইসাই।
১৯৮৮ সালে দিদার কমপ্রিহেন্সিভ ভিলেজ ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেটিভ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ ইয়াসিন ম্যাগসাইসাই পান। কার্যকর ও নিষ্ঠার সঙ্গে সমবায় পরিচালনার মাধ্যমে গ্রামের সাধারণ মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তায় অবদানের জন্য এই পুরস্কার পান তিনি।
গ্রামীণ নারীদের ক্ষমতায়ন, জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রে লিঙ্গসমতায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৯ সালে এ পুরস্কার পান অ্যাঞ্জেলা গোমেজ। তিনি বেসরকারি সংগঠন বাঁচতে শেখার প্রতিষ্ঠাতা। সামাজিক নেতৃত্বের জন্য তিনি সে বছর পুরস্কারটি পান।
২০০৪ সালে সাংবাদিকতা, সাহিত্য এবং সৃজনশীল যোগাযোগকলায় র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পান বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। তিনি তরুণদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি এবং তাদের মানবিক মূল্যবোধের উন্মেষে অবদানের জন্য এ পুরস্কার পান।
এর ঠিক পরের বছর ২০০৫ সালে ম্যাগসাইসাই পান প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি সাংবাদিকতা, সাহিত্য এবং সৃজনশীল যোগাযোগকলায় এ পুরস্কার পান। অ্যাসিড নিক্ষেপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গণমাধ্যমের শক্তিশালী ভূমিকা বিস্তারে তাকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। অ্যাসিড নিক্ষেপের শিকার ব্যক্তিদের সহায়তায় তাঁর ভূমিকার কথাও ম্যাগসাইসাই কমিটি স্বীকার করে।
প্রতিবন্ধিতার শিকার ব্যক্তিদের উন্নয়নের গতিধারায় নিয়ে আসার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১০ সালে ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পান বেসরকারি সংগঠন সিডিডির নির্বাহী পরিচালক এ এইচ এম নোমান খান।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ২০১২ সালে পুরস্কারটি পান। নিরাপদ পরিবেশের তাগিদে আইনি সহযোগিতার ক্ষেত্রে তার অদম্য সাহস ও নেতৃত্বের জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
২০২১ সালে প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী এ পুরস্কার পাওয়া দ্বাদশ বাংলাদেশি। ড. কাদরী আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) এর একজন সিনিয়র বিজ্ঞানী। লাখ লাখ মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য টিকা আবিষ্কারে তার ভূমিকা রয়েছে।
ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট র্যামন ম্যাগসাইসাইয়ের নামে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। র্যামন ম্যাগসাইসাই ১৯৫৭ সালের ১৭ মার্চ মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় মারা যান। ১৯৫৮ সাল থেকে পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়। ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার দেওয়া হতো মোট ছয় শ্রেণিতে। সেগুলো হলো সরকারি সেবা, জনসেবা, সামাজিক নেতৃত্ব, সাংবাদিকতা, সাহিত্য এবং সৃজনশীল যোগাযোগকলা, শান্তি ও আন্তর্জাতিক সমন্বয় এবং নতুন নেতৃত্ব।
২০০০ সাল থেকে নতুন নেতৃত্ব শ্রেণিতে পুরস্কার দেওয়া শুরু হয়। ফোর্ড ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তায় এ পুরস্কার প্রবর্তিত হয়। ২০০৯ সাল থেকে শুধু এই ‘নতুন নেতৃত্ব’ ছাড়া আর কোনো সুনির্দিষ্ট শ্রেণির মধ্যে আবদ্ধ নেই পুরস্কারটি।
ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় প্রতিবছর ৩১ আগস্ট এ পুরস্কার দেওয়া হয়। ৩১ আগস্ট র্যামন ম্যাগসাইসাইয়ের জন্মদিন।