Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য স্বাধীন বিচার বিভাগ অপরিহার্য’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৩১ আগস্ট ২০২৩ ১৩:৫০

ঢাকা: শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য স্বাধীন বিচার বিভাগ অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী তার বিদায়ী সংবর্ধনায় এই মন্তব্য করেন। বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি প্রধান বিচারপতির কর্মময় জীবন তুলে ধরে বক্তব্য দেন।

বিজ্ঞাপন

হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘৭১-এ জাতি চরম ত্যাগ স্বীকার করে স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছে। আমাদের দায়িত্ব হলো সর্বক্ষেত্রে দেশকে এগিয়ে নেওয়া। ব্যর্থ হলে ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। আমাদের প্রতিটি আইনে মানবিকতার স্পর্শ থাকতে হবে। আইন যদি দরিদ্রকে পিষে দেয়, আর ধনী ব্যক্তি যদি আইনকে পিষে দেয় তাহলে রাষ্ট্র এবং বিচার বিভাগ সঠিকভাবে চলছে- এটা বলা যাবে না। শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য শক্তিশালী ও স্বাধীন বিচার বিভাগ অপরিহার্য।’

তিনি বলেন, ‘বিচারকদের রাজনৈতিক হাওয়া থেকে নিজেদের মুক্ত রেখে, সংবিধান, আইন ও বিবেকের প্রতি পরিপূর্ণ অনুগত থেকে বিচার কার্য সমাধান করা। বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় জনগণের অগাধ আস্থা স্থাপন করতে হবে। না হলে জনগণের অধিকার রক্ষা হবে না এবং স্বাধীনতাও বিপন্ন হবে। সব বিচারককে অসামান্য নৈতিকতার অধিকারী হতে হবে, না হলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা শুধুমাত্র সংবিধানের ভেতরই আবদ্ধ থাকবে। ধন্য তারাই, যারা অন্তরে শুদ্ধ।’

রাজনীতিবিদ ও আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিচারালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে রাষ্ট্র সৃষ্টিতে ত্যাগের কথা অন্তত ১০ বার ভাববেন। কারণ আপনাদের সিদ্ধান্তে ভুল হলে শেষ বিচারে তাতে রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়। ক্ষতি হয় বিচার বিভাগের। বিজ্ঞ আইনজীবীদের সেই শক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে, যে শক্তি বিচারালয়কে দুর্বল করে, যে শক্তি গণতান্ত্রিক জীবনযাপন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘জনগণ যাতে স্বল্প খরচে ও স্বল্প সময়ে ন্যায় বিচার পায় তার জন্য বিচারকদের উদ্ধুদ্ধ করার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করেছি বিচারপ্রার্থী অভাগা মানুষগুলো আদালত প্রাঙ্গণে এসে একটু স্বস্তিতে বসতে পারে তার ব্যবস্থা করতে। আর্থিক সংকট থাকা সত্ত্বেও ন্যায়কুঞ্জ ও রেকর্ড ভবনের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আরও বলেন, বিচার বিভাগ সংবিধানের আধিপত্য রক্ষার পাশাপাশি জনগণের মৌলিক অধিকারের রক্ষক। সত্যিকারের অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের বিকাশ, আইনের শাসন সংরক্ষণ, সমাজের দুর্বল অংশের অধিকার এবং সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা ও শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অপরিহার্য।

এ সময় সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিরা, অ্যাটর্নি-জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মমতাজ উদ্দিন ফকির, সাধারণ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। তবে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতি বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান বর্জন করায় তারা উপস্থিত ছিলেন না।

হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী জীবন ও কর্ম:

বাংলাদেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ১৯৫৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার রমানাথপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আব্দুল গফুর মোল্লা এবং মাতা নূরজাহান বেগম। বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর বড় ভাই বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ছিলেন।

হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী সহধর্মিনী মিসেস ডালিয়া ফয়েজ একজন গৃহিণী। তার দুই কন্যার মধ্যে বড় কন্যা ফারিয়া ফয়েজ একজন চিকিৎসক এবং ছোট কন্যা ফারহা ফয়েজ আইন বিষয়ে স্নাতক (অনার্স) ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন।

হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ১৯৭২ সালে খোকসা জানিপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৭৪ সালে বাগেরহাটের সরকারি পি.সি. কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। এরপর তিনি সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন। পরে তিনি ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ১৯৭৯ সালে ধানমন্ডি ল কলেজ থেকে তিনি এলএলবি পাশ করেন।

বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী (বাংলাদেশ বার কাউন্সিল হতে সনদ প্রাপ্তির পর) ঢাকা জেলা জজ আদালতে আইনজীবী হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে যথাক্রমে ১৯৮১ সালের ২১ আগস্ট আইন পেশায় সনদ লাভের পর ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। এরপর ১৯৮৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট বিভাগ এবং ১৯৯৯ সালের ২৭ মে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবি হিসেবে অনুমতি প্রাপ্ত হন।

পরবর্তীতে ২০০১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী হাইকোর্ট ডিভিশনের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন এবং ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ একই ডিভিশনের বিচারক নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে তিনি ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি থাকাকালীন ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।

এরপর ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতির পদে আসীন হন হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি অবসরে যাবেন।

বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী প্রধান বিচারপতি হিসেবে হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপিল বিভাগে বেশ কিছু যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন। যেমন- যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ব্যাখ্যা, অন্তবর্তীকালীন জামিনের নীতিমালা, টেস্ট আইডেন্টিফিকেশন প্যারেড (সর্বশেষ সূত্র), চাকরিতে আত্মীকরণ সংক্রান্ত, চেক ডিজঅনার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ এবং ওয়াকফ সম্পত্তির মৌলিক নীতিমালা/নিয়ম কানুন প্রভৃতি।

তিনি প্রধান বিচারপতি হিসেবে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, কোরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন।

সারাবাংলা/কেআইএফ/এনএস

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর