সোহরাওয়ার্দীতে ছাত্রলীগের ছাত্রসমাবেশ আজ
১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০১:০১
ঢাকা: ‘আজ আবারও জেগেছে স্বদেশ/ ষড়যন্ত্রের জাল ছিড়ে/ শোক এবার শক্তির উৎস/ একসাথে হাতে হাত ধরে’- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এই অঙ্গীকারে আজ শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) রাজধানী ঢাকায় ছাত্রসমাবেশ ডেকেছে ছাত্রলীগ। রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাদের এই সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবারের এই সমাবেশকে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশে পরিণত করার লক্ষ্য ছাত্রলীগের। তাদের প্রত্যাশা, কয়েক লাখ শিক্ষার্থী এই সমাবেশে অংশ নেবে। সমাবেশ উপলক্ষে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বাদে ২৯৮ সদস্যের ১৮টি উপকমিটি গঠন করা হয়েছিল। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় নেতাদের নেতৃত্বে ছিল ১২৭টি সমন্বয় টিম। এরই মধ্যে সমাবেশের যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে ছাত্রলীগ।
আজ বিকেল ৩টায় শুরু হবে সমাবেশ। সমাবেশের আগের দিন বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা যায়, নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে মঞ্চ। সামনে অতিথিদের জন্য বসার জন্য রাখা হয়েছে পৃথক সারি। এরপর খোলা মাঠে বাঁশের বেড়া দিয়ে স্থান ভাগ করে দেওয়া হয়েছে সংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটের জন্য। মঞ্চে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান থাকবেন। মঞ্চের সামনে প্রায় দেড় হাজার চেয়ার থাকবে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের সাবেক নেতাসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য।
সমাবেশের আগের দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। সাদ্দাম বলেন, আমাদের প্রস্তুতি শেষ। আমাদের প্রস্তুতি এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এই ঐতিহাসিক ছাত্র সমাবেশের প্রস্তুতি গোটা বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইল ছুঁয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের পাঁচ কোটি শিক্ষার্থীকে ছুঁয়ে গেছে।
সমাবেশে অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে কি না- জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, আমরা সব ছাত্র সংগঠনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি এই অনুষ্ঠানে। যারা এ দেশের যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে সাফাই গেয়েছে, এ দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের পক্ষে যারা সাফাই গেয়েছে এবং যারা সামরিক স্বৈরশাসকের সেবাদাসের ভূমিকা পালন করেছে, তাদের বাদ দিয়ে সব সংগঠনকে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি। কারণ এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে আমরা এই বার্তা দিতে চাই, আমরা যেমন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির পিতার আদর্শে বলিয়ান থাকব, একইসঙ্গে খুনি-সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদীদের সঙ্গে আপস করার কোনো জায়গা ছাত্রসমাজে নেই।
সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, সমাবেশে লাখ লাখ শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা উন্মুক্তভাবে শপথ নিতে চাই- দেশবিরোধী যেকোনো অপশক্তির অপতৎপরতাকে রুখে দিতে এ দেশের তারুণ্য সদাপ্রস্তুত।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে সমাবেশস্থল পরিদর্শনে যান আওয়ামী লীগ নেতারাও। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, সারা দেশ থেকে তারুণ্যের যে ঢল নামতে শুরু করেছে, তাতে এটি স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ছাত্র সমাবেশে পরিণত হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। দেশের সঙ্গে গণতন্ত্রের সঙ্গে যে শত্রুতা চলছে, দেশে বৈধ নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র চলছে, এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ধ্বনিও এখানে উচ্চারিত হবে। তারুণ্যই প্রতিবাদ করবে, লড়াই করবে।
এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
স্মরণকালের সর্ববৃহৎ ছাত্র সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে নেতাকর্মীদের জন্য এরই মধ্যে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। বৃহস্পতিবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সমাবেশের শৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনা, স্বস্ত্য সেবা, নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা প্রভৃতি বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের সমাবেশ উপলক্ষে বিশেষ ট্রাফিক নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপি জানায়, ছাত্র সমাবেশ উপলক্ষে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ভিভিআইপি যাতায়াত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাঁটাবন ক্রসিং, ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিং, কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং, কাকরাইল চার্চ ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, দোয়েল চত্বর ক্রসিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টার, জগন্নাথ হল ক্রসিং, ভাস্কর্য ক্রসিং ও উপাচার্য ভবন ক্রসিংয়ে রাস্তা বন্ধ বা রোড ডাইভারশন দেওয়া হবে।
সমাবেশ উপলক্ষে আগত গাড়িগুলো মহসিন হল মাঠ (ভিআইপি), মলচত্বর, পলাশী ক্রসিং থেকে ভাস্কর্য ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশ, ফুলার রোডে রাস্তার দুই পাশ, দোয়েল চত্বর ক্রসিং থেকে শহিদুল্লাহ হল ক্রসিং পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশ, নবাব আব্দুল গণি রোড রাস্তার দুই পাশ এবং দিলকুশা ও মতিঝিল এলাকার রাস্তার দুই পাশে পার্কিং করতে বলা হয়েছে।।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর